হ্যাঁ এবার আমরা বঙ্গবন্ধুর বাড়ি মানে সমাধি সৌধের ১ নং গেটের পাশে যাচ্ছি। এ পথটি বেশ লম্বা এবং নান্দনিকতায় পরিপূর্ণ। পীচঢালা এ পথের দুধারে গাছপালা। সেঁটে দেওয়া কিছু ছোট ছোট গাছ আছে। আছে নানা প্রজাতির দেশীয় গাছ। যতদূর এগুচ্ছি ততোই ভালো লাগার মতো পরিবেশগুলো সামনে আসছে।
এবার একদম শেষ মাথায় পৌঁছে গেলাম। চারদিকে তৃণঘন পরিচ্ছন্ন মাঠ, মাঠের ওপারে সুন্দর সামান্য উঁচু টিলার ন্যয় একটা প্রকৃতি!ডানদিকটায় এক গম্বুজ একটি প্রাচীন মসজিদ! এর ভেতরে এবং বাইর দেখলে দর্শনার্থীদের হৃদয় জুড়াবে। বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষদের আমলে তৈরি এই মসজিটি এক কথায় ঐতিহাসিক নিদর্শনের একটি।
বাড়ির প্রধান দ্বার মানে আমরা যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে তার বাম পাশটা আরো বেশ সুন্দর। আমাদের জীবন ভাই কাজী শাহাদাত ভাই, শহীদভাই,গিয়াস উদ্দীন মিলন, রহিম বাদশা, জি এম শাহীন, শোভন মির্জা জাকির, কানন, আজাদ, মোর্শেদ , তালহা, রিয়াদ শান্ত, আজাদ, ইব্রাহীম, হাসান মাহমুদ, অনিক এরা দেখলাম একদম একসাথে বামপাশে ঢুকছেন। সাথে মুখে দাঁড়ি এবং টুপি মাথায় স্থানীয় গাইডারের মতন একজন তাদের সাথে কথা বলছেন এবং একটি দ্বিতল ভবন তাদের সামনে। আমি একটু পেছনটাতেই পড়লাম, কারণ আমার শরীর টা ভালো লাগছিলো না। তাই বাড়ির ভেতর থেকে আসতেই হাফাচ্ছিলাম।
যাক, শেষ পর্যন্ত আমিও ঢুকলাম ঐ ভবনে। হতবাক করে দেয়ার মতো! নীচে সুবিশাল লাইব্রেরি! ঢাকা পাবলিক লাইব্রেরি ছাড়া এতো বড় লাইব্রেরি আমি কেন, আমার চৌদ্দপুরুষ বন্ধবান্ধব দেখেচে কিনা সন্দেহ। বাইরে থেকে প্রথমে একনজর দেখে উপরের তলায় বঙ্গবন্ধু ফটো গ্যালারীতে চলে গেলাম।সেখানে আছে ১৯৪৭-৪৮, ‘৫২ ‘ ৫৪ ‘ ৬২ ৬৬ ‘ ৬৯ ‘৭০, ৭১ এর যতো দুর্লভ ছবি। আছে বঙ্গবন্ধুর ছোটকাল থেকে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি
প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত, বিদেশী সাংবাদিকদের সাথে বঙ্গবন্ধুর ছবি। ঢুকতেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সুবিশাল ছবি। ছবি শত শত!
যেটি কখনো চোখে দেখেনি সেটিও এ গ্যালারীতে! যতোই ঘুরে ঘুরে চাচ্ছি ততোই কষ্টগুলো বাড়ছে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ছি। এই মহামানবকে নাকি জানোয়ারগুলো মেরেছে! কি বলে? যখন ছাত্র ছিলাম তখন কতো না বিকৃত ইতিহাস পড়েছি আর শুনেছি! প্রতিবাদ করার কোন ভাষা ছিলো না আমাদের। দম বন্ধ হয়ে আসতো সে সময় পাঠ্য বই পড়তে গেলে। শুধুই নিরবে হজম করতে হয়েছে। তবে তারপরও আমাদের মুজিব প্রেমিদের যারা বুঝতে পারতাম- তাদের দমিয়ে রাখা যায়নি।!
