কাউকে হেয় করতে মানুষ এত নিচে নামতে পারে তা জানা ছিলো না : পরী মণি

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও কিছু অনলাইন গণমাধ্যমে ঢালিউডের নায়িকা পরী মণির সাথে কথিত স্বামী ও একটি কাবিন নামার ছবি ও খবর প্রকাশের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পরী মণি। তিনি বলেন, ‘এই ছবিতে আমি আমাকে দেখে নিজেই অবাক হয়েছি। আমার নিজেরই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল এই মানুষটি আমি। কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করতে মানুষ এত নিচে নামতে পারে আমার জানা ছিল না। আমি নিশ্চিত করতে চাই। পরের ছবির মানুষটি আমি না। আর কাবিন নামা তো যে কেউই বানাতে পারে। আর ফেসবুকের ছবিগুলো বানানো হয়েছে ফটোশপে।’

পরী মণি আরো বলেন, ‘কারা আমার পেছনে এভাবে লেগেছে তাদের আমি খুঁজে বের করব। আমার পক্ষে তা অসম্ভব হবে না। হয়তো একটু সময় লাগবে।’

গত রোববার সকাল থেকেই সামাজিক মাধ্যম সরগরম ছিল ঢালিউড নায়িকা পরী মণির ছবিকাণ্ড নিয়ে। প্রথমে অনিক আব্রাহাম নামে একজন ফেসবুকার পরী মণির কিছু ছবি শেয়ার করে দাবি করেন, পরী তাঁর বন্ধু ইসমাইলের স্ত্রী।

অনিক ছবিগুলো শেয়ার করে লেখেন, ‘আমার বন্ধু ইসমাইল আর তার স্ত্রী স্মৃতিমণি যে আজ বাংলা চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরী মণি একসময় ভোলা সদরেই থাকত তার জামাইবাড়িতে। তারপর তার নেশা গেল অর্থ আর লোভ-লালসার দিকে। যার জন্য আমার সহজ-সরল বন্ধুকে ত্যাগ করতেও দ্বিধাবোধ করল না। যাই হোক, ছবিগুলো দেখে পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল। তাই সবার সাথে একটু শেয়ার করলাম।’

এই স্ট্যাটাসটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর কিছু অনলাইন পত্রিকা বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশ করে। এরপর রোববার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে পরী মণি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।

পরী মণি লেখেন, ‘দুঃখ পেলেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, ভাবখানা এমন যে আমার সেক্স ভিডিও পেয়ে গেছেন! আরে ভাই, এ রকম ছবি আমার হাজারজনের সাথে আছে। তার মানে এই না যে সেই হাজারজন আমার জামাই লাগে। আর কী এমন ছবিখানা পাইছেন যেইখানা নিয়া এত্তো লাফালাফি শুরু কইরা দিছেন? ছবিতে কি আমি বউ সেজে বাসরঘরে বসে আছি? না আমি নেংটা হয়ে দাঁড়ায়া আছি, কোনটা?

‘এ রকম ছবি তো আপনারা যাঁরা আজ এই নিউজ করছেন, আপনাদের সাথেও আছে। যেটা এই ছবির তুলনায় অনেক বেশি কাছাকাছি। তাহলে আপনারা সবগুলাই আমার জামাই।’- যোগ করেন ক্ষুব্ধ পরী।

এই স্ট্যাটাস দেওয়ার ঘণ্টাখানেক পর অবশ্য পরী মণি সেটি মুছে দেন। কিন্তু ততক্ষণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে যায় তাঁর এই স্ট্যাটাস। অনেকেই তাঁর এই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট পোস্ট করে একজন শিল্পীর সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এদিকে এই স্ট্যাটাসের রেশ কাটতে না কাটতেই পরী মণি আবার সবাইকে চমকে দেন অচেনা তিনজনের সঙ্গে তিনটি ঘনিষ্ঠ সেলফি প্রকাশ করে। যার ক্যাপশনে তিনি লিখেন, ‘আজকের কুইজ :  বলুন তো আমার পাশের এই ছেলেগুলোর সাথে আমার কী সম্পর্ক? হাজব্যান্ড রাইট??? পিকগুলো (ছবিগুলো) সেভ করে রাখেন। এগুলোও একদিন পুরনো হয়ে যাবে, তখন এ রকম নিউজে কাজে দেবে খুব…।’

রবিবার বিকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পরী মনি এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান ফেসবুকে।

রাত সাড়ে ৯টার দিকে আবার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে শাকিল রিয়াজ নামে  একজন ফেসবুকারের পোস্ট। তিনিও আরেক যুবকের সাথে পরীমণির ছবি প্রমাণ করে দাবি করেন পরীমণি ওই যুবকের স্ত্রী ও তাঁর ভাবি। ছবিগুলোর মধ্যে কয়েকটি ছবি ছিল ঘনিষ্ঠ ও চুম্বনরত।

