সারাদেশ

আন্তর্জাতিক পানি দিবস আজ

আন্তর্জাতিক পানি দিবস আজ । মানব শরীরের গড়ে ৫০ থেকে ৬০% হলো পানি। শিশুদের শরীরে সবচেয়ে বেশি পানি থাকে। নবজাতকদের শরীরের ৭৮ % পানি থাকে। প্রতিদিন মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনে পানি দরকার হয়। বেশিরভাগ লোকের দৈনিক চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজন ৭ দশমিক ৫ লিটার পানি। মৌলিক স্বাস্থ্য চাহিদা ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য চাহিদা ও বিশুদ্ধ খাদ্য পানীয়ের জন্য প্রতিজনের ২০ লিটারের মতো পানি প্রয়োজন হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে ৭৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানি পানীয় হিসেবে পান না। ২৪৮ কোটি মানুষ সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন-ব্যবস্থার আওতায় নেই। বাংলাদেশে অসংখ্য মানুষ বিশুদ্ধ পানির আওতায় নেই। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে, সুষ্ঠু পয়:নিষ্কাশনের অভাবে,ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত না ধোয়ার কারণে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগে বাংলাদেশে ৪৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এদের বেশিরভাগ মারা যাচ্ছে মূলত : আর্সেনিকের কারণে। দেশে ৩৭% মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে। বাকি শতকরা ৬৩ % মানুষ অনিরাপদ পানি ব্যবহার করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে পানির কিছু সমস্যা রয়েছে। কিছু জায়গায় পানি নেই, কিছু জায়গায় পানি দূষণ সমস্যা রয়েছে। সেখানে গভীর নলকূপ বসিয়ে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিছু পুকুর হাইজেনিক অবস্থায় রাখার চেষ্টা করা হলেও তা পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না। এখন নতুন যত স্কুল হচ্ছে সেখানে নিরাপদ খাবার পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করা হচ্ছে।

এগুলো মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানির অধিক ব্যবহার না করে বিকল্প সন্ধান করতে হবে। কিছু জায়গায় সোলার ব্যবহার করে ডিপটিউবওয়েল চালানো হচ্ছে। এগুলো বেশির ভাগই ফসলি জমিতে সেচ কাজে লাগছে। তবে এ সমস্যা নিরসনে সবচেয়ে বড় বাধা আমাদের সমন্বয়হীনতা। একটি কমিশন গঠন হতে পারে। এই কমিশন দেখভাল করবে, জনশুনানি নেবে ও সচেতনতা বাড়াতে কাজ করবে।

ভিলেজ এডুকেশন রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব হোসেন বলেন, ‘পানি নিয়ে সাতটিরও বেশি দেশে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। পঞ্চাশটির বেশি দেশে পানিবিষয়ক বিভিন্ন সেমিনারেও অংশগ্রহণ করেছি। বর্তমানে আমাদের দেশে সুপেয় পানির স্বল্পতায় সেই কথাটিই মনে পড়ছে সমুদ্রে চারদিকে পানি কিন্তু পানযোগ্য পানি নেই।’

আমরা এখনই বুঝতে পারছি, পানি নেই। আমরা বার বার টেকসই উন্নয়নের কথা বলি। মানুষের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। ওয়াসা গ্রাউন্ড লেভেল থেকে পানি তুলে ব্যবহার করছে। অথচ ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ২০০ বছর আগে ঢাকায় ‘সারফেস ওয়াটার’ ব্যবহারে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল। গত শতকের ষাটের দশকে এসে হঠাৎ করেই ‘গ্রাউন্ড ওয়াটার’ ব্যবহার শুরু হলো। এ যেন আমাদের নেশাগ্রস্ত করেছে।

ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অ্যান্ড রোরাল পোর এর পরিচালক মোহাম্মদ জোবায়ের হাসান বলেন, ‘কতটুকু নিরাপদ পানি আমরা পান করছি! গ্রাম-শহর, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে তা-ই বা কতটুকু নিরাপদ? এমনকি আমরা অফিসে বসে মিনারেল ওয়াটার হিসেবে যা পান করছি, সেই পানির জারেও শ্যাওলা পাওয়া যাচ্ছে।’

এটা নিয়ে ভাবা জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা যার যার অবস্থান থেকে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করলেই এ সমস্যা সমাধান হবে। ঢাকা ওয়াসা, চট্টগ্রাম ওয়াসা, রাজশাহী ওয়াসা কিংবা খুলনা ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করছে তা যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কিনা সেদিকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা প্রয়োজন। ওয়াসার পানির অপচয়, চোরাই লাইন সরকারকে ক্ষতির সম্মুখীন করছে। এজন্য পানির পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সব মানুষের জন্য নিরাপদ পানি চাই।

উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শাহ মো. আনোয়ার কামাল বলেন, ‘প্রথম বাংলাদেশে যখন আর্সেনিক ধরা পড়ে তা থেকে আমরা অনেক উত্তরণ ঘটিয়েছি। এজন্য সরকার ব্যাপক কাজ করছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর জনসচেতনতা সৃষ্টি করাসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। আমরা যে সোর্স থেকে পানি সংগ্রহ করি, তখন সেটা ভালোই থাকে। পরবর্তী পর্যায়ে তা সরবরাহ করতে গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়। শহরাঞ্চলে আমরা যে পাইপ দিয়ে ২-৪ ঘণ্টা পানি সাপ্লাই দেই, তাতে পানি নিরাপদ রাখা কষ্টকর।’

এ ছাড়া নিরাপদ পানি পান ও ব্যবহারের জন্য গ্রাম অঞ্চলে সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমরা ওয়াটার সেফটি প্ল্যান্ট গ্রাাঞ্চলে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। যাতে মানুষ যে পানি ব্যবহার করছে তা যেন নিরাপদ থাকে।

পরিবেশবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে ডায়রিয়া থেকে শুরু করে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। সম্প্রতি ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগী বৃদ্ধির পেছনেও দূষিত পানি দায়ী। অনেকে বলতে পারেন ডায়াবেটিসের সঙ্গে পানির কী সম্পর্ক? দূষিত পানিতে এমন কিছু কেমিক্যাল আছে, যা মানুষের প্যানক্রিয়াসের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

ফলে ইনস্যুলিনের স্বাভাবিক নিঃসরণ বন্ধ হয়ে মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। দীর্ঘদিন দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে শরীরে টক্সিন (বিষাক্ত পদার্থ) জমা হয়, যা বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ইদানীং কিডনি ডিজিস এবং ক্রনিক লিভার ডিজিস বেড়ে গেছে। চক্ষুরোগী বাড়ছে। ওরাল ক্যান্সার বাড়ছে।

প্রত্যেকটি রোগের সঙ্গে দূষিত পানির যোগসূত্র রয়েছে। দূষিত পানির কারণে কেমিক্যাল পয়জনিং হয়ে সাবেক এক রাষ্টপতি মারা গেছেন। দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে হেপাটাইটিস, টাইফয়েড, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক আলসার, ত্বকের নানা রোগ এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। এমনকি আমরা মুখ দিয়ে যখন পানি পান করি, তখন এ দূষিত পানির কারণে মুখেও ক্যান্সার হতে পারে। তাই বিশুদ্ধ পানি পান করার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।

বার্তা কক্ষ
২২ মার্চ ২০১৯ /strong>

Share