যাক্ সেখানে অনেক ছবি আমরা তুল্লাম।শহীদ ভাই ইতিমধ্যে নেমে যাওয়ার সময় বল্লেন – ইকবাল তাড়াতাড়ি চলে আসো খেতে হবে এবং চাঁদপুর ফিরতে হবে। ইব্রাহীম আমায় কিছু ছবি তুলে দিলো। শাহাদাত ভাই হেসে বল্লেন – আর কতো হাজার ছবি তোলা হবে?
অবশেষে আমরা উপরতলা থেকে নীচে নেমে এলাম লাইব্রেরিতে। যদিও এর আগে থেকেই অনেকে ঢুকে টেবিলে বসে। আমি ভেতেের গেলাম। বিশাল লাইব্রেরিতে তাকে তাকে ভরা বই। দেখে মনে হয়েছিলো ইংরেজ লেখক মার্ক টুয়েন যদি বেঁচে থাকতো আর তার লাইব্রেরি এবং সে প্রেমটা থাকতো তাহলে তাকে বলতাম – দেখে যাও বেটা একেই বলে লাইব্রেরি এবং এটা আমার জাতির পিতার বাড়িতে।
কতোক্ষণ তাক ঘেটে ঘেটে বই ২/৪ টা বের করলাম। পাতা উল্টাতেই লক্ষনের ডাক চলো চলো যাইতে হইবো। বই রেখে বের হলাম। এবার সিড়ির একটু সম্মুখভাগে এসে ঢুকলাম বৃহৎ মুক্তমন্চে। কী অপরূপেসজ্জিত সিরামিক ইটেঘেরা মন্চ এবং এর চারদিক। প্রায় বিকেল, সূর্য হেলানো। দিনের শেষ ছায়ার প্রথম আভা এসে আমার মুখে পড়ছে। ঘুরে ঘুরে দেখলাম।এখানে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনসহ নানা জাতীয় অনুষ্ঠান হয়।
সেখান থেকে বেরিয়ে এসে দেখি তালহা জুবায়ের বেশ সুন্দর একটা গাছের নীচে বসে আছে। আরে এতো বাদাম গাছ। গাছটির নীচে তাকে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিলো। আমি কি আর লোভ সামলাতে পারি?! বসার আগে তার ছবিটা তুল্লাম। পরে আমার ছবি তুল্লো সে। একটু ক্লান্তি দূর করছি। মারে! এরই মধ্যে একে একে বেশ ক’জন ঃ হাজির। ক্ষানকটা সময় কাটলো বাদাম তলে। অবশ্য তাও কাটতো না, যদি শাহাদাত একটু দেরি করতেন। একটু পরেই দেখলাম তিনি লাইব্রেরি ভবন থেকে বেরিয়ে গেলেন।
কিছু ছবি তুল্লো ইয়াসিন ইকরাম। সবাই হেটে যাচ্ছে আবার বাড়ির বেতর জোর কদমে। আমার পা চলছে না। অনিক এসে বল্লো- ভাইয়া চলেন। শহীদ ভাইয়ের চিক্কুর এহনই শুরু হইবো! বাদাম গাছের নীচ থেকে উঠে বসলাম। তারপর হাটা। অনিক বল্লো – শেষ ২ টা ছবি নেই আমনের। একটা এক গম্বুজ মসজিদটির সামনে, অন্যটি বাড়ির ভেতর ঢুকার প্রবেশ দ্বারে। এবার একটু এগিয়ে দেখলাম আমার অপেক্ষা।
খুব জোর পায়ে হেটে গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, এরই মধ্যে ঘাড় ফিরিয়ে আবার জাতির পিতার সমাধি সৌধের দিকে শেষ একবার তাকালাম। আর মনে মনে বলছি – বেঁচে থাকলে বার বার ফিরে আসবো তোমার সমাধি পরে। ঘুমাও পিতা শান্তিতে।
