Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে আলোর বাতিঘর বীর প্রতীক মমিন উল্লাহ পাটওয়ারী একাডেমি
Momin-Ullah-Academy

চাঁদপুরে আলোর বাতিঘর বীর প্রতীক মমিন উল্লাহ পাটওয়ারী একাডেমি

সততা, পরিশ্রম এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক থাকলে যে কোনো অসাধ্যসাধন করা যায়, তার প্রমান জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, বীর প্রতীক মমিন উল্যাহ পাটওয়ারী। তিনি চাঁদপুর সদর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে নিজের নামে গড়ে তুলেছেন অত্যাধুনিক অথচ ব্যতিক্রম একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বীর প্রতীক মমিন উল্লাহ পাটওয়ারী একাডেমি নামে এই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানটি ইতমধ্যেই চাঁদপুরে আলোর বাতিঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভ করছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি নীতিনৈতিকতা, তথ্যপ্রযুক্তি, বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি, ক্রিড়াসহঅন্যান্য সহশিক্ষাকে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়।

যাতে করে নির্ধারিত শিক্ষার পাশাপাশি প্রতিটা শিক্ষার্থী নীতিনৈতিকতা শিখে সত্যিকারের মানুষ হয়ে ওঠার জ্ঞানার্জন করতে পারে। বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি দেশে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই একমত যে, সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে উন্নত জাতি গঠন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, বেকারত্ব হ্রাস এবং সর্বোপরি দক্ষমানব সম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার কোনও বিকল্প নেই। শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন, দৃঢ় মননশীলতার অধিকারি আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ গড়ে তোলা।

তাছাড়া শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম। বর্তমান যুগে জ্ঞান, প্রযুক্তি চরম উৎকর্ষ ধারণ করেছে। চলমান বিশ্বায়ন ও অবাধ অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সময় উপযোগী দক্ষ, উদ্যমী, সৃজনশীল, কর্মক্ষম এবং নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিয়েই চাঁদপুর শহরতলীর মৈশাদী ইউনিয়নে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বীর প্রতীক মমিন উল্লাহ পাটওয়ারী একাডেমি। তবে এর কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সালে।

মাত্র ৬২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণিতে মোট ১৯০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যার মধ্যে, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ৬০ জন, ৭ম শ্রেণীতে ৬০জন, ৮ম শ্রেণিতে ৪৪ জন ও ৯ম শ্রেণিতে ২৪জন শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে। ২০১৮ সালের জেএসসি পরীক্ষায় এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জিপিএ-৫সহ শতভাগ পাশ করেছে।

মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে দেশের জন্যে লড়াই করেছেন বীর প্রতীক মমিন উল্লাহ পাটওয়ারী। এবার তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে নিজ জেলার নতুন প্রজন্মকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে বিদ্যালয়টির ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এই আদর্শ শিক্ষালয়ে রয়েছে ৩হাজার বই সম্বলিত একটি বিশাল গ্রন্থাগার, ৪০টি কম্পিউটারের একটি অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব, সুবিশাল সায়েন্স ল্যাবরেটরি, সংগীত বিভাগ, ইংলিশ স্পোকিং ক্লাব, আবৃত্তি বিভাগ, বিতর্ক বিভাগ, স্পোর্টস বিভাগসহ অনেকগুলো আলাদা আলাদা বিভাগ।

