Home / জাতীয় / রাজনীতি / খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু
khaleda-zia
ফাইল ছবি : চাঁদপুর টাইমস

খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে আপিলের ওপর আজ বুধবার দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে এই শুনানি হচ্ছে। দ্বিতীয় দিনের শুরুতে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানি শুরু করেন।

গতকাল মঙ্গলবারের মতো আজও আদালতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত রয়েছেন।

একদল আইনজীবীর হইচইয়ের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে আপিলের ওপর গতকাল প্রথম দিনের শুনানি হয়।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে। তাঁর জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক আপিল করে, যার ওপর গতকাল শুনানি শুরু হয়। গত ১৯ মার্চ আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন ওই আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেন। এ ছাড়া আপিল শুনানির জন্য ৮ মে দিন ধার্য করেন।

প্রথম দিনের শুনানি
গতকালের শুনানির শুরুতে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালত পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। এই স্বল্প মেয়াদে সাজা জামিনের যুক্তি হতে পারে না। অপর্যাপ্ত সাজা উল্লেখ করে সাজা বৃদ্ধি চেয়ে এই আবেদন করা হয়েছে। স্বল্প মেয়াদে সাজার কোনো সংজ্ঞা নেই—এটা উল্লেখ করে শুনানিতে আপিল বিভাগের এর আগে দেওয়া তিনটি সিদ্ধান্ত তুলে ধরে খুরশীদ আলম খান বলেন, জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় নেননি। যেসব যুক্তিতে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন, তা যুক্তিযুক্ত নয়।

আদালত বলেন, বয়স ও অসুস্থতা জামিনের কোনো কারণ হতে পারে কি না? খুরশীদ আলম খান ‘না’ সূচক জবাব দিয়ে বলেন, বয়স জামিনের যুক্তি হতে পারে না। বিচার-পূর্ব পর্যায়ে এটি যুক্তি হতে পারে। তবে দণ্ডিত হওয়ার পরে আপিল বিচারাধীন থাকা পর্যায়ে নয়।

এরপর শুনানিতে অংশ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘এই মামলায় হাইকোর্টে আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত হয়েছে। আগামীকাল শুনানি করা যাবে। আপিলে তিনি খালাস পাবেন। সেখানে আমাদের আপত্তি থাকবে না। বিচারিক আদালতের রায়ে এসেছে, তিনি (খালেদা জিয়া) পুরো বিচারপ্রক্রিয়া কীভাবে বিলম্বিত করেছেন। ৬৭টি তারিখের মধ্যে ৮টি তারিখে তিনি বিচারিক আদালতে উপস্থিত হয়েছেন।’

এ সময় দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘উনি রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল। আদালত জামিন স্থগিত করে আপিল করার অনুমতি দিয়েছেন। উনি কী পড়ছেন, বুঝতে পারছি না।’ এ সময় বিএনপি-সমর্থক আইনজীবীরা তাঁর বক্তব্য সমর্থন করেন। হইচই হয়। তখন এজলাসের ঘড়িতে ১২টা ১০ মিনিট। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রেকর্ড থেকে পড়ছি।’

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে বলেন, বয়স ও শারীরিক অবস্থা জামিনের যুক্তি হতে পারে না। রাষ্ট্রপ্রধান অপরাধ করলে আদালত তা কঠোরভাবে দেখেন, এমন নজির আছে। রাষ্ট্রপ্রধান অনুকম্পা পেতে পারেন না।

এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল ৬৬ বছর বয়স্ক দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের ২৪ বছর কারাদণ্ড, ৭২ বছর বয়স্ক ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের দুর্নীতির দায়ে ১২ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার কথা উল্লেখ করেন। এইচ এম এরশাদের নাম উল্লেখ না করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমাদের এখানেও জনতা টাওয়ার দুর্নীতির মামলায় একজন রাষ্ট্রপ্রধানের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়, তিনিও সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করেন।’

‘এই রকম ফেয়ার ট্রায়াল দুনিয়ার কোথাও হয়নি’ উল্লেখ করে মাহবুবে আলম বিচারিক আদালতের রায় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই মামলায় বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে পাঁচজন আইনজীবী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। কোনো ফৌজদারি মামলায় পাঁচজনকে সুযোগ দেওয়ার নজির নেই। একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বিচারিক আদালতের বিচার মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলতে থাকেন। খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এ সময় দাঁড়িয়ে বলেন, এটা জামিন আবেদনের শুনানি। এখানে মামলার বিষয়বস্তু আসতে পারে না। সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা চিৎকার করে ওঠেন।

শুনানির এই পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। তাঁর এ মামলায় শুনানির এখতিয়ার নেই।

এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মাহবুবে আলম বলেন, অবশ্যই শুনানির সুযোগ আছে, কেননা রাষ্ট্রের আপিল রয়েছে। এ সময় হইচই শুরু হয়ে যায়।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে কথা বলবেন না। এ জে মোহাম্মদ আলী এ সময় আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করা ও অযোগ্য করার জন্য এটা করা হচ্ছে।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা দেখছি নিম্ন আদালতে বিচার শেষ হতে আট-নয় বছর লেগেছে।’ জবাবে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, এর মধ্যে সাত বছরই হাইকোর্টে মামলা স্থগিত ছিল। পরে বেলা সোয়া একটার দিকে আদালত বুধবার শুনানির দিন ধার্য করেন।

Leave a Reply