গাড়ি ছাড়ার আগে শহীদ ভাই নেমে বলে দিলেন, টুঙ্গিপাড়া সদরে আমরা একটা হোটেলে খাবো। এতোক্ষণে আমার মনে পড়লো- দুপুরের খাবারটা যে খাইনি! আরো ১/২ ঘন্টা থাকলেও বোধহয় এমনি ভুলে যেতাম।
যে পথে এলাম সে পথ দিয়েই চলছি। গাাড়ির জানলার পাশ দিয়ে বসা আমি এদিক ওদিক চোখ রাখছি। মনটা ভালো লাগছে না এ কারণে, বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের ১ নং গেটের বাইরে গিয়ে দেখা হয়নি। সেখানটা নাকি বেশ সুন্দর। মধুমতি নদীটার কাছে বসতে পারিনি। যাক্ যা দেখেছি মানে যাকে দেখতে এসেছি তাকে তো দেখেছি কষ্ট আর বেদনার দুয়ারগুলো খুলে! এতেই মন প্রান জুড়ালো।
এমন ভাবনায় আর ক্লান্তিতে একসময় আমরা পৌঁছে গেলাম টুঙ্গিপাড়া সদরের একটি রেষ্টুরেন্টে।
খাওয়া কি হবে আগে বলা হয়নি। আর দুপুর গড়িয়ে বিকেল এখন, এই সময়ে এই এলাকায় কেন, আমাদের এলাকাতেও ভাত খাওয়া কঠিন। কারণ খাওয়া শেষ হয়ে যায় এর আগেই। যাক রেষ্টুরেন্টের লোকজন ভালোই মনে হলো। বল্লেন, ২০/২৫ মিনিট বসুন আপনারা, আমরা আপনাদের ভাত খাওয়াতে পারবো। এখানের পরিবেশটা ভালো লাগলো। তাছাড়া মনে হলো এখানে ভালো মানের আর রেষ্টুরেন্টও অতোটা নেই। যাক শহীদ ভাই ওর্ডার দিয়ে দিলেন রুই মাছ, বর্তা আর ডাল। তো যারা মুরগি খাবে তারা মাছ খেতে পারবে না। আমি মুরগির মাংসই খাবো জানিয়ে দিলাম।
না, খুব অল্প সময়ই ওরা আমাদের খাবার পরিবেশন করতে পারলো। আড়িয়াল খা মধুমতি এবং শরীয়তপুর নদী এলাকার রুই খেয়ে সবাই খুব তৃপ্ত। আমি না খাওয়ায় শহীদ ভাই বল্লো- খেতে পারতা ইকবাল! খুব মজার ছিলো। বল্লাম – ভাই আবার আইলে রুইও খামু মুরগিরও খামু! হেসে দিলেন।!
আমরা প্রায় পৌনে এক ঘন্টা ব্যয় করে নেমে এলাম এবং কিছুক্ষন রেষ্টুরেন্টের নীচে দ্ািড়য়ে বসে গাড়িতে চেপে বসলাম চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে। আবারও ঐ পথে? হ্যাঁ, শহীদ ভাইয়ের সাফ জবাব। কারণ মাওয়া ফেরি পার হয়ে ঢাকা দিয়ে চাঁদপুর গেলে অনেক ঘুরা হবে। হয়তো পার হবে রাত। যাক সভাপতি বলে কথা! তার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত।
অবশ্য এদিকটা দিয়ে গেলে মাদারীপুরে একটা চা বা কফি বিরতি হবে। মন্টু ভাই জোর গলায় বলেছেন – তোমরা এ পথে যদি যাও তাহলে আমার এখানে নামতেই হবে আবার। না হলে আমি ভীষন রাগ করবো। ফারুক ভাই শাহাদাত ভাইয়ের সাথে এ নিয়ে গাড়িতে আলাপ সেরে নিলো। শাহাদাত ভাই বল্লেন, না আসলেই আমাদের যেতে হবে। না হলে তিনি খারাপ ভাববেন। আর যেহেতু আমরা মাদারীপুর দিয়েই যাচ্ছি আর চাঁদপুর তো নিজের শহরে যাচ্ছি! ফেরিও সারারাতই আছে, তাহলে আমরা ওনার সাথে চা খেতে পারি।
