চাঁদপুর

চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় বিসিএস বিজয়ী ৬ নারী ইউএনওর গল্প

যেখানে পুরুষ জাতিকে প্রাধান্য এবং নারী জাতিকে অবহেলা করা হবে সেখানে জাতির কোনো উন্নতি বা পরিবর্তন হবে না। তাইতো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’

মানবসভ্যতার ইতিহাস বলে, আধিকাল থেকে আজকের যে সভ্যতা তাতে নারী-পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। নারী-পুরুষের সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টায় সভ্যতা সূচিত হয়েছে। সভ্যতা বিনির্মাণে কারো অবদানই কম নয়।

এরকমই নারী সভ্যতার এক অনন্য উদাহারণ সৃষ্টি হয়েছে নদী বিধৌত একসময়ের চাঁদ সওদাগরের নগরী ব্র্যান্ডিং জেলা ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে। এ জেলার আট উপজেলার মধ্যে ছয় উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিসিএস জয়ী ৬ নারী কর্মকর্তা।

চাঁদপুরের আট উপজেলার মধ্যে ফরিদগঞ্জ ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা ছাড়া বাকি সবকটি উপজেলার ইউএনও নারী। চাঁদপুর সদর উপজেলায় কানিজ ফাতেমা, হাজীগঞ্জে বৈশাখী বড়ুয়া, কচুয়ায় নীলিমা আফরোজ, মতলব উত্তরে শারমিন আক্তার, হাইমচরে ফেরদৌসি বেগম ও সর্বশেষ নিয়োগপ্রাপ্ত শাহরাস্তিতে শিরিন আকতার ইউএনও হিসেবে আছেন।

তাদের কর্মজীবন সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা যায়, শাহরাস্তি উপজেলার ইউএনও শিরিন আকতার এর আগে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ৩১তম বিসিএস ক্যাডার। ইউএনও শিরিন আকতার ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ও এক সন্তানের জননী।

হাইমচরে ইউএনও ফেরদৌসী বেগম ১৫ এপ্রিল এই দায়িত্বে যোগ দেন। এর পূর্বে তিনি চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ফেরদৌসী বেগম ৩০তম বিসিএস ক্যাডারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত, এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

শাহরাস্তি উপজেলার বাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কলামিস্ট গাজী কবির বলেন, ‘নারী নেতৃত্বে চাঁদপুর। এতে করে চাঁদপুর জেলায় স্কুল-মাদ্রাসায় পড়–য়া ছাত্রীদের ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহ রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সহজ হবে।’

হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসি বেগম বলেন, ‘আমি সাধারণ মানুষের সেবা করতে চাই। পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি এবং কাজ করে যাব।’

হাজীগঞ্জের ইউএনও বৈশাখী বড়ুয়া। এর আগে তিনি ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেড় বছর আগে তিনি ইউএনও হিসেবে হাজীগঞ্জে উপজেলায় যোগদান করেন।

ইউএনও বৈশাখী বড়ুয়া বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী নেতৃত্বের প্রসারে এটি একটি অনন্য উদাহরণ। সকল নারীরাই তাদের দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পালন করছে। আমরা আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বটুকু অত্যন্ত সততা ও দক্ষতার সাথে পালনের চেষ্টা করি। ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি জেলা। এই জেলায় ইউএনও হিসেবে কাজ করতে পেরে আমরা আনন্দিত।’

কচুয়ার ইউএনও নীলিমা আফরোজ এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘কচুয়ার জনগণের সাথে কাজ করতে পেরে আমি যথেষ্ট খুশি। সরকার যেভাবে নারী নেতৃত্বকে এগিয়ে আনছে, তাতে আমার মনে হয় বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ নারী নেতৃত্বে প্রথম হবে। আমরা মেয়েরা সবাই সাহস পাচ্ছি। নিষ্ঠার সাথে কাজ করছি।‘

হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান গাজী মো. মাঈনুদ্দিন। তিনি নারী ইউএনও প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরকার নারী নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ গঠনে নারী ও পুরুষকে সমানতালে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
১৮ এপ্রিল ২০১৯

Share