Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে মোটর সাইকেলের বেপোরোয়া গতিতে ঘটছে দুর্ঘটনা
বেপরোয়া মোটর বাইক
প্রতীকী ছবি

চাঁদপুরে মোটর সাইকেলের বেপোরোয়া গতিতে ঘটছে দুর্ঘটনা

চাঁদপুর পুলিশ সুপারের নিদের্শনাসমূহ
*হেলমেট ছাড়া কোন চালক মোটরসাইকেল চালাতে পারবে না। *চালকসহ দু’জনের অতিরিক্ত মোটর সাইকেলে আরোহন করা যাবে না। *চালক এবং মোটরসাইকেল আরোহনকারী উভয়কেই হেলমেট ব্যবহার করতে হবে। *মোটর সাইকেলের সামনে কোন শিশুকে বহন করা যাবে না। *শহর এলাকায় মোটরসাইকেলের গতিবেগ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১৮-২০ কিলোমিটার। *শহরের বাইরে অন্যান্য এলাকায় গতিবেগ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ কিলোমিটার। *চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও মোটর সাইকেল কাগজপত্র সংগে থাকতে হবে। *ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং মোটরসাইকেলের কাগজপত্র ছাড়া গাড়ী চালানা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

মটর সাইকেল সমসমায়িক সময়ের কিছু শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য ব্যাক্তিগত কিংবা শৌখিনতামূলক ১টি বাহন, এই বাহনটি কেউ ব্যবহার করেন শখে, কেউ আবার প্রয়োজনে। তবে শখেরবশত কিংবা প্রয়োজনবশত যেভাবেই ব্যবহার হউক, দক্ষতা ও সচেতনভাবে চালাতে জানলে এটি একজন মানুষকে সময়মত নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাতে সহায়তা করে। এতে করে এই বাহনটির প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।

কিন্তু বর্তমানে যুবক শ্রেণির অধিকাংশ মটর সাইকেল চালকদের বেপোরোা গতিতে ঘটছে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এতে চালক, আরোহী, পথযাত্রীসহ আহত কিংবা নিহত হওয়ার ঘটনাও অনেক।

এছাড়া রুট পারমিট নেই উচ্চ গতি সম্পন্ন বর্ডার পাস কিংবা চোরাই চালানের মাধ্যমে আমদানীকৃত গাড়ী দিয়ে মধ্যে রেইস দিতে গিয়ে ঘটে যাচ্ছে বড় ধরনের দুর্ঘটনা, অনেক যুবক মটর সাইকেলকে বিকট আওয়াজে দিয়ে চালাতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে বিধায় সৃষ্টি হচ্ছে মারাত্মক শব্দদূষণ। এদের কাউকে আবার ট্রাফিক পুলিশ, কিংবা সার্জেন্ট আটক করলেও পার পেয়ে যাচ্ছে কথিত বড় ভাইদের ফোন রিকুয়েষ্টে।

মটর সাইকেলকে যদি চালক অদক্ষতার কারণে নিয়ন্ত্রনে না রাখতে পারে, কিংবা অদক্ষ চালককেই মটর সাইকেল স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে হয়, তখনি ঘটে বিপত্তি। তাছাড়া বর্তমান সময়ের এ বিপত্তি তথা বড় ধরনের দুর্ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হচ্ছেন চালক নিজেই।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরাও তাদের নিজস্ব মটর সাইকেল দিয়ে অর্ধশিক্ষিত ১৬ এর উর্দ্ধো বয়সী তরুনদের দিয়ে মাদক দ্রব্য পরিবহন করে থাকে। যখন মটর বাইক দিয়ে মাদক আনায়ন করা হয়, তখন দেখা যায়, তাদের মটর সাইকেলের গতিও থাকে বেপোরোয়া। আর বেপোরোয়া গতির বিষয়টি নিয়ে একাধিক যুবক বয়সী চালকদের প্রশ্ন করলে, তারা অনেকেই এড়িয়ে যায় আবার অনেকেই ভিন্ন ভাষায় মাদক বহনের বিষয়টি স্বীকার করে।

অপরদিকে বর্তমান গ্রামীণ কেয়ার রাস্তাগুলিতেও দীর্ঘদিনের সংস্কারের অভাবে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে আছে। এতে করে বেপোরোয়া গতিতে মটর সাইকেল চালাতে গিয়ে অনেকেই দুর্ঘটনায় পতিত হতে দেখা যায়।

এছাড়া স্কুল-কলেজগামী কিশোর, তার মেয়ে বান্ধবীর কাছে নিজেকে উপস্থাপন করতে বা অনেকসময় দেখা যায় পেছনে মেয়ে বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরার সময় সখেরবশত বেপোরোয়া গতিতে মটর সাইকেল চালাতে থাকে। এতেও অনেকসময় দুর্ঘটনা ঘটে যায়।

একাধিক মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার সংবাদ সংগ্রহের অভিজ্ঞতা থেকে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে, গত বছর চাঁদপুর সদর উপজেলার ছোবানপুর গ্রামের বাসিন্দা হোটেল কর্মচারী রাশেদ (১৭) ও তার বন্ধু মিশনকে সাথে নিয়ে ভাড়া করা দুটি মটর সাইকেল রেস দিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। সেদিন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দু’জন খুব বেপোরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে রাশেদ নামের ছেলেটি নানুপুর ওয়াপদা বেড়িবাঁধের ঘাসিপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে থাকা মেহগনী গাছের বিকট শব্দে সাথে ধাক্কা লাগে। এতে করে তার মুখের বেশিরভাগ অংশ থেতলে যায়, জিহ্বার টুকরা মাটিতে পড়ে যায়। এতে তার চেহারা ক্ষতবিক্ষত হয়ে লোমহর্ষক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে । উপস্থিত লোকজন সেদিন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও ভয় পেয়ে যায়। পরে অনেকে একত্রিত হয়ে তাকে ওই স্থান থকে চাঁদপুর সরকারী জেনারেল হাসপাতালে নিতে গেলে, পথিমধ্যে সে না ফেরার দেশে চলে যায়।

এসব দুর্ঘটনা সহ চাঁদপুরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শৃঙ্খলাপূর্ণ রাখতে চাঁদপুর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার গণমাধ্যমে মোটর সাইকেল চালকদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

সামান্য ভুলের জন্য রাশেদ ছাড়া আরো অনেক তরুণকেই এভাবে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে । যা কারোই কাম্য নয়।

এমন পরিস্থিতিতে চালকের সচেতনতা, চালক অল্পবয়সী হলে অভিভাবকের সচেতনতায় পারে চাঁদপুর পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেকাংশে কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। অংকুরই নষ্ট হবে না উঠতি বয়সী তরুণ সমাজের উজ্জ্বল ভবিষ্যত।

দেলোয়ার হোসাইন

নিউজ ডেস্ক ।। ০১:৫২ এএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৫, শুক্রবার

ডিএইচ