যেখানে সপ্তাহে ৩দিন নিয়ম করে সহশিক্ষার পাঠদান করানো হয়। এছাড়াও রয়েছে আলাদা টেবিল টেনিস, হ্যান্ডবল, বলিবল, দাবাসহ দেশী এবং আন্তর্জাতিক বহু খেলার সুব্যবস্থা। যে শিক্ষার্থী যে বিষয়ে পারদর্শী তাকে সেই বিষয়ের উপর অভিজ্ঞ শিক্ষকের তত্বাবধানে গুরুত্ব দেয়া হয়। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো এই সবগুলো বিভাগ ও বিষয় নিয়মিত চালু রয়েছে। যার ফলে এই প্রতিষ্ঠানটি উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, যোগ্য পরিচালনা পরিষদ, আর উদ্যমী ও পরিশ্রমী অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলীর মান সম্পন্ন পাঠদান পদ্ধতির সমন্বয়ে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও প্রত্যয় দীপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হিসেবে দিনে দিনে তার পরিচয়ের দ্যুতি চারিদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটিতে ১৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। তারা হলেন, অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) এমদাদুল হক, প্রভাষক খান এমএ জাহিদ, মাওলানা আ. রউফ, আজহার উদ্দিন পাটওয়ারী, নাফিসা লুবাবা, সাজেদা আক্তার, রোকসানা আক্তার, আবু সালেহ, আল আমিন, ¯িœগ্ধা চক্রবর্তী মনীসা, উম্মে হাবিবা, জান্নাত আরা জুথি, প্রিয়াংকা আক্তার, শামসুন্নাহার মেধা।

বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী জানায়, আমরা যতক্ষণ বিদ্যালয়ে থাকি ততক্ষণ খুব আনন্দ উপভোগ করে থাকি। আমাদের শ্রেনীকক্ষে পাঠদান থেকে শুরু করে খেলার মাঠে এমনকি গানের ক্লাসেও শিক্ষকদের তত্ত্ববধায়ন রয়েছে। শ্রেণি শিক্ষার অংশ হিসেবেই আমরা খেলাধুলা, গান, আবৃত্তি, বিতর্ক, কম্পিউটার শিখে থাকি। তাই আমরা বাড়িতে থাকার চেয়ে বিদ্যালয়ের থাকার সময়টুকু বেশী আনন্দবোধ করি।

৮ম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বলেন, এই বিদ্যালয়টি আমাদের কাছে বেশী ভালো লাগে যার কারণ হলো, এখানে এতো বড় একটি লাইব্রেরি রয়েছে যা আমরা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে দেখিনাই। আমরা নিয়মিত লাইব্রেরিতে এসে পত্রিকা, ম্যাগাজিনসহ যে কোনো কবি, সাহিত্যিকের বই পড়তে পারি। তাছাড়া এখানে দেশী বিদেশী যে কোনো খেলাদুলার সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে।

একাডেমীর অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) এমদাদুল হক জানান, শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্ততের পড়াতে ছেলেমেয়েদের আবদ্য না রেখে আমরা তাদের সকল প্রকারের সহশিক্ষাকেও বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তারা গান, কবিতা, খেলাধুলা- যে যে বিষয়ে পারদর্শী তাকে সে বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রতিভাকে কাজে লাগানো সুযোগ দেয়া হয়।

একাডেমীর গানের শিক্ষক কণ্ঠশিল্পী ¯িœগ্ধা চক্রবর্তী মনীসা বলেন, আমার দেখা এটি একমাত্র স্কুল যেখানে এতো বড় পরিসরে শিক্ষার্থীদের গান শেখানো হয়। গানের ক্লাসে ১০/১২টি হারমোনিয়াম রয়েছে।

এগুলো একসাথে বাজিয়ে শিক্ষার্থীরা গান শিখে থাকে। এছাড়াও পিয়ানো, তবলসহ সংগীতের বহু উপকরণ এই স্কুলে রয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, ক্লাস শেষে নিয়মিত স্কুলের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী এক সাথে দাঁড়িয়ে দেশাত্মবোধক গান গাইতে আমি আর কোথাও দেখিনাই। এতে করে শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশ প্রেম প্রচন্ডরকম গাড় হতে থাকে।

একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি বীর প্রতিক মমিন উল্লাহ পাটওয়ারী বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছি। আমি চাই এই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ে আদর্শ এবং দক্ষ নাগরীক হয়ে উঠুক। এজন্যে পুথিগত শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষার বিষয়টিও আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।’

সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি ইংরেজি এবং কম্পিউটার শিক্ষার প্রতি। যাতে করে এই এলাকার ছেলেমেয়েরা বিদেশে গিয়ে ভালো চাকরি করতে পারে। কারণ শুধুমাত্র ইংরেজি এবং কম্পিটার না জানার কারণে আমাদের দেশের ছেলেরা বিদেশে গিয়ে ছোট কাজ করতে হয়।

প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম, ২১ আগস্ট ২০১৯