ইসলাম

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রেম-পরকীয়া ও তার শাস্তি!

ভালোবাসার জন্য মানুষ অনেক কিছুই করে। তাই বলে সন্তানকে হত্যা করাও স্বাভাবিক? হ্যাঁ আজকাল কিছু লম্পট চরিত্রহীন মানুষ এমন নৃসংশ কাজও শুরু করেছে। ৮ সেপ্টেম্বর ফাহিম নামের এক ব্যক্তি নাগিনা বেগমের সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত হন। নাগিনার ছেলে তিন সন্তান। তাকে পেতে ফাহিম ওই তিন সন্তানকেই হত্যা করে।

এটা আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের ঘটনা। তাই বলে ভাবার কারণ নেই বাংলাদেশে এসব বিরল। বরং এ দেশেও এমনটা ঘটছে অহরহ।

পত্রিকার পাতা খুলতেই চোখে পড়ে পরকীয়ার খবর। গুগলে সার্চ করলেই বেড়িয়ে আসে পরকীয়া প্রেমের নিশংস সব ঘটনা। যার ফলে নিষ্পাপ শিশুসন্তানকে হারাতে হচ্ছে মায়ের আদর। পরকীয়ার পথে সন্তান বাধা হওয়ায় সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করছে। কখনো নিজ সন্তানকে টুকরো টুকরো করে ফ্রিজে বস্তাবন্দী করে রাখছে। স্নেহময়ী মাকে রাক্ষসীতে পরিণত করছে পরকীয়। বাবাকে পশুতে পরিণত করছে। আর যারা বিয়ে করেনি তারাও অবলীলায় লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে পরকীয় প্রেমে। এসবের ফলে বাড়ছে স্বামী-স্ত্রীতে অসন্তুষ্টি, পারিবারিক অশান্তি। ভেঙে যাচ্ছে সংসার। কথিত অভিজাত পরিবারগুলোতে পরকীয়ার কারণে পুরুষের চেয়ে মহিলারাই তাদের স্বামীকে তালাক দিচ্ছে বেশি। উদ্বেগজনক হলেও থেমে নেই পরকীয়া। ক্রমেই ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হচ্ছে। সহজলভ্য মুঠোফোন, অনলাইন চ্যাটিং, রাজধানীর পার্ক বা উদ্যানগুলোর নিরাপত্তা, ভারতীয় চ্যানেলের অবাধ অনুপ্রবেশ যেন পরকীয়াকে একধাপ এগিয়ে দিয়েছে।

ইসলাম এটি কঠোরভাবে দমন করার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গোটা সমাজের অশান্তির কারণ হওয়ায় বিবাহিত পুরুষ কিংবা নারী যদি ব্যভিচার তথা পরকীয়ায় লিপ্ত হয়, তাহলে ইসলাম মৃত্যুদ- ঘোষণা করে কঠোরহস্তে তা মোকাবেলা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেহেতু এর ক্ষতি ভয়ঙ্কর, মারাত্মক ও তীব্র, তাই ইসলাম এর জন্য কঠোর শাস্তি ঘোষণা করেছে।

বর্তমানে পরকীয়ার বেশির ভাগ সূত্র হচ্ছে ফোনালাপ কিংবা অনলাইন চ্যাটিং থেকে। ইসলাম এ বিষয়ে নারী পুরুষকে সতর্ক করেছেন। নারীদের কথার আওয়াজকেও সতরের অন্তর্ভুক্ত করে অপ্রয়োজনে পরপুরুষের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছে। একান্ত প্রয়োজনে কথা বলতে হলেও সুরা আহযাবের ৩২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। যাতে করে নারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোনো পুরুষ আকর্ষণবোধ না করেন।

শুধু নারীদেরই নয়, বরং সূরা নূরের ৩০ নম্বর আয়াতে প্রথমে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদের তাদের দৃষ্টি সংযত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। আবার ৩১ নম্বর আয়াতে মহিলাদেরকে তাদের দৃষ্টি সংযত রাখার পাশাপাশি তাদের গোপন শোভা অনাবৃত করতে নিষেধ করা হয়েছে। অপাত্রে সৌন্দর্য প্রদর্শনকে হারাম করে সবটুকু সৌন্দর্য স্বামীর জন্য নিবেদনে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কারণ, স্বামী তার স্ত্রীর সৌন্দর্যে মোহিত হলে সংসারের শান্তিই বাড়বে। পক্ষান্তরে স্ত্রীর সৌন্দর্য দিয়ে অন্যকে মোহিত করার পথ অবারিত করলে তা কেবল বিপদই ডেকে আনবে।

পুরুষ-মহিলা সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। হজরত সাহল ইবনে সাদ রা: থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবো।’ (বুখারি)

সূরা বনি ইসরাইলের ৩২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না।’ কাছেও যেও না মানে কী? যে জিনিস মানুষকে ব্যভিচারের নিকটবর্তী করে দেয় তার কাছে যেতেই নিষেধ করা হয়েছে। যেসব কাজ করলে মানুষ ব্যভিচারে ধাবিত হয় সেসব কাজ করতেও নিষেধ করা হয়েছে। পরকীয়ার সূত্রপাত যদি ফোনালাপে হয় তাহলে সূরা বনি ইসরাইলের ৩২ নম্বর আয়াত এই ফোনালাপকেও হারাম করেছে।

কখনো দেখা যায় দেবরের সাথে জমে ওঠে পরকীয়া। ইসলাম দেবরের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করার লাগামকেও টেনে ধরেছে। হজরত উকবা ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেও না।’ এক আনসার সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী? নবীজি সা. বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য।’ (বুখারি, মুসলিম)

হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. ফতহুল বারিতে লিখেছেন, ‘এখানে মৃত্যুর সমতুল্যর অর্থ হলো হারাম।’ আর ইসলামে এসবের শাস্তি ভয়াবহ। এসবের শাস্তিস্বরূপ রজম ও দোররার নির্দেশ এসেছে হাদিসে। যাতে কোনো নারী পুরুষ যেন এধরনের কাজ না করে।

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১২: ৪০ এ .এম ২৭মার্চ,২০১৮মঙ্গলবার
এ.এস

Share