Home / সারাদেশ / ঢাবি’র কলা ভবনের পাশে প্রেরণার ‘অপরাজেয় বাংলা’
oparajoy-babgla

ঢাবি’র কলা ভবনের পাশে প্রেরণার ‘অপরাজেয় বাংলা’

ঢাবি’র কলা ভবনের পাশে ঠিক সামনেই ত্রিকোণাকৃতির বেদিতে দাঁড়িয়ে আছে তিনজনের অবয়ব। একজন গ্রামীণ নারী ও দু’জন পুরুষ। সর্বডানে থাকা কুচি দিয়ে শাড়ি পরা এক গ্রামীণ নারী। তিনি সেবিকা,কাঁধে ফার্স্টএইডের বক্স। যেনো বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধাদের সেবাই প্রাণপণে প্রস্তুত। যেখানে যুদ্ধাহত মুক্তিসেনাদের খোঁজ পাবেন সেখানেই ছুটবেন। এ নারীর অবয়ব জানিয়ে দেয় ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে আসা নারীদের বীরত্বের কথা।

তার পাশে কাঁধে রাইফেলের বেল্ট ধরা,লুঙ্গি কাছা দেওয়া এক যুবক। যার ডানহাতে একটি গ্রেনেড। দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে যেন একটুও দমে না তার পাঁ। শত্রু নির্মূল করতে জীবন উৎসর্গে যেনো তার স্বর্গসুখ। তার বামপাশে জিন্সপ্যান্ট পরা অপেক্ষাকৃত খর্বকায় শহুরে তরুণ। যার হাতে থ্রি-নট রাইফেল এবং চোখে-মুখে স্বাধীনতার দীপ্ত চেতনা।

এটাই ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাস্কর্য। যা দেখে প্রেরণা পায় লাখ লাখ তরুণ-তরুণী। সাহস যোগায় কথা বলার। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই তো আন্দোলনের জ্বলন্ত ইতিহাস। কোথায় নেই তাদের ভূমিকা। এসব প্রেরণা যে ওই অপরাজেয় থেকেই আসে।

সিমেন্ট,পাথরের টুকরো,বালি,ইস্পাত এবং লোহার রড দিয়ে তৈরি তিনজনের অবয়বে পুরো জাতির প্রতিনিধিত্ব করছে তারা তিনজন। এগুলো ভাবতে ভাবতেই দেখা হলো দুজন ছেলে ও তিনজন মেয়ের সাথে। ভাস্কর্যের সামনে আবেগি হয়ে একজন আরেকজনের ছবি তুলছেন। তাদের কাছেই জানতে চাওয়া হলো ‘অপরাজেয় বাংলা’ নিয়ে অনুভূতি। জানা গেলো রাজধানীর মিরপুর থেকে ঘুরতে এসেছেন তারা।

একজন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছেই ভাস্কর্যগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা বা আবেগের ভাষা জানা নেই। তারা অনুভব করতে পারে না ‘৭১ এ আমাদের সাহসী বীরদের অদম্য চেতনা নিয়ে যুদ্ধ করার সময়কে।“

‘অপরাজেয় বাংলা’ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের অনারারি অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান বলেন,‘অপরাজেয় বাংলা’ আব্দুল্লাহ খালিদ দীর্ঘ সময় নিয়ে নির্মাণ করেছেন। মূলত: শিক্ষার্থীদের গণদাবি থেকেই তৈরি হয়েছে। ছাত্র সংসদের চাওয়া থেকেই তৈরি হয়েছে। তবে এগুলো আরো গোছানো এবং যথাযথভাবে নির্মাণ করা উচিত।

প্রসঙ্গত, ৬ ফুট বেদির উপর নির্মিত এ ভাস্কর্যটির উচ্চতা ১২ ফুট এবং প্রশস্থতা ৮ ফুট ও ব্যাস ৬ ফুট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মিত দেশের প্রথম ভাস্কর্য এটি। এর নির্মাতা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ। ‘অপরাজেয় বাংলা’ নামকরণটি করেছিলেন মুক্তিযাদ্ধা ও সে-সময়ে দৈনিক বাংলার সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী।

তিনি উদ্যোগ নিয়ে দৈনিক বাংলায় একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল ‘অপরাজেয় বাংলা’। ভাস্কর্যটিতে একমাত্র নারীর মডেল হিসেবে ছিলেন হাসিনা আহমেদ। আর গ্রামীণ পোশাক পরা তরুণের মডেল হয়েছিলেন সৈয়দ হামিদ মকসুদ। শহুরে তরুণ মুক্তিযোদ্ধার মডেল ছিলেন আর্ট কলেজের ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা বদরুল আলম বেনু।

ঢাকা ব্যুরো চীফ , ৯ জানুয়ারি ২০২১
এজি