Home / চাঁদপুর / দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য বদলে দিয়েছে চাঁদপুর-রায়পুর সেতু
দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য বদলে দিয়েছে চাঁদপুর-রায়পুর সেতু

দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য বদলে দিয়েছে চাঁদপুর-রায়পুর সেতু

চাঁদপুর জেলা সদরে প্রায় ৪ কি. মি. দক্ষিণ-পূর্বে ডাকাতিয়া নদীর উপর চাঁদপুর সেতুটি নির্মিত হয়। যা জেলার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছে।

বিশেষ করে যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা হয়। ব্যবসা, বাণিজ্য, যাতায়াত ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে চাঁদপুর সেতুটি একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ ও হাইমচর এ দু’উপজেলাসহ লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ইত্যাদি জেলার সাথে চাঁদপুর সেতুটি একটি চমৎকার যোগসূত্র স্থাপন করেছে।

এসব এলাকার মানুষ ব্রীজটি নির্মিত হবার পূর্বে রিক্সা বা লক্কর-ঝক্কর মার্কা বাস বা মাইক্রো কিংবা ভটভটি দিয়ে মামলা মোকদ্দমা, ব্যবসা বাণিজ্য স্কুল কলেজ ও ধর্মীয় সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের প্রয়োজনে অনেক কাঠখড়ি পুড়িয়ে জেলা সদরে আসতে হতো। এতে সময় ও অর্থ ব্যয় হতো এবং নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হতো।

বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে প্রবল বৃষ্টিপাতে কাঁচা রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনগুলোতে যাত্রীরা নেমে ঠেলে বা টেনে চালককে সহায়তা করতো। ইচলী থেকে ফরিদগঞ্জ পর্যন্ত সড়কটিকে এক সময় বলা হতো নরক যন্ত্রণার মহাসড়ক। এখন আর সে কথা কেউ বলে না।

বলতে গেলে সড়কটি জেলার সবচেয়ে ভালো কিংবা উন্নতমানের একটি সড়ক হিসেবে এখন পরিচিত।

রাত দিন ২৪ ঘন্টাই বাস-মিনিবাস, সিএনজি, মাইক্রোবাস, ট্রাক, ভ্যান, রিক্সা, অটোরিক্সা, এ্যাম্বুলেন্সসহ দেশের সকল প্রকার যানবাহনে এ সড়কটি দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চলাচল করছে।

এ সড়কের সাথে রয়েছে সংযোগ সড়ক। ফলে প্রতিটি অলিগলিসহ গ্রামের প্রতিটি অঞ্চলে বা ইউনিয়নে নির্বিঘেœ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় ভাবেই ছোট ছোট পরিবহনের মাধ্যমে এলাকাবাসী চলাচলের সুযোগ পাচ্ছে।

ফলে দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে এলাকাবাসী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। সওজ বিভাগের ভাষায় এ সড়কটির নাম দেয়া হয়েছে চাঁদপুর-রায়পুর-বেগমগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক। যাকে আমরা বলি সংক্ষেপে চাঁদপুর সেতু।

চাঁদপুর-কুমিল¬া রোডের ওয়ারলেস নামক টার্নিং পয়েন্টে থেকে ৩ কি.মি. দক্ষিণে ডাকাতিয়া নদী প্রবাহিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর যাতায়াত ও মালামাল পরিবহন সহজতর করার লক্ষ্যে চাঁদপুর-রায়পুর বেগমগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

সড়কপথে রায়পুর-চাঁদপুর-কুমিল¬াসহ রাজধানীর ঢাকার সাথে দেশের সর্বত্র যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত, সময় সাশ্রয় করার প্রয়োজনে এবং এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ডাকাতিয়া নদীর উপর একটি সেতু নির্মান করা ছিল চাঁদপুর, ফরিদগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর জেলাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি।

এ দাবি বাস্তবায়নে চাঁদপুর জেলাস্থ সড়ক ও জনপথ বিভাগ চাঁদপুর সেতু নির্মাণের একটি প্রকল্প প্রস্তাব পেশ করে।

দেশের সওজ ও পরিকল্পনা বিভাগ এবং একনেক উক্ত প্রকল্প প্রস্তাব গ্রহণ করার পর ১৮ কোটি ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করে। জনগণের আশা ও প্রত্যাশা পূরণে ১৯৯৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ সেতুর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন।

চাঁদপুর সেতুটি নির্মাণের ফলে সেতুর ৪ কি.মি. দীর্ঘ এপ্রোচ সড়কটি চাঁদপুর শহরের সাথে বাইপাস হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এতে চাঁদপুর জেলা সদরের সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নসহ চাঁদপুর শহরের যানজট হ্রাস পায়। দীর্ঘ ১০-১১ বছর পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সরকারের সুদৃষ্টি নির্দেশনা ও অর্থায়নের পর ডাকাতিয়া নদীর উপর চাঁদপুর সেতু নির্মিত হয়।

২০০৫ সালের ১৭ মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চলাচলের জন্য এর শুভ উদ্বোধন করেন। সড়কটি সম্পূর্ণ দেশের নিজস্ব অর্থায়নে তৎকালীন সময়ে বাস্তবায়িত হয়। এর দৈর্ঘ্য ২শ’ ৪৮ মিটার এবং প্রস্থ ৯.৭৩ মিটার।

৪১.৩৩ মিটারের ৬টি স্প্যান রয়েছে। সংযোগ সড়কের চাঁদপুর প্রান্তের দৈর্ঘ্য ১ কিলোমিটার এবং রায়পুর প্রান্তের দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটার।

প্রতিদিন বিকাল বেলা শিশু-কিশোর, মহিলা, বয়োবৃদ্ধরা বেড়াতে চলে আসে ব্রীজটিতে। তবে সকল প্রকার যানচলাচল করে পরিবহনগুলোর জন্যে টোল-খাজনা আদায় প্রথা বাতিল করার জন্যে ফরিদগঞ্জবাসী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি করেছে।

বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগ বিবেচনা করছে বলে জানা যায়।

চালকদের দাবি ঠিকাদার মাত্রাতিরিক্ত টোল আদায় করায় চালকরা দিশেহারা হয়ে পড়ছে। তাই জনস্বার্থে বিষয়টি সংশি¬ষ্টমহল ভেবে দেখবেন বলে তারা আশ করছে।

দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য বদলে দিয়েছে চাঁদপুর-রায়পুর সেতু

About The Author

আবদুল গনি

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৭:০০ এএম, ১৮ মে ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