এদিকে অন্ধকার নেমে আসছে আসছে, এমন সময় মন্টু ভাইয়ের ফোন- তোমরা কোথায়? মাদারীপুর অংশে ভাই। আর খুব একটা সময় লাগবে না। মাগরিবের ওয়াক্ত হয়ে যাবে যাবে। যাক আমরা মাগরিবের পরই পৌঁছে গেলাম মাদারীপুর শহরে। মন্টু ভাই অপেক্ষা করছিলেন আমাদের জন্য। আমরা সাবেক মন্ত্রী শাহাজাহান খান এমপির নিজবাড়ির আঙ্গিনায় এসে পৌছঁলাম। এখানে একটা সাদা গাড়ি থামানো। আমাদের ধারনা এটাই সিবিল সার্জনের গাড়ি। না সেই তাড়িতে তিনি নেই আছেন চালক। হয়তো ধারে কাছে কোথাও। না বেশ দেরি হচ্ছে তো! এর আগে তিনি বার কয়েক ফারুক ভাইকে লোকেশন বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু গেলেন কই?
আমি এগিয়ে গিয়ে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার সাহেব কই? বল্লেন সেলুনে। যাক একটু অপেক্ষা করি! না মন্টু ভাই আসছেন না গাড়ির কাছে। দূর! বিরক্তি! আবার গিয়ে বল্লাম চালককে ভাই আপনার বস কই? বল্লাম তো সেলুনে চুল কাটায়! কয় কী? আমরা সেলুনে, মন্টু ভাই চুল কাটায় হইলো? এবার আমি জোর গলায় জিজ্ঞেস করলাম এটা কার গাড়ি? এবার সে বল্লো এটা এডিসি রেভিনিউ স্যারের গাড়ি। তিনি ভাই সেলুনে দেরী হইবো! হইলো নি কারবার!?
হঠাৎ মন্টু ভাইয়ের ফোন ফারুককে কই তোমরা? আমি তোমাদের জন্য দাঁড়িয়ে? আরে আমনে কোন জাগায় দাঁড়াইছেন ভাই? আরে লেকের পাড়ে। ভাসমান একটা রেষ্টুরেন্টের গেেেট এসপি অঅফিস লাগুয়া। তোমাদের সামান্য সামনে। এদিকে শহীদ ভাইয়ের টেম্পারেচার বেড়ে যাচ্ছে।
অবশেষে মন্টু ভাইকে দেখলাম জায়গা মতো দাঁড়িয়ে । আমাদের রেষ্টুরেন্টের ভেতরে নিয়ে গেলেন। চমৎকার পরিবেশ। এখান থেকে পুরো লেকটার অপরূপ চেহারা দেখার মতো। বসলাম আমরা। কিছুক্ষণের মধ্যে চলে এলো বারগার। তারপর কফি। কথা হলো অনেক।
এখানে ৪০ মিনিটের মতো মন্টু ভাইয়ের আথিয়েতা গ্রহন করে মাদারীপুর ছাড়লাম। সত্যিই তার আথিয়তা তুলনাহীন।
এবারে ফেরার পথে,,
শরীয়তপুরের নরসিংহপুরের উদ্দেশ্যে আমাদের গাড়ি ছাড়লো। আল্লাহ! রাস্তার কথা,মনে হইলে কইল্জায় দেয কামড়! শোভন তালহা হাবিব ভাই তাগো বল্লাম ! ভাই রাস্তা কী ঐ হেইডাই কেন? সবাই হেসে উঠলো আমার কথায়।
অল্পদূর আগাতেই হঠাৎ আমাদের গাড়িটা থামিয়ে দিলো ড্রাইভার। কি হলো ড্রাইভার সাহেব গাড়ি থামলো কেন? বল্লো পেছনের গাড়িটা সামনে যাবে। কারণ কী? আমরাই সামনে থাকি? না, ঐ ড্রাইভাররা রাস্তা চিনেন বালা। হেইতে গো একজন আমার সামনে থাকলে বালা ভাই! আরে আল্লাহ! যাক ড্রাইভার বলে কথা!
