হাজীগঞ্জ

হাজীগঞ্জে যুবলীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে : ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শপিং সেন্টার ভাঙচুর

হাজীগঞ্জে ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যুবলীগের দু’গ্রুপের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সকালে উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের স্থানীয় রামপুর বাজারে এ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন রনির নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাটিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনায় স্থানীয় রামপুর বাজারের কয়েকটি দোকানসহ গাউছিয়া টাওয়ারে অবস্থিত গাউছিয়া শপিং সেন্টার ভাঙচুর, সেন্টারে কর্মরতদের মারধর ও সেন্টার থেকে নগদ ১৪ লাখ টাকা লুটের অভিযোগ এবং মারধর ও দু’গ্রুপের ইট-পাটকেল নিক্ষেপে অন্তঃত ৮জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গাউছিয়া শপিং সেন্টারের আহতরা হলেন- আবুল বাশার, কাউছার আহমেদ ও মাছুম। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত ১৪ জুলাই উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটিতে শ্যামল শীলকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে উপজেলা যুবলীগ। ওই কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন পদবঞ্চিতরা এবং গত কয়েকদিন ধরে তাদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়।

বুধবার সকালে ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে রামপুর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে পদবঞ্চিতরা। এতে দু’গ্রুপের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং দু’পক্ষের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে। বাজারের ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্তের শিকার না হয় সেজন্য ছুটে আসেন রামপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও গাউছিয়া টাওয়ার এবং গাউছিয়া শপিং সেন্টারের স্বত্বাধিকারী এসএম মানিক। তিনি বর্তমান যুবলীগ কমিটির সাথে কথা বলে তাদের বাজারের দক্ষিণ দিকে সরিয়ে দেন।

এরপর বাজারের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলতে যান এসএম মানিক। তিনি কথা বলা অবস্থায় পদবঞ্চিত একদল বিক্ষুব্ধ যুবলীগ নেতাকর্মী লাঠিসোটা হাতে নিয়ে বাজারের দক্ষিণ দিকে ছুটে আসেন এবং বেশ কয়েকটি দোকানঘরসহ গাউছিয়া শপিং সেন্টারে হামলা চালান। এতে দু’গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে। এ সময় বাজারের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রামপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম মানিক বলেন, বাজারে অবস্থিত যুবলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ এড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা করি। কিন্তু পদবঞ্চিতরা ক্ষিপ্ত হয়ে লাটি-সোটা নিয়েআমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গাউছিয়া শপিং সেন্টারসহ বেশ কয়েকটি দোকান ঘরে হামলা চালায়।

তিনি বলেন, তারা আমার প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ থেকে প্রায় নগদ ১৪ লাখ টাকা নিয়ে যায় এবং প্রায় দুই-তিন লাখ টাকার মালামালের ক্ষতি করে।

এসএম মানিক আরো বলেন, যুবলীগের কমিটি গঠনের দিন থেকে এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। আমি বাজারের শান্তি-শৃঙ্খলার লক্ষ্যে তাদের (পদবঞ্চিত) নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান মোল্লাসহ কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলি। কিন্তু তারা গুরুত্ব না দিয়ে, বরং নেতাকর্মীদের উসকে দিয়েছেন। যার ফলে আজ এ সংঘর্ষ এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। তিনি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও নগদ টাকা লুটের বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান মোল্লা বলেন, তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি। যতটুকু জেনেছি, সম্প্রতি ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি দেয়া হয়েছে। এ কমিটিতে যুবলীগের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে, বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের স্থান দেয়া হয়েছে। যার ফলে ইউনিয়ন যুবলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

তিনি বলেন, তারা (পদবঞ্চিতরা) আজ বিকাল ৩টায় প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে। কিন্তু সবাই যুবলীগ নেতা সুজন, নজরুল, রতন ও সোহাগের উপর হামলা চালিয়ে তাদের গুরুতর আহত করে। যার ফলে দু’পক্ষের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গতকাল রাতে থানার ওসি এবং রামপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম মানিক আমাকে ফোন দিয়ে প্রতিবাদ মিছিল বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানান। আমি স্থানীয় যুবলীগ নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে মিছিল না করার অনুরোধ করেছি। কিন্তু মিছিল হবে কি হবে না, তা না দেখে বর্তমান কমিটির লোকজন যুবলীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে গুরুতর আহত করে।

থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন রনি জানান, পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। অভিযোগ দিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। (দৈনিক ইলশেপাড়)

বার্তা কক্ষ
১৮ জুলাই ২০১৯

Share