কচুয়ায় ৪৮ বছর পর খনন করা হলো ক্ষিরাই নদী

চাঁদপুরের কচুয়া ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা অংশের ক্ষিরাই নদী দীর্ঘ ৪৮ বছর পর নতুন করে খনন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সাড়ে ৯ কিলোমিটার নদী খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এর ফলে কয়েক হাজার কৃষক সেচ সুবিধার আওতায় এসেছেন। ১৯৭৪ সালের পর করা এবারের খননে চলতি মাসের শেষের দিকে নদীর মতলব দক্ষিণ উপজেলা অংশে আরও ১১ কিলোমিটার কাজ শুরু হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এর আওতায় সমগ্র বাংলাদেশে খাল, জলাশয় খননের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ খননের ফলে দেশের কৃষি ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। এসব পুনঃখননের মাধ্যমে ছোট নদী ও খালে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়বে এবং ইরিগেশনের সময় কৃষি জমিতে সেচ দেওয়া সহজ হবে। একই সঙ্গে ভূ-গর্ভস্থ পানির পর্যাপ্ত ব্যবহারের পাশাপাশি বাস্তুসংস্থানের পুনঃজীবন সম্ভব হবে। এর ফলে পরিবেশের ওপর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এই প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২০২১ এবং ২০২১-২০২২ অর্থ বছর দুইবারে কচুয়া উপজেলার সাচার বড় ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু করে কচুয়া ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা জামতলা পর্যন্ত নদী খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে বরাদ্দ ছিল ৬ কোটি টাকা।

কচুয়া সাচার ইউনিয়নের সাউপাড়া গ্রামের কৃষক ফজলু মিয়া জানান, ১৯৭৪ সালে এই নদী খনন হয়েছিল। এরপর আর খনন হয়নি। এখন আবার দুই বারে খনন করা হয়েছে। এতে নদী গভীর হয়েছে। বড় বড় নৌকা আসতে পারবে। আমরা ধান, পাট, ভুট্টাসহ মৌসুমি ফসল করা সম্ভব হবে। পানির কোনো সংকট থাকবে না।

সুয়ারুল দীঘির পাড় এলাকার কৃষক আবু ইউসুফ প্রধান জানান, নদী কেটে গভীর করায় পানি বেড়েছে। মাছের বিচরণ বেড়েছে। ফসলের জন্যও অনেক ভালো হবে।

একই এলাকার কৃষক আব্দুল হক বেপারী ও দুলাল মিয়া জানান, নদীতে চর পড়েছিল। এখন প্রায় ১২-১৫ হাত গভীর হয়েছে। দুই পাড়ের গ্রামগুলোর সব কৃষকই এখন সুবিধা পাবে। পানির কোনো সংকট হবে না। বর্ষা শেষে পানি দ্রুত নেমে যাবে।

তারা আরও জানান, শুধুমাত্র আমাদেরই গ্রাম নয়, পাশবর্তী উদান, চিনাইয়া, আটমমুড়, টমলপুর, ভটিচিনিয়া, মধুপুর ও দীঘিল গাঁও গ্রামের হাজার হাজার কৃষক নদী খননের সুবিধা ভোগ করবেন।

সম্প্রতি ক্ষিরাই নদী খননের বাস্তব চিত্র পরিদর্শন করেছন কুচয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী খননের জন্য যে ডিজাইন করেছে সেটি ঠিক আছে। কাজের গুনগত মান অনেক ভালো। তবে কাজ করতে গিয়ে স্থানীয়দের পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে ডিজাইন ঠিক রাখা যায় না। তবে তাদের কাজের পরিমাণের ওপর বিল পাবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, কচুয়া অংশে ক্ষিরাই নদী খনন কাজ শেষ হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে কচুয়া জামতলা থেকে মতলব অংশের কাজ শুরু হবে। জামতলা থেকে মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়েরগাঁও পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার খনন কাজ ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ এর মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। তবে খুব শীগগীরই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করবে এবং তাদের সেই প্রস্তুতি আছে। এই ১১ কিলোমিটার নদী খনন কাজের বরাদ্দ প্রায় ১০ কোটি টাকা।

স্টাফ করেসপন্ডেট, ১৬ নভেম্বর ২০২২

Share