Home / চাঁদপুর / জেলাজুড়ে ডাকাত আতংক : গ্রামবাসীকে পুলিশ সুপারের নির্দেশনা
Dakati_Churi
প্রতীকি ছবি

জেলাজুড়ে ডাকাত আতংক : গ্রামবাসীকে পুলিশ সুপারের নির্দেশনা

আইন হাতে তুলে না নিয়ে পুলিশকে অবহিত করুন : পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার

চাঁদপুরের প্রায় সবক’টি উপজেলার গ্রামগুলোতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দুর্বৃত্তরা। ছিনতাই, ডাকাতি, চুরির ঘটনা ঘটছে অহরহ। জেলাজুড়েই শুরু হয়েছে অপরাধীদের ভয়ঙ্কর তান্ডব। কখনো প্রকাশ্যে আবার কখনো গোপনে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মানুষের অর্থকড়ি।

এসব অপরাধ রোধে আইনের শাসন নিশ্চিত সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরো দায়িত্বশীল মনোভাব এবং কঠোর অবস্থান কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, মাদকের ভয়াবহতা, বেকারত্বের কারণে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি এবং কতিপয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের শৈথিল্যের কারণেই অপরাধীরা এখন বেপরোয়া।

ভুক্তভোগীদের অনেকেই ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘চাঁদপুরে বর্তমানে গ্রামীণ আইন-শৃঙ্খলা অবনতি। এখনই সময় লাগাম টেনে ধরার। দেরী হলে জনগণের মাঝে সৃষ্ট আতঙ্ক কাটানো সম্ভব নয়।’ সুযোগ্য জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা পাবে জনগণ এ প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন ভুক্তভোগীরা।

গত কয়েক দিন জেলার শাহরাস্তি, কচুয়া, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, হাইমচর মতলব দক্ষিণ উপজেলার বাসিন্দাদের নির্ঘুম রাত কেটেছে। আইনের প্রতি তোয়াক্কা কিংবা অজ্ঞতাবশতই হউক, জেলার প্রায় উল্লেখযোগ্য মসজিদে মাইকিং করে ডাকাতের কবল থেকে রক্ষা পেতে সর্তক করা হচ্ছে।

১৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দিবাগত রাত প্রায় পৌনে ১টায় হঠাৎ করে শাহরাস্তি উপজেলার চারদিকে ডাকাত ডাকাত শব্দে হাজার হাজার জনতা রাস্তায় নেমে আসে। দা, লাঠি, রড নিয়ে প্রত্যেক এলাকায় অবস্থান নেয় স্থানীয়রা। একের পর এক মসজিদ মাইকে ঘোষণা করা হয়, ‘এলাকায় ডাকাত ঢুকেছে। আপনারা জেগে উঠুন, বিভিন্ন এলাকা থেকে ফোন আসতে শুরু করল মানুষের চিৎকার। সারা উপজেলা প্রকম্পিত হয়ে উঠল।’

একই গুজব বুধবার রাত ১১টায় কচুয়া উপজেলার খাজুরিয়া-লক্ষ্মীপুর গ্রামে পার্শ্ববর্তী গ্রামে ডাকাতি হচ্ছে বলে মাইকিং শুরু হয়।

পর্যায়ক্রমে রাতভর কচুয়া, হাজীগঞ্জ ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিভিন্ন মসজিদে মাইকিং করা হয়। ডাকাতির ঘটনায় শুধু মসজিদের মাইকিং করেই নয়, মোবাইল ফোন আর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে এই গুজব।

হাজীগঞ্জ উপজেলার আহম্মদপুর গ্রামের মোশারফ হোসেন সেলিম নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তার গ্রামে ডাকাতি হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন কোথায়?’

কচুয়া উপজেলার খাজুরিয়া-লক্ষ্মীপুর গ্রামের প্রবাসীর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস আদুরী বলেন, ‘পাশের গ্রামে ডাকাতি হচ্ছে এমন খবর আমাদের মসজিদের মাইকে বুধবার রাতে প্রচার করা হয়। সবাইকে সর্তক থাকার আহ্বান জানানো হয়। তারপর থেকে সবাই দা, লাঠি নিয়ে রাতভর রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।’

কচুয়া উপজেলার আকানিয়া জামে মসজিদের ইমাম বেলাল হোসাইন বলেন,‘ গ্রামের মুসল্লিরা রাতে মাইকিং করতে বলেছে। তাই মাইকিং করেছি। সবাই সজাগ থাকুন। পার্শ্ববর্তী গ্রামে ডাকাতি হচ্ছে।’