১০ মিনিট পরই পেছনের একটা গাড়ি যেটিতে রহিম শহীদ শাহীন তারা আছে সেটি সামনে এগুনোর পরই আমাদের এবং সাদা হাইসটা ছুটলো। এখনো মাদারীপুরের তেলের নানা রাস্তায় এরপর শরীয়তপুরের ভেদের গন্জের অনেকখানি ভালো রাস্তা। যাক হেলান দিয়ে একটু আরাম করা যায়।
এসি চলছে, গরমটা সেদিন অনেক থাকলেও রাতে একটু তুলনায় কম। এতো ক্লান্ত শরীর বুঝানো দায়। ফারুক ভাই বললো – আমনে ঘুমান! ফেরি আইলে জাইগ্গেন কেন? আমরা আছি। কেমন দুষ্টামি কথারে বাবা!
যাক এটাকে ঘুম বলে না ঝিমুনি বলে জানিনা, দুই চোখ খোলতে পারছিনা। তবে আশেপাশে যে প্রচুর কথা হচ্ছে, সেটা বুঝতে পারছি। কানে বাজছে।
যাক্, ঘুমের কিছুটা ব্যঘাতে কথাও অনেক ভালো! কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ ধাক্কা কাৎ গাড়ির ব্রেক কষা! এ তো অসহ্য। হে এমনটা যখন শুরু হলো বুঝতে পারলাম – ঐ আজরাইল এলাকা শুরু! শুনতে পাচ্ছি ফারুক ভাই শাহাদাত ভাইকে বলছে – পাটওয়ারী ঘুমায়! ঐ মিয়া কি কন? আমনে সেনা ঘুমান! এই অস্থির পরিবেশে কি আর ঘুমানো যায়? তবু্ওু ভালো! অন্ততঃ ড্রাইভার যেন এটি না বলেন ভাই গাড়ি বন্ধ হইয়া গেছে, নামেন এবং ঠেলেন!
কিছুই বলতে হয়নি এসব! আল্লাহ রহমতে আমরা সোয়া দশটার মধ্যেই ঘাটে পৌছে গেলাম।
যাওয়ার সময় যে ফেরিতে এসেছিলাম, এটা সেটি না! তবে এটা ওটার চেয়ে মনে হলো একটু বড়।
শহীদ ভাই বল্লেন, দোতলায় গিয়ে বসো ইকবাল এবং সবাইকে বসতে বলো। ভিআইপি কেবিনটা খুলে দেবে। মাশাল্লাহ! এটাতেও ভিআইপি কেবিন আছে? কেবিন মানে একটা মাঝারি প্রথম শ্রেনি। সোফা আছে।
বয় এসে সেটা খুলে দিলো। আমরা গিয়ে বসলাম। শাহীন বড়রা বসতে পারবে না বলে গামছা বিচালো মেঝেতে। কাননও তাই। বুঝলাম না! যাওয়া আসার সময় কানন শাহীন দুজনেরই গলায় ছিলো গামছা।দিনের বেলায় কাননকে একবার ঠাট্টা করে বলেই ফেলছিলাম- কিরে কাদের সিদ্দিকী কী চাঁদপুরে তার দলের ছাকা খুল্লো না কিরে? সে হেসে না ভাই বলে গামছার উপকারিতা সম্পর্কে কি যেন একটা বল্লো।
ফেরি ছেড়েছে চাঁদপুরের হরিনা ঘাটের উদ্দেশ্যে। একটা সময় শহীদ ভাই বাইরে থেকে এসে বল্লো রাতের খাওয়া হবে ক্যাফে কর্ণারে , আমি লতিফকে বলছি। না কিসের ক্যাফে কর্ণারে? একসাথে ২/৪ জনের জোরালো প্রতিবাদ – না। আমি বল্লৃাম শহীদ ভাই আমরা সবসময় খাই ক্যাফে আগামীতেও, তবে আজকে না! তাইলে আইকজকা কই খাবি? শহীদ ভাইয়ের উত্তরে বল্লাম ফেরি ঘাটের হোটেলে এবং ইলিশ ভাঁজা ডাল আর কিছু না। ভাবলা যতোটা চেইতা যাইবো তার সিকি ভাগও না। তাইলে ঠিক আছে। তয় এতো জনের খাবার কী হেরা আমগো খাওয়াতে পারবো?রহীম বাদশা বল্লো এটা কোন ব্যাপারই না! এই সুমন, ফোন করেন ফেরিঘাটে- আমনে তো এই পথের অনেকেরে চিনেন, যেহেতু আমনে বড়ি যান এই পথে। সুমন ফোন দিলো ঘাটে। ধরলো হোটেলের মালিক। কথা হলো। বল্লো আমি খাওয়াতে পারবো। বলা হলো গরম ভাজা ইলিশ আর ডাল ভাত।
