হাইমচর

চাঁদপুরের মেঘনার ভাঙ্গনে হারিয়ে যাচ্ছে ঈশাণবালা

রোববারচাঁদপুরের করলা, মরিচ ও মৎস্য উৎপাদনের ভান্ডার ঈশাণবালায় মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গনে ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী করলাদীপ। হাইমচর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ঈশাণবালা বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বসতঘর ও মানুষের শেষ চিহ্ন কবরস্থান মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গনে বিলীন হতে চলেছে।

গত এক সপ্তাহের ভাঙ্গনের ফলে প্রায় শতাধিক বসত-ভিটা, কয়েকটি ব্রীজ-কালবার্টসহ ঈশানবালা বাজারের প্রায় ২০টি দোকান নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। হারিয়ে যাচ্ছে বাবা মায়ের ভিটে মাটি কবরস্থান ও কবরের লাশ।

তীব্র ভাঙ্গনে হুমকির মুখে রয়েছে ঈশানবালা বাজার, উচ্চ বিদ্যালয়, চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা, একাধীক মসজিদ ও ঈশানবালায় অবস্থিত বাহেরচর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র। ভাঙ্গন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প প্রস্তাব করলেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিম পারে শরিয়তপুর জেলার সীমান্ত বর্তী নীলকমল ইউনিয়নের ঈশানবালায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। এখানে উৎপাদিত করলা, মরিচ ও মাছ রাজধানীসহ দেশের বিশাল অংশের চাহিদা পূরণ করে। ঈশানবালার করলা উৎপাদন-বিপনন দেশের মধ্যে বিখ্যাত করলাদ্বীপ। এ’এলাকায় গত কয়েক বছরে ভাঙ্গনের ফলে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে ঈশানবালা এলাকা। চলতি বর্ষায় ভাঙ্গনের তীব্রতা দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এলাকায় মানববন্ধন, মিছিল সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয়রা।

ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তার নির্দেশনায় ও হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারীর সহায়তায় স্থানীয় চাঁদপুর পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিক উল্যাহর নেতৃত্বে একটি টিম ভাঙ্গন কবলিত ঈশানবালা এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

স্থানীয় ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশ সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন সরদার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, আমাদের ভিটে মাটি সব হারিয়ে যাচ্ছে নদী গর্ভে। বাবা মায়ের কবর খানাও আর জিয়ারতের সুযোগ রইলো না। ভাঙ্গন প্রতিরোধে এখনই যদি পদক্ষেপ না নেওয়া হয় ঈশানবালা ৩০ হাজার মানুষ ভিটে মাটি হারা হবে।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার মিজানুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ঈশানবালা হচ্ছে একটি বন্দর। কৃষি উৎপাদনের এবং বিপননের সাথে স্থানীয় কয়েক হাজার লোক কৃষির সাথে জড়িত রয়েছে। ঈশানবালা এলাকা রক্ষা না পেলে করলাদীপ নামের অস্তিত্ব থাকবে না। এতে হুমকির মুখে পড়বে শরিয়তপুর জেলার সখিপুর ও ঘোষের হাট থানা এলাকা।

ঈশানবালা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক বি এম মুন্নাফ নদী ভাঙ্গন থেকে কৃষি ও মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ ঈশানবালা রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বর্তমানে ব্যাপক ভাঙ্গনের ফলে ঈশানবালা উচ্চ বিদ্যালয়টি নদী ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে।

হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. নূর হোসেন পাটোয়ারী চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ঈশানবালাকে রক্ষায় স্থানীয় এমপি ডা. দীপু মনির প্রচেষ্টায় ঈশানবালায় আর যাতে একটি মানুষও ঘর ছাড়া না হয় সেই লক্ষ্যে ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে পাউবো কারিগরী টিম প্রকল্প সম্ভাব্যতা যাচাই করণে এলাকা পরিদর্শন করেছেন। খুব সহাসাই ভাঙ্গন প্রতিরোধ প্রকল্প ডিপিপি অনুমোদন হবে, এছাড়া জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন ঠেকাতে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত ভাবে নদী ভাঙ্গন রোধে কাজ শুরু হবে।

চাঁদপুর পাউবো হাইমচর উপজেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত শাখা কর্মকর্তা (এসও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, বর্তমানে ঈশানবালায় ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে নেয়া প্রকল্প ডিপিপি অনুমোদন সাপেক্ষে বাস্তবায়ন হবে। তবে জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য একটি সাময়িক বা অস্থায়ী প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আশাকরি সহসাই কাজ শুরু করতে পারবো।

 

 | আপডেট: ১০:০০ অপরাহ্ণ, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫

Share