কচুয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইব্রাহীম খলিল বলেন, কচুয়া-মতলব দক্ষিণ ও বরুড়া উপজেলা ডাকাতির গুজব ছড়িয়েছে। কোথাও ডাকাতির ঘটনার সঠিক খবর পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ এক বছর আগে কচুয়া উপজেলায় একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল।

তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার রাতে জগৎপুর বাজারে ডাকাত সন্দেহে এক মানসিক রোগীকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা। পরে তাকে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এ ব্যাপারে শাহরাস্তি থানা উপ-পরিদর্শক মো. কামাল হোসেন বলেন, ডাকাতের ব্যাপারে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ডাকাতির গুজব শুরু হয়েছিল বরুড়া ও শাহরাস্তির সীমান্তবর্তী এলাকার বিজয়পুর এলাকায়। প্রথমে মঙ্গলবার রাতে ডাকাতির গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল।

হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, বুধবার রাতে ডাকাতির গুজব ছড়ানো হয়েছে। রাতে হাটিলা, জগতপুর ও রামপুরে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। তবে কোথাও ডাকাতির খবর পাওয়া যায়নি। ডাকাতির গুজবে উপজেলার রামপুর বাজার একটি মাইক্রোবাস আটক করে মহিলাসহ কয়েক যাত্রীকে আহত করা হয়েছে। এই উপজেলা সর্বশেষ কয়েক মাস আগে সিদলা গ্রামে ডাকাতি হয়েছিলো।

সহকারী পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) আবদুল হানিফ জানান, ডাকাতির ঘটনাটি একেবারেই গুজব। মূলত ১০-১২ দিন আগে কুমিল্লা জেলার বর্ডারের একটি গ্রামে সংঘবদ্ধ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই ডাকাতদল ৪-৫ দিন আগে লাকসাম ও শাহরাস্তি উপজেলার বর্ডারের একটি গ্রামে ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়। পরে শাহরাস্তি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় জনগণকে সচেতনতার জন্য ডাকাতি ঘটনার খবর পেলে মসজিদে মাইকিং করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেখান থেকে গত দুই দিন ধরে এক মসজিদের মাইকিং শুনে অন্য মসজিদে মাইকিং করা হয়। যা একইবারেই গুজব।

অপর দিকে চাঁদপুর শহরেরও চলছে ছিনতাই ও চুরির ১৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টায় তালতলা এলাকায় শাহ মঞ্জিলে দিনে দুপুরে চুরি হয়েছে।। চোরের দল এসময় বসতঘর থেকে নগদ ২ লক্ষাধিক টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়েছে বলে জানা গেছে ।

খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন । চুরির ঘটনার সাথে জড়িত ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া সোহেল (২৫) কে আটক করেছে পুলিশ ।

জানা যায়, ব্যবসায়ী শাহ মোহাম্মদ আলমগীরের পরিবারের সদস্যরা ঢাকাতে বেড়াতে গিয়েছেন । গতকাল দুপুরে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে পীর মহসিন উচ্চ বিদ্যালয়ে অতিথি হিসেবে যান । অনুষ্ঠান শেষে এসে তিনি তার দোতলার রুমে প্রবেশ করে দেখতে পান তার দরজার তালা ভাঙ্গা । ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পান তার রুমের ভেতরের ষ্ট্রীল আলমারি ও ওয়ারড্রপ খোলা । সাথে সাথে তিনি পুলিশকে ঘটনাটি জানান ।

চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মামনুর রশিদের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, আমরা যাকে আটক করেছি সে ওই বাড়ির ৫তলার ভাড়াটিয়া। আটক সোহেল বিরুদ্ধে মাদক মামলা সহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে । সে ছাড়া কেউ এই ঘটনাটি ঘটাতে পারেনা । সে একজন মাদকসেবী ।

সম্পতি গভীর রাতে চাঁদপুর ষোলঘরস্থ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অফিসের দরজা ভেঙ্গে চোরচক্র ৩টি ল্যাপটপ, ৩টি ওয়েব ক্যামেরা, ১টি রাউটার নিয়ে যায় গত ৪ জানুয়ারি স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে চাঁদপুর মডেল থানায় একটি জিডি করেন। যার নং-১৮।