শাকিল রিয়াজের দেওয়া ফেসবুকের লেখাটি এমন, ‘একটু আগে পরী মণি ভাবিকে নিয়ে একটা পোস্ট দেখলাম, যেখানে ভাবিকে নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর স্ক্যান্ডাল ছড়ানো হয়েছে। আসল সত্য হয়তো অনেকেই জানেন না।’

‘ভাবির (পরী মণির) আসল নাম সামসুর নাহার স্মৃতি। ভাবি আমাদের খুব কাছের বড় ভাইয়ের বৌ। ভাইয়ের নাম সৌরভ কবীর। ভাবিকে নিয়ে এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর কারণে আমি আর মুখ বুঁজে থাকতে পারলাম না। আমার মনে হলো এখনই সময়, আসল সত্যটা সবার সামনে তুলে ধরার। ভাই ও ভাবির বিয়ে হয় ২৮ এপ্রিল ২০১২ সালে। তিন বছর প্রেম করার পর তারা নিজেদের ইচ্ছেয় বিয়ে করেন এবং পরে সেটা দুই পরিবার থেকেই মেনে নেয়। ভাইয়ের বাসা যশোরের কেশবপুরে।’

শাকিল রিয়াজ আরো জানান, ‘ভাই এবং ভাবি নিজেদের পেশার জগৎ আলাদা। ভাই পেশায় একজন প্রফেশনাল ফুটবলার। ভাই এবং ভাইয়ের পরিবারের সম্মতিতেই ভাবি মিডিয়া জগতে প্রবেশ করেন। ভাই ও ভাবির নিজেদের ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে তাঁদের এ সম্পর্কের কথা আড়াল করে রেখেছেন। তাঁরা এখনো একসঙ্গে বিবাহিত জীবনযাপন করছেন। ’

এরপর তিনি দাবি করেন বিষয়টি তিনি প্রমাণ করতে পারবেন। যে কেউ তাঁর কাছে প্রমাণ চাইতে পারেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে তাঁর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফেরদৌস কবীর সৌরভের ফোন নম্বর দেন এবং পরী ও সৌরভের আরো কিছু ঘনিষ্ঠ ছবি প্রতিবেদকের ইনবক্সে পাঠিয়ে দেন।

এরপর সৌরভের নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিয়ের তো কোনো প্রমাণ লাগে না। তবে এই পরিস্থিতিতে তিনি প্রমাণ করতে তৈরি আছেন। কারণ তাঁর কাছে বিয়ের কাবিননামা আছে।

কিছুক্ষণ পর শাকিল রিয়াজের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিবেদকের ফেসবুকে কাবিননামা পাঠানো হয়।

এরপর প্রতিবেদককে আবার ফোন দেন সৌরভ। এরপর তিনি বলে যান, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কুমারী গ্রামে পরীর দাদা বাড়ি। সেখানেই পরীকে প্রথম দেখেন তিনি।  ২০০৯ সালের কথা এটি।

সৌরভ সেই সময় ফুটবল খেলতেন। পরে খুলনা ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়েও খেলেছেন তিনি। একসময় জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় আসেন তিনি। সেই সময় দীর্ঘ তিন বছর প্রেমের পর ২০১২ সালের ২৮ এপ্রিল বিয়ে করেন তাঁরা। যশোরের কেশবপুরের একটি কাজী অফিসে তাঁদের বিয়ে হয়।

বিয়ের পর সৌরভ ঢাকায় আসেন। এর কিছুদিন পরে ঢাকায় আসেন পরীও। তবে সেই সময় তাঁরা বিয়ের কথা কাউকে জানাতে পারেননি। পরে সৌরভের পরিবার বিয়েতে সায় দেয়।

এটুকু বলে সৌরভ পরী ফোন করেছে বলে ফোন কেটে দেন। রাখার সময় বলেন, ‘এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত বলব আর পরীর সঙ্গে ফোনে আপনার কথা বলিয়ে দেব।’

এরপর রাত সাড়ে ১২টায় প্রতিবেদক আবার ফোন করলে, বিয়ে এবং কাবিননামার তথ্যটি প্রকাশ না করতে সৌরভ কাকুতি মিনতি করতে থাকেন। বলেন, ‘ভাই, আমি যা বলছি একফোঁটাও মিথ্যা না।

তবে আপনি এটা ছাপলে ও আমার সঙ্গে থাকবে না। আমাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে।’

এরপর আবার বলেন, ‘আমি তো আরেকজনকেও বলেছি। ভাই উনাকেও বলেন এটা না দেখাতে। ’

সম্প্রতি পরী মণি অভিনীত ‘পুড়ে যায় মন’ চলচ্চিত্রটি গত ২৯ জানুয়ারি সারা দেশে মুক্তি পেয়েছে। অপূর্ব রানা পরিচালিত এ চলচ্চিত্রে পরীর বিপরীতে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক।

Share