Home / চাঁদপুর / একটি শিক্ষা সফর আর চাঁদপুর কলেজ হিসাববিজ্ঞান বিভাগ
vivian-accounting-department

একটি শিক্ষা সফর আর চাঁদপুর কলেজ হিসাববিজ্ঞান বিভাগ

চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হিসাববিজ্ঞান বিভাগের হয়ে এটাই ছিল আমাদের শেষ শিক্ষা সফর। ভাবলেই কেমন একটা বিষন্নতা কাজ করে, মনের গভীরে তীব্র খারাপ লাগা জমে যায়। কিন্তু কি করার,সময়ের পরিক্রমায় তা যে মেনে নিতেই হবে।

দিনটি ছিল ৬ মার্চ, ২০১৯। গন্তব্যস্থল ছিল চট্টগ্রামের ফয়েস লেক ও পতাঙ্গা সমুদ্র সৈকত। আমাদের ব্যাচের হয়ে চব্বিশ জন অংশ নিয়েছিলাম। আমাদের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বেলাল হুসাইন স্যার বলেছিল এর আগে এমবিএ ব্যাচের এতজন কখনোই শিক্ষা সফরে যায় নি। আসলে ডিপার্টমেন্টের সাথে সম্পৃক্ততা বেশি থাকার কারণে এবং সহপাঠীদের আগ্রহের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছিলো।

৪ বাসে করে ১৭০ জন শিক্ষাসফরের উদ্দেশ্যে রওনা করেছিলাম। চারটি বাসের মধ্যে আমাদের বাস ছিল দুই নং, আর সাথে ছিল দ্বিতীয় বর্ষের ছোটরা। আমাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বেদারুল আলম স্যার। বাস জার্নি ক্লান্তিকর এবং রসহীন। কিন্তু হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা রসালো বটে, তাই জার্নিটা হয়ে উঠলো প্রাণবন্ত।

বিশেষত অভি, রাসেলের গান মাতিয়ে তুলেছিল সবাইকে। আর সাথে রাব্বানী, আবির, জুয়েল, মেহেদী তো ছিলই। গানের সাথে নাচ তো হবেই। এই দিক থেকে তিশা,মুনিয়া,অদিত, হাবিবা,তুশি ও কম যায় নি। উদ্দেশ্য ছিল কাউকে ঘুমাতে দেয়া যাবে না। দ্বিতীয় বর্ষের ব্যাসমেটরা খুব বিনয়ী ও আন্তরিক ছিল, ওদের জন্য আমাদের আনন্দটা ছিল দ্বিগুন।

আমাদের সফরসঙ্গী হয়ে ওরা খুব উপভোগ করেছিল। ইতি, বিথীর নাচ, ছোট দুইটা ভাইয়ের গান, আর মাঝখানে বেদারুল আলম স্যারের খন্ড খন্ড গান মনে ধরেছিল খুব। মোটকথা বাস জার্নি এর থেকে বেশি উপভোগ্য বোধহয় হতে পারে না।

ফয়েস লেক কৃত্রিমভাবে সাজানো অনন্য সুন্দর স্থান। ফয়েস লেকে নেমেই আমরা চলে গেলাম ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে। প্রানখুলে আনন্দ করা যাকে বলে তা অনুভূত হতে বেশি দেরি হলো না। মফিজুর রহমান স্যার, মহসীন শরীফ স্যার, শাহজালাল অনেক বেশি আন্তরিক ছিল। পানিতে নেমে মনোমুগ্ধকর নাচ দেখিয়ে আমাদের বিমোহিত করেছিল শুধু। স্যার আপনাদের জন্যই আমাদের বার বার এই সফরগুলিতে যেতে ইচ্ছে করে, অন্তরে লেগে থাকে কিছু একটা!

ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে যেয়েও ওয়াটারে নামা হয় নি আমার (লেখক), যদিও বেদারুল আলম স্যার বারবারই আমাকে নামতে বলেছিলো। কিন্তু শুধু দেখেই সবার আনন্দটা অনুভব করেছিলাম। সাজ্জাদ স্যারের সাথে মাঝখানে খানিকটা গল্প করলাম, স্যার ভীষণ অমায়িক।

আমাদের বেলাল স্যারও পানিতে নামেননি, এই সময়টা সবাই স্যারের সাথে ছবি তুলেই কাটিয়েছিলো স্যারের হাসিটা খুব পছন্দের।
পুরো সফরে সবচেয়ে বেশি মজা এই জায়গাতেই হয়েছিল। এরপর লাঞ্চ সেরে শুরু হয়ে গেলো অন্যান্য রাইডে চড়ার পর্বটি।

এক্ষেত্রে আমার সঙ্গী ছিল অভি। অভি একটা বিনোদনের প্যাকেজ। এই পর্ব সম্পন্ন হতেই র‌্যাফেল ড্র এর পর্বটি শুরু হয়েছিল । এটা নিয়ে একটা আক্ষেপ আমার রয়েই গেলো। শান্তনা পুরস্কার ছাড়া কখনোই কোন র‌্যাফেল এর পুরস্কার আমার কপালে জুটেনি। এবারও কোন ব্যতিক্রম ঘটলো না। যারা পুরস্কার গ্রহণ করেছিল শুধুমাত্র তাদের হাসিমুখ দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিলো।

এর মধ্য দিয়েই ফয়েস লেককে বিদায় দিয়ে রওনা দিয়েছিলাম পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে। এখানে আর বেশিক্ষণ থাকা হয়নি।
প্রায় ঘণ্টাখানেক থেকেই চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলাম। এর মধ্য দিয়েই সমাপ্তি ঘটেছিল একদিনের এই সংক্ষিপ্ত সফর।
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের,অর্থাৎ বর্তমান চতুর্থ বর্ষের ওরা অধিক আন্তরিক ব্যাচ। নাঈম, শাহরুখ, মিঠুন, আবির, সুব্রত, ধ্রুব, নবনীতা ওদের জন্য সফরটি বেশ প্রাণবন্ত ছিল।

এছাড়া ২০১৫-১৬ সেশনের ইমরান, হাসান, মিমি, মাহদী, নিজাম, রাজ্জাক, তমা এবং ২০১৬-১৭ সেশনের ফাহিম, রিয়াদ, হাবিব, রবিউল পুরো সফরটি মাতিয়ে রেখেছিলো।

বাসেদ, ইমতিয়াজসহ প্রথম বর্ষের ওরাও ব্যাপক জমিয়েছিল। সবার নাম উল্লেখ করতে না পারায় আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

যারা কখনোই বিভাগের হয়ে শিক্ষা সফরে যাওনি, তারা আগামীতে আর মিস করবে না। তাহলে জীবনের কিছু আনন্দঘন মুহূর্ত মিস করবে। শেষে মফিজুর রহমান স্যারকে বলেছিলাম, স্যার আগামী ভ্রমণ এ বছরেই করবেন, যাতে করে আবারো যাওয়ার সৌভাগ্য হয়।

হিসাববিজ্ঞান বিভাগ চাঁদপুর সরকারি কলেজের সেরা বিভাগ। পাঁচ বছর ধরে অধ্যয়ন করছি, কখনো বিভাগের প্রতি ভালোবাসাটুকু প্রকাশ করতে পারিনি। আমরা খুব ভাগ্যবান যে আমরা হিসাববিজ্ঞান পরিবারের সদস্য। হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সকল শিক্ষকদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। আপনাদের খুব ভালোবাসি স্যার।

হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রতিটি শিক্ষা সফর মিস করবো, মিস করবো প্রিয় বিভাগটিকে। বড় হওয়াটা খুব কষ্টের। শেষের এই লেখাটুকু লিখতে গিয়ে হাত কাপছে, বুকের ভেতরটা হু হু করছে।

ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক আমাদের স্যাররা। ভালো থাকুক প্রিয় হিসাববিজ্ঞান বিভাগ।

লেখক- ভিভিয়ান ঘোষ
শিক্ষার্থী- হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ,
চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।