চাঁদপুর শহরে প্রতারণা করে স্বর্ণালংঙ্কার নিয়ে পলানোর সময় জনতা কর্তৃক আটক হয়েছে এক প্রতারক। ঐ দিন দুপুর ১২টায় চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটার খবর পাওয়া যায়।

প্রতারণার শিকার শহরের প্রফেসার পাড়ার মাতব্বর বাড়ির এলাকার লতুফা বেগম ও তার মেয়ে শাহনাজ আক্তার শিশু কন্যাকে গত ১৬ জানুয়ারী ডাক্তার দেখানোর জন্য হাসপাতালের আসে। ডাক্তার দেখাতে না পেরে রিক্সা যোগে যাওয়ার সময় মুখার্জীঘাট এলাকায় চালক বেশে বরিশালের বাকেরগঞ্জ বড় পাশা গ্রামের মফিজ গাজীর ছেলে মজিবুর রহমান গাজী (৪৮) লতুফা বেগম ও মেয়ে শহনাজ আক্তারকে একটি পিতলের টুকরো কাগজে মুড়িয়ে স্বর্ণের বিস্কেট বলে হাতে দেয়। ওই কগজটি খোলার সাথে সাথে মা ও মেয়ে ২জন অনেকটা অজ্ঞান হয়ে যায়। এতে করে লতুফা বেগম ও মেয়ে শাহনাজের কাছ থেকে প্রতারক ২টি স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায়।

বুধবার দুপুরে মা ও মেয়ে পুনরায় হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসলে প্রতারক চালককে দেখে চিনে ফেলে। তার ডাক চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে প্রতারক মজিবুরকে ধরে ফেলে। প্রথমে স্বীকার না করলেও জনতার গণঘোলায়ের পর প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করে।

প্রতারক মজিবুর জানায়, ঘটনার দিন লক্ষীপুরের মান্দারী এলাকার শহীদ (৩৫) ও উত্তর বঙ্গের ফিরোজ (৪০) এ প্রতারণার সাথে জড়িত। পরে চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সেলিম তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। লতুফা গেম বাদী হয়ে একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করে।

২ ফেব্রুয়ারি ফরিদগঞ্জে ২৪ ঘণ্টার মাথায় ডাকাতির শিকার হয়েছে কয়েকটি পরিবার। এবার ডাকাত দল বিল্ডিংয়ের গ্রীল কেটে ঘরে প্রবেশ করে নগদ টাকাসহ প্রায় দু লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়। এ সময় ডাকাতের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন দু’ সন্তানের জননী প্রধান শিক্ষিকা ফাতিমা আক্তার লাকী (৩৫)। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার দিবাগত গভীর রাতে ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার পাঠান বাড়িতে।

ডাকাতির শিকার পূর্ব রূপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ও ব্যবসায়ী কামাল পাঠানের স্ত্রী ফাতিমা আক্তার লাকী জানান, ‘সোমবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে আমাদের বিল্ডিংয়ের জানালার গ্রীল কেটে ডাকাত দল ঘরে ঢুকে তারা ঘরের আসবাবপত্র ভেঙ্গে আলমিরায় রক্ষিত নগদ বেশ কিছু টাকা ও ৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ২টি মোবাইল সেট লুটে নেয়। এ সময় আমি টের পেয়ে চিৎকার দিতে থাকলে তারা আমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায়।

ডাকাতির সংবাদ পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

১৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ গ্রামে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। গভীর রাতে ৮/১০ জনের মুখোশধারী ডাকাত দল পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অলি হোসেনের (৪৫) বাড়ির পেছনের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে পরিবারের সকলকে রুমে তালাবদ্ধ করে দেয়। তারা ঘরের স্টিলের আলমারী ভেঙ্গে নগদ দেড় লাখ টাকা ও ১০/১২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানার এসআই মোঃ মোবারক হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার শাহরাস্তি উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের বলশীদ দক্ষিণ-পূর্বপাড়া আবদুল আলী মাস্টারের বাড়িতে পরিবারের সকলকে অচেতন করে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুট করে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আর নেশা মিশ্রিত খাবার খেয়ে ওই পরিবারের ৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, এলাকাবাসী ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাতে প্রতিদিনের ন্যায় ওই বাড়ির আবুল বাসারের পরিবারের সদস্যরা রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন মঙ্গলবার সকালে বাড়ির লোকজন ওই পরিবারের বসতঘরের দরজা খোলা অবস্থায় এবং পরিবারের সদস্যদেরকে অচেতন অবস্থায় দেখতে যায়। পরে বাড়ির ও আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা হচ্ছেন গৃহকর্তা মোঃ আবুল বাসার (৭৫), গৃহিণী পারভীন আক্তার (৫০), মেয়ে হাসিনা ইসলাম (২৭), ছেলে ফয়েজ আহমেদ (২৩), মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস (২১), মেয়ে রুনা আক্তার (১৯), নাতী মেহেদী ইসলাম মারুফ (৯) ও নাতনি সানজিদা ইসলাম (৭)।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার জানায়, রাতের খাবারের সাথে কে বা কারা নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে দেয়ার কারণে আমরা খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ার পর সবাই অচেতন হয়ে পড়ি। আর এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা আমাদের ঘরে রক্ষিত বিভিন্ন কোম্পানীর ৭টি মুঠোফোন, ৪টি স্বর্ণের চেইন, ৩ জোড়া কানের দুলসহ প্রায় ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে শাহরাস্তি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