আমি এই অবসরে একটু দোতলায় সারেং এর কাছে গেলাম। বেশ বাতাসও সেখানে। গিয়ে দেখলাম আমি না শুধু অনিক রানা ভাই সালাম ভাই ইব্রাহীম সবাই দোতলা ছাদে হাটাচলা করছে। নদীর দিকে তাকিয়ে দেখি গুটগুটে অন্ধকার আবার শহর বন্দরের মতো আলো। লন্চগুলো দূরে দূরে প্রচণ্ড আলো জ্বালিয়ে বরিশাল ঢাকা চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে। কোথায়ও মাঝ নদীতে ইলিশের নৌকাগুলো টিম টিম আলো নিয়ে। এ এক চমৎকার আলো আধার মনোর দৃশ্য। ইব্রাহিম আমার কিছু ছবি তুলে দিলো। ভাসতে ভাসতে একসময় শারেং বল্লো ঐ তো ঘাট!
হ্যাঁ, ঐ তো দেখা যাচ্ছে চাঁদপুর – শরীয়তপুর ফেরিঘাটের চাঁদপুর অংশের হরিনাঘাট। যাবার অর্ধেক সময়ও লাগলো না আসতে! সামনে দেখছি আলো, আর পেছনে মেঘনার ওপারের গুটগুটে কালো আভা আমার চোখে পড়ছে। এইতো ভোরেই না এ ঘাট পেরুলাম ওপারের উদ্দেশ্যে। তখন এপার ওপার দুটোতেই ছিলো সকালের আলো।
পেছনে ইব্রাহীম আস্তে করে বল্লো – নামেন ভাই!
তারপরও দাঁড়িয়ে থাকলাম ৩/৪ মিনিট। ভাবলাম, দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত জাতির পিতার সমাধি পরে জিয়ারত আর ফুলেল শ্রদ্ধান্জলি রেখে আসতে পারলাম! নিজেকে বা আমরা যারা গেছি তাদের কিছুটা হলেও যেন দায়মুক্ত মনে হচ্ছে। তবে অন্যদের বিষয়টা আমি আমার নিজের হয়ে অতোটা বলতে পারছি না, কিন্তু এই আমি ইকবাল অনেকটাই গর্বিত যে, আমি চাঁদপুর প্রেসক্লাবের আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর চিরশয়ন পাশ আর তার পৈতৃক বিটাবাড়ি পাড়ায়ে এসেছি।
যাক্ ধীরে ধীরে নামলাম।
সবাই জড়ো হলাম। রাত ১১ টার কিছু বেশি সময়। শহীদ ভাই বল্লো, সুমন কোন্ হোটেল রে? সুমন রেষ্টুরেন্টের সাথে কথা বল্লো। অল্প দূরেই নদীপারে বোধকরি মাচার উপর হোটেলটা। নাম তার চরমোনাই হোটেল। বেশ সুন্দর দেখালো। যদিও ইট পাথরের গড়া না। একেবারে যোল আনা বাঙালিয়ানার হোটেল। খোলা মেলা। দামি কোন টেবিল চেয়ার না। তবে বেশ কটি ফ্যানও আছে।
আমরা গিয়ে বসলাম। হোটেল ওয়ালা ভেবেছিলেন আমাদের দেরি হবে। তাই ভেবে একটু রান্না, বিশেষ করে ইলিশ ভাজাটা বাকি রেখেছিলেন। বল্লেন – বসেন ১০/ ২০ মিনিট । ভাজতে যতোটা সময়। আমরা বল্লাম ঠিক আছে।
