ফরিদগঞ্জে সড়কের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

তিনি টানা দুইবারের চেয়ারম্যান। স্থানীয়রা তাকে ভালোবেসে ভোট দিয়ে দ্বিতীয় বার নির্বাচিত করেছেন। নির্বাচনের পূর্বে দিয়েছেন
প্রতিশ্রুতি। বিপদে আপদে থাকবেন সকলের পাশে। যে কোন সময় পাওয়া যাবে তাকে। এরপর নির্বাচন শেষ হলো। হয়ে গেল তার উল্টো। উনাকে (চেয়ারম্যান) পরিষদে গিয়ে ঠিক মতো পাওয়া যায়না। ফোন করেও পাওয়া যায়না। ইউনিয়নস্থ এলাকায় যে উন্নয়ন খাতের বরাদ্ধ আসে তাও সঠিক ভাবে পরিচালিত হয় না। তিনি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিপুর (পশ্চিম) ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মহসিন হোসেন।

সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নে উপজেলা পকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের গ্রামীন সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষে ২লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ হয়। এই বরাদ্ধ দিয়ে ২৬০ ফিট রাস্তা করার কথা ছিল। এই প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নাম মাত্র কাজ করায় স্থানীয় লোকজনের চাপের মুখে কাজ বন্ধ করে চলে যায় চেয়ারম্যানের মনোনীত লোকজন।

এ নিয়ে ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন ভুক্তভোগীরা। এসময় কাজের গুনগত মান নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নের শোল্লা-পাটওয়ারী বাজার সড়কের জানে আলমের বাড়ির সামনে থেকে বেপারী বাড়ি অভিমুখে রাস্তার ফ্লাট সলিং করে সিসি ঢালাই করার প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু উক্ত কাজে কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাটির উপর নিম্নমানের মালামাল দিয়ে ঢালাই কাজ শুরু করে। এসময় স্থানীয় লোকজন বাঁধা দিলে তাদের উপর চড়াও হন চেয়াম্যানের ভাই ইমাম হোসেনসহ কয়েকজন। পরে স্থানীয় লোকজনের চাপের মুখে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হন তারা।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানাযায়, ২ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকার কাবিটা প্রকল্পে কাজ এটি। রাস্তাটি ২৬০ মিটার দৈর্ঘ্য প্রস্থ ৭ মিটার করার কথা রয়েছে। প্রকল্পের সভাপতি করা হয় ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সৈকত মোল্লাকে। কাজের প্রথম ধাপের ৬০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হলেও প্রকল্পের সভাপতি নিজেও যানেনা কবে থেকে কাজ শুরু হয়েছে। কাজটি পরিচালনা করেন চেয়ারম্যানের ছোট ভাই ইমাম হোসেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন, ইয়ামিন, ফয়সাল ও আবু তাহের বলেন, এই কাঁচা রাস্তাটি উপরে কোন প্রকার কাজ না করে নিম্নমানের ইটের কনা দিয়ে ঢালাই শুরু করা হয়। পাশের এজিন পর্যন্ত লম্বা করে দিয়ে কোন রকম দায়সারা ভাবে করে যাচ্ছেন। আমরা বাধা দিলে তারা আমাদের উপর চড়াও হয়। আমরা বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছি। আমরা চাই সঠিক ভাবে রাস্তার কাজটি সম্পূর্ণ হোক।

স্থানীয়রা আরো জানান, ইতিপূর্বে ইউনিয়ন পরিষদের অধিনে যতগুলো উন্নয়ন কাজ হয়েছে, একটা কাজেরও গুনোগত মান সঠিক হয়নি এবং যতগুলো রাস্তার সলিং করা হয়েছে, বেশি সংখ্যক রাস্তার অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না।

প্রকল্পের সভাপতি ও স্থানীয় মেম্বার সৈকত মোল্লা বলেন, আমি প্রকল্পের সভাপতি, আমি জানিনা কবে থেকে কাজ শুরু করেছে। স্থানীয় লোকজন বলেছে কাজে অনিয়ম হচ্ছে শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি দায়সারা ভাবে কাজ করছে চেয়ারম্যানের ছোট ভাই ইমাম হোসেন। আমি হট্টগোল দেখে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসি।

চেয়ারম্যানের ছোট ভাই ইমাম হোসেনের কাছে মোবাইল ফোনে কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেই ভাবে উপজেলা থেকে কাজ করতে বলেছে সেই ভাবে কাজ করছি। কোন কিছু জানার থাকলে আমার ভাই চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবের কাছ থেকে জানেন।

তিনি আরো বলেন, কাজ করার সময় ইউপি সচিব আমির ভাই দেখে গেছেন। আমার কাজে কোন ধরনের অনিয়ম হয়নি।

এ বিষয়ে জানার জন্য চেয়াম্যান মহসিন হোসেনকে তার অফিসে গিয়ে না পেয়ে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মিলটন দস্তিদার বলেন, কাজ করার পূর্বে এই কাজ বাবদ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছি। তিনি (চেয়ারম্যান) কাজ করার পূর্বে আমাকে জানালে আমি আমার অফিসের লোক পাঠাতাম, কিন্তু তিনি কাজে অনিয়ম করার জন্য আমাদের রাখেননি। কি ভাবে কাজ করার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রথমমত রাস্তা খুড়ে দু’পাশে ইট খাড়া করে এজিন দিবে। এরপর বালি ও ইট দিয়ে সম্পন্ন রাস্তা সলিং করবে এবং সিমেন্ট বালি ও কংক্রিট দিয়ে ৩ ইঞ্চি ঢালাই দেওয়ার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমুন নেছা বলেন, অভিযোগ পেয়েছি এবং আগামীকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়কটি দেখবো।

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Share