১২ ফেব্রুয়ারি হাজীগঞ্জ উপজেলায় খাবারের সাথে নেশা মিশিয়ে দিয়ে বাপ-পুত্রকে অচেতন করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। নেশা মিশ্রিত খাবার খেয়ে চাঁদ মিয়া সর্দার (৬৫) ও তার পুত্র মোঃ মমিন হোসেন (১৮) অসুস্থ হয়ে পড়লে শুক্রবার গভীর রাতে তাদের দুজনকে অচেতন অবস্থায় চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি করানো হয়। তবে চাঁদ মিয়ার অবস্থা গুরুতর দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্যে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

স্বজনরা জানান, ওইদিন তারা দুজন রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েন। রাত ১২টা/১টার সময় মমিন হোসেনের মোবাইল নম্বর থেকে তার মায়ের মোবাইলে বলা হয়, মা আমি অসুস্থ হয়ে দোকানের কাছে পড়ে আছি, আমাকে ঘরে নিয়ে যান। এ কথা শুনে তিনি ছেলেকে আনতে দোকানের কাছে যান। এই সুযোগে দুর্বৃত্তরা ঘরে ঢুকে ঘরে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। তারা বলেন, দুর্বৃত্তরা হয়তো পরিকল্পিতভাবে তরকারির সাথে নেশা মিশিয়ে দিয়েছে। তাই তারা তরকারি খেয়ে অচেতন হয়ে পড়ে। কিন্তু চাঁদ মিয়ার স্ত্রী ওই নেশা মিশ্রিত তরকারি না খাওয়ায় তিনি সুস্থ রয়ে যান। আর সেটি দৃর্বৃত্তরা বুঝতে পেরে মোবাইল করে তাকে ঘর থেকে বাইরে নিয়ে যান। এ সুযোগে তারা টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়।

samsunnahar

চাঁদপুর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার (ফাইল ছবি)

এ ব্যাপারে পুলিশের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে চাঁদপুর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, সম্প্রতি গ্রামের অনেকেই গুজবে কান দিচ্ছে, আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। মসজিদের মাইক ব্যবহার করছে। ডাকাত আতংক থাকলে পুলিশ প্রশাসনকে জানাবে, কিন্তু তা না জানিয়ে নিজেদের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে, এটি ঠিক নয়। পুলিশ জনগণের জন্য। জনগণের সকল বিষয়ে পুলিশ সাথে থাকবে। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া কিংবা সাধারণ বিষয় নিয়ে মসজিদের মাইক ব্যবহার করা উচিত নয়।’

মুঠোফোনে তিনি আরো জানান, আমি প্রতিটি উপজেলায় যাবো। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সাধারণ মানুষদের সাথে কথা বলবো। এ মহূর্তে (শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টা) আমি শাহরাস্তি উপজেলায় আসছি, এখানে গ্রামের মানুষদের সাথে কথা বলবো, যেনো আইন হাতে তুলে না নেয়। আমি শুনেছি এখানে একজন পাঘল ধরে অনেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।’

প্রতিবেদকের মাধ্যমে সংবাদপত্রের সাহায্যে তিনি চাঁদপুরবাসীকে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অনুরোধ করেছেন। কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা কিংবা দুর্ঘটনা হলে গ্রামবাসীকেও ছাড় দেয়া হবে না বলেও সতর্ক করেছেন।

দেলোয়ার হোসাইন

: আপডেট ০৭:০১ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, শনিবার
ডিএইচ