অলৌকিকতার আড়ালে শিক্ষিত পুরো পরিবার যখন মানসিক রোগী

গত ৬ মাস ধরে অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটে চলেছে বলে দাবি পরিবারটির। কখনো বাড়ি থেকে মোবাইল, তালা-চাবি, কোদাল হারিয়ে যায়। সব দরজা থাকার পরে বাড়ির জিনিস চুরি হয়ে যায়। কয়েকদিন আগে পরিবারের ছোট মেয়ে হাসিনাকে উঠিয়ে নিয়ে যায় কেউ। বিকেলে আবার ফিরে আসে। দীর্ঘদিন ধরেই এমন সব ঘটনা ঘটায় শিক্ষিত পরিবারটির সদস্যরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

এ ঘটনা রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা পৌর এলাকার কালিকান্দর গ্রামের। বাড়ির গৃহকর্তা হোসেন আলীর পরিবারের সদস্যরা এখন দিশেহারা। হোসেন আলীর পরিবারে তারা স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও চার ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে ফারুক হোসেন, রাজশাহী কলেজে স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তরে পড়ালেখা করছেন। দ্বিতীয় ছেলে রুবেল আলী তানোর ও তৃতীয় ছেলে সেলিম রেজা মুণ্ডুমালা কলেজে ডিগ্রি ও চতুর্থ ছেলে রনি ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি সিটি কলেজে এইচএসসিতে পড়ছেন। এক মাত্র মেয়ে এবারে এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

পরিবারের সবাই শিক্ষিত হওয়ার পরেও সবার মাঝে এমন অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে চলেছে। ঘটনার শুরু তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএস আসা থেকে।

হোসেন আলী জানান, চলতি বছর ২৬ এপ্রিল ০১৮৫৭৯৯৭৩৭৯ ও ০১৮৬৫৮৪১২৯৬ নাম্বার থেকে তাদের ফোনে এসএমএস আসে। তাতে লেখা থাকে ‘জ্বীন ও যাদুর দ্বারা তোর পরিবারের ও মেয়ের বড় ধরনের ক্ষতি করবো’। এই রকম প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি এসএমএস আসে তাদের মোবাইল ফোনে। এরপর থেকেই আশেপাশের প্রতিবেশীদের সন্দেহের চোখে দেখতে থাকেন তারা। নিরুপায় হয়ে কৃষক হোসেন আলী এসএমএস আসা মোবাইলের একাধিক নাম্বার দেখিয়ে কয়েক মাসে তানোর থানায় পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে ৩টি সাধারণ ডায়রি করেছেন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি।

তাদের ধারনা হতে থাকে নিশ্চয় কোনো ব্যক্তি তাদের ক্ষতি সাধনের জন্য খারাপ ‘অলৌকিক’ কিছু পেছনে লাগিয়েছে। অবশেষে পরিবারের লোকজন কয়েকজন কবিরাজ ও ওঝার কাছে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য যায়। তাদের নানান ভীতিকর কথা গেঁথে যায় পরিবারটির প্রত্যেকের মধ্যে। ধীরে ধীরে পরিবারের লোকজনের মধ্যে এ বিশ্বাস আরো বেশি গভীর হতে থাকে। সেই সঙ্গে পরিবারটির সঙ্গে ঘটতে থাকে ‘অলৌকিক’ ঘটনা (তাদের দাবি অনুযায়ী)।

সদ্য স্নাতক পাস করা ফারুক হোসেন জানান, কয়েকদিন আগে আমার ছোট বোন হাসিনাকে যাদু করে সকালে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ যেনো এক ‘অলৌকিক’ ঘটনা।

হাসিনা বললেন জানালেন তার সেই ঘটনার বিবরণ। সকালে বাড়ির পাশে জমিতে যাওয়ামাত্র তার চোখে আলোর মত এসে পড়ে। তারপর থেকে কোথায় কীভাবে ছিলো তা সে বলতে পারে না। বিকেলে সে নিজেকে বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে গাছের নিচে বসে থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করে।

কয়েকদিন আগে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা থেকে হাসিনাকে তারা ‘জ্বীনের’ হাত থেকে বাঁচাতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে এসেছেন। এরপর আরো বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে পরিবারের অন্য সদস্যরা। যে যেমন করে পারছেন তেমন করে কবিরাজের কাছে গিয়ে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মনো রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মামুন হুসাইন জানান, দীর্ঘ দিনের ভয়, হতাশা থেকে পরিবারের লোকজনের মধ্যে এ ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। রোগীর সঙ্গে কথা বললে তারা কী ধরনের রোগে আক্রান্ত তা আরো ভালোভাবে বোঝা যেতো। যতো দিন তারা কুসংঙ্কারের মধ্যে ডুবে থাকবে এ রোগের প্রভাব ততো বেশি দেখা দিবে। পরিবারের সব সদস্যদের দ্রুত কোনো মানসিক চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট: ০২:০০ এএম, ১২ নভেম্বর ২০১৫, বৃহস্পতিবার

ডিএইচ

Share