Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / ধুলোয় ধূসর ফরিদগঞ্জ-রূপসা সড়ক
ফরিদগঞ্জ-রূপসা সড়ক
ফরিদগঞ্জ-রূপসা সড়ক

ধুলোয় ধূসর ফরিদগঞ্জ-রূপসা সড়ক

ধুলোয় ধূসর ফরিদগঞ্জ-রূপসা সড়ক। এ সড়ক দিয়ে জন এবং যান চলাচল দায় হয়ে পড়েছে। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার অতিব গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি এখন পথচারি এবং পাশের বসতীদের কাছে বিষপোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একদিকে ভাঙাচুরা রাস্তা তার উপর ধুলোয় ভরা। ৫.৭৪ কিলোমিটার সড়কটি সারাক্ষণ ধুলোয় ধূসর হয়ে থাকে। এর সাথে ৩নং সুবিদপুর থেকে মুন্সিরহাট সড়কের ৪.৬০ কিলোমিটার রাস্তাও এর সাথে রয়েছে। ধুলোবালির জন্য একদিকে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অন্যদিকে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

মেঘনা পাড়ের ঐতিহ্যবাহী রূপসা জমিদার পরিবারের গড়া এই সড়কটি অতিব গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়কটি দিয়ে শুধুমাত্র রূপসা বাজারই নয় উপজেলার পূর্বাঞ্চলের সাথে যোগাযোগের সংক্ষিপ্ত রাস্তাও বটে। বিশেষ করে উপজেলার পূর্বাঞ্চল রূপসা, খাজুরিয়া, লাউতলী, রুস্তমপুর, পাইকপাড়া, আমিরা বাজার, আষ্টা, গুপ্টি, গল্লাক ও সুবিদপুর এলাকার হাজার হাজার মানুষকে প্রতিনিয়ত উপজেলা সদর, পার্শ্ববর্তী লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ উপজেলায় যাতায়াতের জন্য ফরিদগঞ্জ-রূপসা সড়ক ব্যবহার করতে হয়।

ফরিদগঞ্জ-রূপসা সড়ক

গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি ধুলোর রাস্তায় পরিণত

কম সময়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে যাওয়ার জন্য অনেকেই এই সড়কটি ব্যবহার করতো। কিন্তু কোনো এক রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ ২/৩ বছর ধরে কাজ শুরু হলেও এখনো শেষ হচ্ছে না! টেন্ডার-বাতিল আবার পুনঃটেন্ডারের মধ্যেই চলে গেছে প্রায় দেড় বছর। কেন এমন জটিলতা সাধারণের কাছে তা এক রহস্য।

ফরিদগঞ্জ-রূপসা জিসি সড়কের ৮ কোটি ৬৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকার কাজটি মেসার্স শহীদ এন্ড ব্রাদার্স পান। টেন্ডার প্রক্রিয়ার জটিলতা কাটিয়ে উঠলেও কাজ চলছে একেবারে শম্বুক গতিতে। এতে মানুষের ভোগান্তিও বাড়ছে।

সর্বশেষ টেন্ডারের পর কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ৫ এপ্রিল। কিন্তু এক বছরের অধিক সময় পার হলেও এখনো রাস্তার কাজ শেষ হয়নি। এরকম নজির বাংলাদেশের আর কোথায়ও আছে কিনা এ রাস্তা ব্যবহারকারীদের জানা নেই। কেন কাজের এতো ধীরগতি? কবেইবা কাজ শেষ হবে, কেউ বলতে পারবে না।

এ সড়কের বেহালদশার কারণে সাধারণ রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে চলাচলের অনুপযোগী এ সড়কে চলতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ পথচারীরা।

জনসাধারণের কাছ থেকে পরিবহনগুলো আদায় করে নিচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। মাঝখানে ১৫ লাখ টাকার দায়সারা সংস্কার কাজ হলেও মানুষের দুভোর্গ কমেনি বরং বেড়েছে। মূল কাজ শুরু হলেও দীর্ঘ সময় পার হলেও শেষ না হওয়াতে মানুষের কষ্টের শেষ নেই। সড়কটির এ দুরবস্থা বিরাজ করলেও এলাকার জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রচেষ্টা নেই জনপ্রতিনিধিদের।

উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায় চলতি বছরের আগস্ট মাসের ১১ তারিখে কাজের মেয়াদ শেষ হবে। ৬০ পার্সেন্ট কাজ বাকী থাকলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইতোমদ্যে ৯৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী এ.এস.এম রাশেদুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে জানান,‘কাজের ধীর গতির জন্য ঠিকাদারকে এ পর্যন্ত ৪টি নোটিশ করেছি। তারপরও উনারা কাজের গতি বাড়াচ্ছেন। কাজের মেয়াদ শেষ হতে আর বেশী দিন নেই। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে না পারে তাহলে আমি নিয়মানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘এ পর্যন্ত ৪০ ভাগ কাজ হয়েছে। তবে বাকী কাজ আসা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে। আশা করি আগামি জুনের মধ্যে ফরিদগঞ্জ থেকে রূপসা পর্যন্ত সড়কের কার্পেটিং এর কাজ শেষ হবে।’

সিএনজি চালক নজরুল, জব্বার, গিয়াস, মিন্টু, বাপ্পীসহ অনেকেই চাঁদপুর টাইমসকে জানান, সীমাহীন কষ্ট করে পেটের তাগিদে সংসার পরিচালনার জন্য বাধ্য হয়ে ধুলোবালির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। তারা বলেন সড়ক উন্নয়নের সময় ধুলো প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত পানি না ছিটানোর কারণে সড়কে ধুলোর প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ফরিদগঞ্জ-রূপসা সড়ক

ফরিদগঞ্জ-রূপসা সড়ক যেন ধুলোর শহর

সিএনজি স্কুটার মালিক মহসিন ও বাচ্ছু চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,‘এ সড়কের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডর কারণে সড়কে ধুলোবালির পরিমাণ সীমাহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে প্রতিনিয়ত সড়কে চলাচলরত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে পড়েছে। গাড়ির শ্রমিকগণ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যদি কর্তৃপক্ষ রাস্তায় পানি ছিটাতো তাহলে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও মানুষ ধুলোবালি থেকে রক্ষা পেত। মালিক সমিতি না থাকায় আমরা বিষয়টি নিয়ে কারো সাথে কথাও বলতে পারছিনা।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশরাফ আহমেদ চৌধুরী চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, সড়কের ধুলোবালির কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা এবং শ্বাসকষ্ট রোগ বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া যাদের এজমা এবং এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের স্কিনে সমস্যা দেখা দিতে পারে।’ তিনি সড়কের ধুলোবালি প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

এ বিষয়ে ঠিকাদার আমির আজম রেজা বলেন,‘আগে শুনতাম মাজা ভাঙে, এখন কী সেটা শুনা যায়? জুন-জুলাই এর মধ্যে কাজ শেষ হবে।’

প্রতিবেদকঃশিমুল হাছান,২৫ মে ২০২১