Home / জাতীয় / রাজনীতি / পুননির্বাচনের দাবি মামাবাড়ির আবদার: ওবায়দুল কাদের
obaydul kader
ফাইল ছবি

পুননির্বাচনের দাবি মামাবাড়ির আবদার: ওবায়দুল কাদের

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির পুনর্নির্বাচনের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিষয়টিকে দলটির ‘মামা বাড়ির আবদার’- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে জালিয়াতি, ভোট কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। কারচুপি বা জালিয়াতি হলে ভোট আরও বেশি কাস্ট হতো। বিএনপি বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা করছে।

বৃহস্পতিবার সকালে ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হয়েছে এটা কেউ বলতে পারবে না। এ নির্বাচনে কারচুপি, জালিয়াতি করার কোনো সুযোগ নেই। যদি নির্বাচনটা কোনো প্রকার জালিয়াতি-কারচুপির হতো তাহলে ‘টার্ন আউট’ অনেক বেশি হতে পারত। ‘টার্ন আউট’ যেখানে ত্রিশেরও নিচে, এটা তাহলে কেন? কারচুপি জালিয়াতি করলে তো উপস্থিতি এত কম হওয়ার কথা না। কারচুপি যাতে না হয় সেজন্য ইভিএমের ডিজিটাল ব্যবস্থা।

তিনি বলেন, বিএনপি এখন বলার জন্য বলছে, বিরোধিতা করছে। কিন্তু তারাও জানে এ নির্বাচন ‘ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার’ হয়েছে। ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। এটা অত্যন্ত মাইনর। কোনো ধরনের সহিংসতা ছিল না। একেবারেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে। ভোট যেটাই হোক জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছেন।

সিটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান ও বক্তব্য জানতে চাইলে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, পৃথিবীর উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ আমেরিকার কত পার্সেন্ট লোক ‘টার্ন আউট’ করে? আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তো দুনিয়ার গণতন্ত্রের সবচেয়ে অ্যারিস্ট্রোকেট (অভিজাত) নির্বাচন। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে টার্ন আউট কেমন? এজন্য সেসব দেশের অবনতি কী ঘটছে, গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে?

তিনি বলেন, টার্ন আউট কম হতে পারে। কারণ ইভিএম আমাদের এখানে প্রথম অভিজ্ঞতা, পুরো ঢাকাজুড়ে ইভিএম এর আগে ব্যবহার হয়নি। নতুন সিস্টেমের একটি বিষয় আছে। ছুটির বিষয় ছিল। এরকম কিছু কিছু অবস্থার উদ্ভব হয়েছে। আর আমাদের মধ্যেও দুর্বলতা অবশ্যই আছে। সেটা আমরা খতিয়ে দেখব। ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করব।

নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, ‘একটা ভালো নির্বাচন হয়েছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে যে সংঘাতের আশঙ্কা ছিল সেটা হয়নি। এটা অবশ্যই স্বস্তিদায়ক এবং এর কৃতিত্ব নির্বাচন কমিশনের।’

নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে দলের অবস্থান জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) দেশে ফিরলে ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং হবে। সেখানে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলাপ আলোচনা হবে। সেখানে ভুল-ত্রুটি দুর্বলতা নিয়েও আলোচনা হবে। সেখানে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করে সিটি নির্বাচনের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করতে বিএনপি সরকার ও আওয়ামী লীগের সহযোগিতা চেয়েছে- এ নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ঢাকা শহরে বা বাংলাদেশের কোথাও সমাবেশ করেছে, আর তাতে আওয়ামী লীগ বাধা দিয়েছে- এমন কোনো ঘটনা কখনও ঘটেনি। আওয়ামী লীগ কোথাও সমস্যা সৃষ্টি করেনি বা প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়নি। একটা উদাহরণও নেই।

তিনি বলেন, ‘কর্মসূচিতে অনুমতির বিষয়টি অনেক দিন ধরেই চলছে। কারণ যারা সভা করবে তাদের নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে। সমাবেশটা সুশৃঙ্খল বা নিরাপদ যাতে হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটা ভূমিকা আছে। যে কারণে আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম না, আমরাও পুলিশের অনুমতি নিয়েছি। সভা-সমাবেশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার বিএনপির আছে। তবে অনুমতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকেই আসতে হবে। এটা তো আওয়ামী লীগ দিতে পারবে না।’

আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক জেলাগুলোর সম্মেলনের অংশ হিসেবে তিনটি জেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রাঙ্গামাটিতে ২৮ তারিখে সম্মেলন হবে। এ মাসের ১২ তারিখ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়া এবং ১৩ তারিখ টুঙ্গীপাড়ায় সম্মেলন হবে।

তিনি বলেন, আমরা সম্মেলনকে শক্তিশালী করার জন্য সাংগঠনিক কাঠামোটা পুনর্বিন্যাস বা বিন্যাস, যেখানে যেখানে প্রয়োজন নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেছি। সামনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন আছে। এজন্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ মহানগরের সম্মেলন আমরা নির্বাচনের পরে করব।

তিনি বলেন, ‘জেলা সম্মেলনের আগে তৃণমূলে যেতে হবে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা সম্মেলনের কাজ শেষ করে জেলা সম্মেলনের তারিখ নিয়ে আমাদের যুগ্ম ও সাংগঠনিক যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের সঙ্গে আলাপ-পরামর্শ করে জেলা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা মেহের আফরোজ চুমকী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খ ম জাহাঙ্গীর, মারুফা আক্তার পপি, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা ব্যুরো চীফ