Home / তথ্য প্রযুক্তি / ফিলায়ের পুনর্জন্ম মানুষের প্রকৌশল দক্ষতার সাক্ষ্য
ফিলায়ের পুনর্জন্ম মানুষের প্রকৌশল দক্ষতার সাক্ষ্য

ফিলায়ের পুনর্জন্ম মানুষের প্রকৌশল দক্ষতার সাক্ষ্য

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিবেদক :

৫১ কোটি কিলোমিটার দূরের এক ধূতকেতুতে সাত মাস সুপ্তাবস্থায় থাকার পর পুনরায় জেগে উঠেছে রোসেটার রোবট ফিলায়ে। রোবটটির এই ‘পুনর্জন্ম’কে ‘মানবজাতির প্রকৌশল দক্ষতার সাক্ষ্য’ বলে অভিহিত করেছেন মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী সারা সিগার।
ফিলায়ের জেগে ওঠার খবরের পরপরই রোববার যোগাযোগ করা হয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) এই অধ্যাপকের সঙ্গে।

ইমেইলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিজ্ঞানী সারা সিগার বলেন, ‘ফিলায়ের ফের জেগে ওঠার খবরটি সত্যিই রোমাঞ্চকর।’

গ্রহবিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘সামনের দিনগুলোয় এরকম আরও অনেক রোমাঞ্চ অপেক্ষা করছে।’

ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির (ইসা) রোবট ফিলায়ে ইস্যুতে সারা সিগারের দেওয়া দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারের চৌম্বক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো :

ফিলায়ের ব্যাটারি ফুরিয়েছে। এই রোবটের ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার অনুমান কী? প্রিয় অধ্যাপক, শেষ সাক্ষাতে (ইমেইলে) এটাই ছিল আমার জিজ্ঞাস্য। যা হোক, এরই মধ্যে ফিলায়ে যে ফের জেগে উঠেছে, সে খবর নিশ্চয়ই জেনে গেছেন।

সত্যিই খবরটা খুব রোমাঞ্চকর। এতদিন ধরে সুপ্ত থাকার পর সূর্যের আলোয় আবার ব্যাটারি চার্জ করছে ফিলায়ে, এটা সত্যিই বিস্ময়কর।

এরকম অবিশ্বাস্য খবর শোনার পরপরই আপনার মাথায় কোন কথাটা খেলে গেল?

ফিলায়ের পুনর্জন্ম মানবজাতির প্রকৌশল দক্ষতার সাক্ষ্য (টেস্টামেন্ট)।

অসম্ভব গভীর দর্শন আপনার। বিজ্ঞানকর্মী হিসেবে এটা আমাকে চিরদিন ভাবাবে।

দেখুন, একটা নভোযান বহুদিন ধরে সুপ্ত রইল, ঘুমিয়ে রইল। এবং এরপর সে আবার জেগে উঠল। শুধু তাই নয়, নতুন উদ্যমে অভিযান শুরু করল। এখন অপেক্ষা সহকারে আমাদের দেখতে হবে, ফিলায়ের সংগৃহীত তথ্যগুলো আমরা পৃথিবীতে ডাউনলিংক করতে পারি কি না।

সাত মাস যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পর জেগে ওঠা—এটা কি একটা রোবটের ‘অতি ভাগ্য’?

না, এটা মানুষের প্রকৌশলী ধীশক্তির প্রমাণ। আমি যদিও ফিলায়ে দলের অংশ নই। তবু এটা আমি নিশ্চিত যে, সম্ভাব্য সব পরিস্থিতির বিপরীতেই দলটির পরিকল্পনা রয়েছে।

যে কোনো সুপ্ত অবস্থার পর নতুন করে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের ব্যাপারে নিশ্চয়ই ফিলায়ের কাছে নির্দেশনা আগে থেকেই ছিল। আর হরহামেশাই এরকম সুপ্তাবস্থায় পড়ে থাকে নভোযানেরা।

ফিলায়ের পুনর্জন্ম কি ইসা—কিংবা বৃহত্তর অর্থে মানবজাতিকে নতুন ও ভিন্নতর এক স্বর্গ উন্মোচনের সুযোগ করে দিল?

ঠিক তাই। ফিলায়ের পুনর্জন্ম মানবজাতিকে আশান্বিত করেছে, আরও স্বাপ্নিক করেছে। মানুষ এখন স্বপ্ন দেখতেই পারে যে, এর চেয়েও মস্তবড় জটিল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো প্রকৌশল বুদ্ধিমত্তা আমরা অর্জন করতে পারি।

আর ফিলায়ের ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ?

আপনার এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, ফিলায়ের ভাগ্য-ভবিষ্যৎ বোঝার জন্য আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে, নজর রাখতে হবে। তবে এটা বলতে পারি, সামনের দিনগুলোয় এরকম আরও অনেক রোমাঞ্চ অপেক্ষা করছে।

ফিরে দেখা ফিলায়ে

৫১ কোটি কিলোমিটার দূরের ৬৭পি বা চুরিয়মোভ-গেরাসিমেনকো (সংক্ষেপে চুরি) ধূমকেতুর গায়ে ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর অবতরণ করে রোসেটার ল্যান্ডার রোবট ফিলায়ে।

চুরি ধূমকেতুতে রোবট অবতরণের মধ্য দিয়ে রেকর্ড গড়েছিল মানবসভ্যতা। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো ধূমকেতু জয় করে মনুষ্যনির্মিত যান।

বিজ্ঞানী সারা সিগার বলেছিলেন, ‘মানবসভ্যতায় এ এক মহাদিন। বড় এক পদক্ষেপ।’

কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী সারা সিগার আরও বলেছিলেন, ‘এই ধরনের অভিযান অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, একদিন মানুষ এক গ্রহ থেকে আরেক গ্রহে— এমনকি আন্তঃনাক্ষত্রিক অভিযাত্রাও করবে।’

প্রসঙ্গত, ইসার রোসেটা নভোযানের এই রোবটটি অবতরণের মাত্র আড়াই দিনের মাথায় ব্যাটারি চার্জ-শূন্য হলে ঘুমিয়ে পড়ে। ১৫ নভেম্বর থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সেই ‘অনিশ্চয়তার বলয়’ থেকে ধীরে ধীরে সূর্যের আলোয় ফিলায়ের ফিরে আসার খবরটি রবিবার টুইটারে নিশ্চিত করে ইসা।

এক নজরে সারা সিগার
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) প্লানেটরি সায়েন্স এবং পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক সারা সিগার। সূর্যের বাইরে অন্য নক্ষত্রের গ্রহ এবং তাদের আবহাওয়া নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। এ বিষয়ে এককভাবে ‍লিখেছেন দুটি বই— এক্সোপ্লানেট (২০১০) ও এক্সোপ্লানেট এ্যাটমোসফিয়ার (২০১০)।

জন্ম কানাডার টরন্টোতে, ১৯৭১ সালের জুলাইয়ে। ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো থেকে ১৯৯৪ সালে পদার্থবিদ্যা ও গণিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

এর পর পিএইচডি করতে যাত্রা করেন যুক্তরাষ্ট্রে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জ্যোতির্বিদ্যায় পিএইচডি করেন।

অধ্যাপনা ও কর্মসূত্রে বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা— দুই দেশেরই নাগরিকত্ব আছে সারা সিগারের।

ছবি সৌজন্য : ডিসকভার ম্যাগাজিন, ইসা, এমআইটি।

সোমবার, ১৫ জুন ২০১৫     ০৮:৩৭ অপরাহ্ন

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস ডট কম-এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না