Home / উপজেলা সংবাদ / চাঁদপুর সদর / কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ : দালালদের পোয়াবারো
কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ : দালালদের পোয়াবারো

কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ : দালালদের পোয়াবারো

চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যার সদর হাসপাতাল। সপাতালটিতে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে কেউ না কেউ এগিয়ে আসছে। প্রথম দর্শনে মনে হবে যেনো আপনার মহা-পরিচিতদের মধ্যে কেউ। আসলে তা নয়, এরা বিভিন্ন প্রকৃতির দালাল। কেউ রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আপনার পকেট কাটবে, কেউবা রেফারকৃত রোগীদের ঢাকায় যাবার গাড়ি দরদাম করে টুপাইস কামাবে, কেউবা রিকশা নিয়ে বসে আছে আপনাকে কখন আপনারই অজান্তে নিয়ে যাবে ওই রিকশাওয়ালার কমিশনপ্রাপ্ত ডাক্তারের কাছে।

কেউবা বুঝাবে চাঁদপুর শহর হচ্ছে ডাক্তারের শহর। এ শহরে আপনি সরকারি হাসপাতালে এসে প্রকৃত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন কেনো, চলুন ভালো ডাক্তারের কাছে। আপনি সম্মতি প্রকাশ করবেন, সাথে সাথেই কেল্লাফতে। নিয়ে যাবে কোনো ডাক্তাররূপী কসাইয়ের কাছে। ওই কসাই নিজে তো খাবেনই, ওই দালালের জন্যেও একটা নির্দিষ্ট ভাগ রাখবেন।

আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, চাঁদপুর সরকারি এ হাসপাতালটিতে জরুরি বিভাগের সামনেই লেখা রয়েছে ‘‘দালালচক্র হতে সাবধান, রশিদ ছাড়া টাকার লেনদেন করিবেন না।’’ এ বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে আপনাকে। কারণ যদি এ হাসপাতালে দালাল নাইবা থাকতো, তাহলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোন্ গরজে ‘সাধুবাক্য’টি লিখে রাখলো!

তবে অনেক সময় জরুরি রোগীদের এসব লেখা পড়ে সচেতন হবার সুযোগ থাকে না। একজন মানুষ যখন মুমূর্ষ, মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে তখন তাদের কাছের নিকটাত্মীয়রা হাতের কাছে যাকে পাবেন, যারাই উৎসুক হয়ে ‘সহায়তা’ করতে চাইবেন চিন্তা-ভাবনা না করেই তারা সেদিকে পা বাড়ান। আর সেই সুযোগটাই গ্রহণ করে দালালরা।

এসব দালাল রয়েছে আপনার আশেপাশেই। জরুরি বিভাগেও এদের বসবাস রয়েছে। অর্থাৎ ‘সর্ষের ভিতরেই ভূত’। কথায় আছে, যে সরিষা দিয়ে ভূত তাড়াবে, সেই সরিষার ভেতরেই ভূত থাকলে, ভূত কি অতো সহজে নামানো যায়! জরুরি বিভাগে যারা কাজ করে দু’একজন ছাড়া অধিকাংশেরই পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিজেদের বড় বড় ডায়াগনস্টিক ব্যবসা নামে বেনামে রয়েছে। জরুরি বিভাগে কোনো রোগী এলেই তারা একটি স্লিপ ধরিয়ে ওইসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেবেন আপনার ‘আপনজনের’ মতো ‘আন্তরিকতা’ নিয়ে। আর সেই মহা‘আন্তরিকতা’ই হবে আপনার ‘শাপে বর’। যখন বিষয়টি বুঝবেন, তখন আর ফেরার সময় নেই। আপনি হয়ে গেলেন তাদর ‘মক্কেল’।

সরেজমিনে দীর্ঘ সময় ওই হাসপাতালে অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে এসব বিষয় জানা গেছে। হাসপাতালেই সব বিভাগেই এসব দালালের পদচারণা। শকুনের দৃষ্টি নিয়ে এরা আছে আপনার আশেপাশেই। আর এদের সহযোগিতা করছে কিছু কিছু ‘ডাক্তার’। তবে এদেরও একটা বক্তব্য আছে। সেই বক্তব্যটাও জানা যায়, যখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় এসব অমানবিক কর্ম কোনো তারা করে?

তাদের সোজাসাফটা জবাব, পেটের টানে। সংসারের খরচ মেটাতে। এখন কী জবাব দেবেন আপনি, প্রশ্নটা আপনার কাছেই থাকলো। এখানেই শেষ নয়, তবে আরো কথা আছে সেটা জানা যাবে পরবর্তী পর্বে।

 

| আপডেট: রাহ্ণ, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫, সোমবার

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