আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নয়, ইতিহাস, পরিবেশ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতিতেও ভরপুর। ভারতের এই দ্বীপপুঞ্জ সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য রয়েছে, যা জানলে অবাক না হয়ে পারা যায় না। চলুন, জেনে নিই এমনই ১০টি চমকপ্রদ তথ্য।
‘আন্দামান’নামটি ধারণা করা হয় হনুমানের নাম থেকেই এসেছে, যাকে মালয়রা ডাকত ‘হান্ডুমান’ নামে। আর ‘নিকোবর’ এসেছে দক্ষিণ ভারতের ‘নক্কাভারম’ শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘নগ্নদের ভূমি’। এই নামটির উল্লেখ রয়েছে ১০৫০ খ্রিস্টাব্দের তাঞ্জোর শিলালিপিতে।
আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে স্থানীয় আন্দামানী বা নিকোবরী ভাষা নয়, সবচেয়ে বেশি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন। এরপর রয়েছে হিন্দি,তামিল,তেলেগু ও মালয়ালম।
দ্বীপে দৈনন্দিন লেনদেনের জন্য ‘আন্দামান ক্রেওল হিন্দি’ও ব্যবহার করা হয়। কাচ্ছল দ্বীপে উঠেছিল সহস্রাব্দের প্রথম সূর্য নিকোবরের ছোট্ট কাচ্ছল দ্বীপ ছিল ২০০০ সালের প্রথম সূর্যোদয়ের প্রথম সাক্ষী। রয়্যাল গ্রিনউইচ ল্যাবরেটরি এ ঘোষণা দেয়ার পরই এটি আলোচনায় আসে। ভারতীয় ডাক বিভাগ তখন একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক কচ্ছপের আবাসস্থল এ দ্বীপপুঞ্জ ভারতের মধ্যে সবচেয়ে ভালো কচ্ছপের প্রজনন ক্ষেত্র। এখানে তিন ধরনের সামুদ্রিক কচ্ছপ—হক্সবিল, গ্রিন টার্টল ও বিশ্বের সবচেয়ে বড় লেদারব্যাক কচ্ছপ বাস করে। নিকোবর দ্বীপে ১০০০ এর বেশি লেদারব্যাক কচ্ছপ রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ। নর্থ সেনটিনেল দ্বীপে বাস করে পৃথিবীর সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন উপজাতি নর্থ সেনটিনেল দ্বীপে বাস করে সেনটিনেলি উপজাতি, যাদের সংখ্যা আনুমানিক ৩০০। তারা বাইরের জগতের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখে না এবং আগন্তুক দেখলেই তীর ছুঁড়ে মারে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, তারা আফ্রিকা থেকে আসা প্রাচীন মানবগোষ্ঠীর সরাসরি বংশধর এবং প্রায় ষাট হাজার বছর ধরে এই দ্বীপে বসবাস করছে। দুগং বা সমুদ্রের ‘গরু’ এই দ্বীপের প্রধান প্রাণী সমুদ্রের এই শান্ত শাকাহারী প্রাণী দুগং হল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপের রাষ্ট্রীয় প্রাণী। এগুলোকে দেখা যায় রিচির দ্বীপপুঞ্জ, নর্থ রিফ, লিটল আন্দামান ও নিকোবরের কিছু অঞ্চলে।
নিকোবরে পাওয়া যায় বিরল ফল পানডানুস নিকোবর দ্বীপে পাওয়া যায় পানডানুস বা নিকোবর ব্রেডফ্রুট। যা একটি শক্ত ও আঁশযুক্ত ফল। রান্নার পর এর সুগন্ধি শাঁস খাবার হিসেবে খাওয়া হয়। এর গাছের ডাল দিয়ে ঘর তৈরি হয়, পাতা দিয়ে চট তৈরির কাজ হয় এবং ফলের খোল ব্যবহার করা হয় ঘষার ব্রাশ হিসেবে।
বাণিজ্যিক মাছ ধরা নিষিদ্ধ দ্বীপপুঞ্জের চারপাশে বাণিজ্যিক মাছ ধরায় ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই এখানকার জলজ প্রাণীরা প্রাকৃতিকভাবে দীর্ঘায়ু পায়। এই এলাকায় ডলফিন, তিমি, কচ্ছপ, সি কাউ, সেলফিশ, সি অ্যানিমোন ইত্যাদি প্রচুর দেখা যায়।
ভারতের একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি এখানে আন্দামানের বারেন দ্বীপ ভারতের ও দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ১৩৫ কিমি দূরে অবস্থিত এই দ্বীপে ৩ কিমি চওড়া একটি আগ্নেয়গিরি রয়েছে, যার প্রথম অগ্নুৎপাত রেকর্ড হয় ১৭৮৭ সালে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থোপড থাকে এখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্থলচর আর্থোপড বিরগাস ল্যাট্রো বা রবার ক্র্যাব বাস করে এই দ্বীপপুঞ্জে। এদের আরেক নাম নারিকেল কাঁকড়া। এটি রাতে গাছে উঠে নারকেল ফুটো করে ভিতরের শাঁস খায়। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রবার ক্র্যাব এখানেই দেখা যায়। সূত্র : আন্দামান এক্সপার্টস
১৮ মে ২০২৫
এজি