Home / শীর্ষ সংবাদ / হাজীগঞ্জে শালী-দুলাভাই পরকীয়ায় বোন ও স্বামীর হাতে গৃহবধূ খুন
Shali-Dula-vai-murder-case
লালা বৃত্তে ঘাতক খুনী শালী-দুলাভাই। বামে খুনের শিকার রিভা।

হাজীগঞ্জে শালী-দুলাভাই পরকীয়ায় বোন ও স্বামীর হাতে গৃহবধূ খুন

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব হাটিল ইউনিয়নের পূর্ব হাটিলা গ্রামে প্রবাসী ভগ্নিপতির সাথে শালীর পরকিয়া প্রেমের জেরে আপন ছোট বোন আইরিন আক্তার ও স্বামী হযরত আলীর হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন নাসরিন আক্তার রিভা (২০) নামের গৃহবধু।

এ ঘটনায় নিহেতর ছোট বোন আইরিন আক্তার ও স্বামী হযরত আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে চাঁদপুর জেলা পুলিশ কার্যালয়ে পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির এ চাঞ্চল্যকর হত্যার বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

হত্যার শিকার আইরিন সুলতানা রিভা উপজেলার হাটিলা গ্রামের বেপারী বাড়ীর প্রবাসী আব্দুর রহিমের কন্যা। সে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পাশ করেন।

হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত স্বামী হযরত আলী চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের মনিহার গ্রামের তোরাব আলী মুন্সি বাড়ীর রুহুল আমিন মাস্টারের ছেলে। সে দুবাই প্রবাসী ছিলেন। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর লক্ষ্যে চলতি মাসের ৮ তারিখে দেশে আসেন। গত ৬ মাস পূর্বে মার্চ মাসে নাসরিনের সাথে হযরত আলীর বিয়ে হয়। বিয়ের পরে সে দুবাই চলে যায়।

অপর অভিযুক্ত নাসরিনের ছোট বোন আইরিন আক্তার রেখা (১৬) স্থানীয় টঙ্গিরপাড় হাটিলা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যায়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী।

প্রেস ব্রিফিং উল্লেখ করা হয়, গত ৯ অক্টোবর ওই গ্রামের বেপারি বাড়ীতে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে নাসরিনের ছোট বোন আইরিন ও স্বামী হযরত আলী রাতের বেলায় নাসরিনের পায়ে ওড়না পেচিয়ে পা চেপে ধরে এবং হযরত আলী মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে।

ওই সময় নাসরিন সজাগ হয়ে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে হযরত আলী বালিশ ফেলে দিয়ে নাসরিনকে গলা চেপে ধরে এবং বুকে আঘাত করলে তার বুকের পাজর ভেঙে যায়। ওই অবস্থায় নাসরিন চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এ অসময় অভিযুক্তরা মনে করে নাসরিনের মৃতু হয়েছে।

নাসরিনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে হযরত আলীকে অপর দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে ছোট বোন আইরিন এবং বাড়ির লোকজনকে ভিতরের আরেকটি দরজা খুলে দিয়ে সেও অজ্ঞান হওয়ার ভান ধরে পড়ে থাকে।

এরপর ওই বাড়ির বাসিন্দা ফেরদৌসি আক্তার মিনুসহ লোকজন নাসরিন ও আইরিনকে দু’জনকেই প্রথমে হাজীগঞ্জ বিসমিল্লাহ হসপিটালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরবর্তীতে তাদেরকে কুমিল্লা সিটি প্যাথ হসপিটালে নিয়ে যান।

ওই হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ অক্টোবর রাতে নাসরিনের মৃত্যু হয়। ওই রাতেই কুমিল্লা হসপিটাল থেকে নিহত নাসরিনের মরদেহ ও ছোট বোন আইরিনকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। ঘটনার রাত (৯ অক্টোবর) নাসরিনের মা নিলুফা ইয়াছমিন ঢাকা চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছিলেন। আর পিতা আব্দুর রহিম ঘটনার সংবাদ পেয়ে পরদিন দেশে চলে আসেন।

পুলিশ জানায়, মৃত্যুর খবর পেয়ে ওই বাড়ীতে গিয়ে পুলিশ নাসরিনের মরদেহ উদ্ধার, সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী এবং ময়না তদন্ত সম্পন্ন করেন। এই ঘটনায় নিহতের পিতা আব্দুর রহিম ১৪ অক্টোবর হাজীগঞ্জ থানায় ৪৬০ ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২০।

ওই মামলার তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহম্মদকে। তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় একই উপজেলার বাকিলা বাজার থেকে অভিযুক্ত হযরত আলীকে আটক করেন। তার কথানুযায়ী ঘটনার সাথে জড়িত আইরিনকেও পুলিশ আটক করে।

জিজ্ঞাসাবাদে হযরত আলী পুলিশকে জানান, ঘটনার পূর্বে সে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। ওই রাতে পরকিয়া প্রেমিক শ্যালিকা আইরিনের সাথে যোগাযোগ করে ওই বাড়িতে আসেন। এর পূর্বে থেকে আইরিনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক এবং শারীরিক সম্পর্ক হয়। সে পুলিশকে উল্লেখিত হত্যাকান্ডের বিবরণ দেয়।

পরে পুলিশ হযরত আলী ও আইরিন আক্তারকে চাঁদপুর আদালতে প্রেরণ করলে অভিযুক্ত হযরত আলী আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী প্রদান করে।

পরে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।

প্রতিবেদক- মাজহারুল ইসলাম অনিক
১৮ অক্টোবর, ২০১৮

Leave a Reply