চাঁদপুরে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা

চাঁদপুরের দক্ষিণে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী থেকে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার এলাকা নৌ-সীমানা। এ সীমানার পদ্মা-মেঘনার চ্যানেল দিয়ে চাঁদপুরের ছোট-বড় প্রায় ৪০টি যাত্রীবাহী লঞ্চসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকশ লঞ্চে কমপক্ষে ২০ লাখ যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াত করেন। দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের কাছে দিন দিন এ নৌরুট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু চাঁদপুর নৌ-সীমানায় প্রতিবছর শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে প্রায়ই যাত্রীবাহী লঞ্চ, লাইটার জাহাজ ও মালবাহী ট্রলারসহ বিভিন্ন নৌযান জেগে ওঠা ও ডুবোচরে আটকা পড়ে। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে এ সমস্যা চললেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

চাঁদপুরের মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে রয়েছে প্রায় ৩৫টির বেশি চর। শীত এলেই চরের মধ্যে লঞ্চগুলো আটকা পড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। অথচ অপরিকল্পিতভাবে বিগত সময়ে চাঁদপুরের এসব বিঘ্ন সৃষ্টিকারী চরের বালি উত্তোলন না করে ডিজাইনবহির্ভূত স্থান থেকে নদীর বালি উত্তোলন করায় শহর রক্ষা বাঁধ হুমকিতে পড়েছে। এছাড়া জীববৈচিত্র্যেরও ক্ষতি হচ্ছে।

হাই স্পিড কোম্পানির চাঁদপুরে লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি বিপ্লব সরকার বলেন, নৌরুটগুলোতে নাব্য সংকট হলে সাধারণত লঞ্চের মাস্টার ও জাহাজগুলোর ক্যাপ্টেন বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ সওজ বিভাগকে অবহিত করেন। তারাই সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। এদিকে নদীতে বর্তমানে এত বাল্কহেড চলছে যে এই বাল্কহেডের ধাক্কায় প্রায়ই বাতিসহ এর যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। প্রতিমাসেই প্রায় ২০টি বয়া ও বিকন বাতি মেরামত করতে হচ্ছে।

চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, চাঁদপুর-ঢাকা, চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ নৌপথে বহু যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করছে। মতলবের ষাটনল থেকে আনন্দ বাজার, চাঁদপুর-হিজলা, চাঁদপুর-নন্দিরবাজার, চাঁদপুর-মাদারীপুর, চাঁদপুর-মাওয়াসহ বেশকিছু ছোট-ছোট শাখা নদী রয়েছে এই নৌপথে। শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশার কারণে অনেক সময় চরে লঞ্চ আটকা পড়ে। তিনি আরও বলেন, বয়া ও বিকন বাতিগুলো অনেক মূল্যবান। বিষয়টি নৌ সংরক্ষণ ও পরিবহণ (সিএনপি) বিভাগ দেখে। তারা প্রতিনিয়ত চর, ডুবোচর ও নৌপথ সার্ভে করে। আমি এখানে নতুন এসেছি। এখন পর্যন্ত চরে আটকা পড়া বা সমস্যা নিয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। তিনি বলেন, জেগে উঠা বা ডুবোচর কিংবা চ্যানেল ঠিক রাখার জন্য খনন কাজ তাদের প্রধান কার্যালয় নিয়ন্ত্রণ করেন।

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চাঁদপুর নৌ সীমানায় বর্তমানে বড় ধরনের কোনো চর জেগে উঠেনি। তবে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে একটি চর খনন করার জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সেই প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয় গ্রহণ করে তিনবার দরপত্র আহ্বানও করে।

তিনি জানান, এ প্রকল্পটি যখন নেওয়া হয় তখন ছিল ৬০০ মিটার চওড়া ও ৭ কিলোমিটার লম্বা । কিন্তু পরে সেই চরটি ১৪ কিলোমিটার লম্বা ও ২ কিলোমিটার চওড়া হয়ে যায়। এ নিয়ে তখন একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে চর খননের বাস্তবতা ভিজিট করা হয়। পরে ওই টেকনিক্যাল কমিটির রিপোর্টের আলোকে বাস্তবতা ও অর্থের ব্যাপকতার বিষয়টি মাথায় রেখে ড্রেজিং প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। পরে সাশ্রয়ী ওই অর্থ দিয়ে বর্তমানে চাঁদপুর সদরের হানারচরে ১৬শ মিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু করা হয়।

তিনি বলেন, বর্তমানে এ প্রকল্পটি চলমান রয়েছে। চরভৈরবীর চর খননের ব্যাপারে তিনি জানান, সরকার যদি এ ব্যাপারে বড় ধরনের কোনো প্রকল্প নেয় তখন চর ভৈরবীর ওই চর খনন করা সম্ভব হবে।

চাঁদপুর করেসপন্ডেট, ১৭ অক্টোবর ২০২২

Share