হ্যাঁ, কিছুটা সময় পরেই পরিবেশন শুরু হলো। তাজা ইলিশের ঘ্রাণ, একেবারে তার আবাস আঙিনায় আমাদের নাকে এসে লাগছে! যদিও আমার ইলিশের উপর ততোটা লোভ নেই,বাসায় আজকাল ইলিশ রান্না বা ভাজি হলে ততোটা আমি খাই না। কিন্তু আজ এই ঘ্রাণে মনে হলো যা বেশি তা ই খেয়ে ফেলি! কিন্তু নিয়মের বাইরে গিয়ে! তারপরও এলো একটুকরো বাড়তি ইলিশ। এটা বোধহয় শহীদ ভাইয়ের ভালোবাসার নিদর্শনের এক টুকরা! খুব গুজিয়ে বাড়তি টুকরোটা আমায় দিলেন। আমি তো থ! বল্লাম শহীদ ভাই বলৃলো খা! বেশী কতা কইছ না। খাইয়া তারাতারি উঠ্। আমি দেখলাম ডাল দিয়ে আমিও খাচ্ছি আমার সামনে মিলন ভাই। পাশে ১ জন। পরে টুকরোটাকে ভেঙে মিলন ভাইকে দিলাম অর্ধেক আর খেলাম অর্ধেক।
খাওয়া শেষে সবাই গাড়ির সামনে। আমি দেখলাম একটা দোকানে সাগর কলা ঝুলছে। বেশ নাদুসনুদুস।! বাসায় খালি হাতে যাওয়াটা টিক হবে না। ছোট আর ছেলেটা ধরবে প্যাঁচিয়ে। সাগর কলা তাদের পছন্দ। নিলাম ৫ হালি ১ শ টাকায়। একদম মুন্সিগন্জের সাগর। এরপর উঠে বসলাম গাড়িতে।
হাতে ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে দেখি ঠিক রাত ১২ টা কাটায় কাটায়। পরদিন আর গড়ালো না! যে যার বাসায় যাচ্ছে। আমি রিক্সার জন্য অপেক্ষা করে না পেয়ে হেটে চল্লাম। ভাবলাম হেটেই যাবো বাসায়।
হাটছি আর সেই পেছনের ভাবনাগুলো এসে জড়ো হচ্ছে। শোকের সাথে একটা সবের মিলনে এক জায়গার যাওয়া আসার পথে নিরোল্লাস আনন্দ মিশে যে আবহ তৈরি হওয়ার সেটা পরিপূর্ণতা পেয়েছে। মুখখানি ভেসে উঠে আমার জাতির পিতার। কখনো হাসির কখনো বেদনার বদন তাঁর। বাসায় ঢুকতেই যেন বল্লাম- জাতির মুজিব তোমায় ভালো বাসি, ভালোবাসবো এবং তোমায় পৃথিবীর সব মানব ভালো বাসে। কারন সৃষ্টিকরতা তোমায় জন্মায়ছিলো মানবতার কল্যাণে। তোমায় যারা ঈর্ষা করে তারা মানবতা শিখতে চায়। আর যারা তোমায় হিংসা করে তারা পৃথিবীর শত্রু , মানবতার শত্রু। হে ক্ষনজন্মা মহামানব তোমায় বিনম্র শ্রদ্ধা
জাতির পিতার জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ার পথে-৩য় পর্ব
জাতির পিতার জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ার পথে-২য় পর্ব
জাতির পিতার জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ার পথে-১ম পর্ব
লেখক : ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী,
সাবেক সভাপতি, চাঁদপুর প্রেসক্লাব,
চাঁদপুর প্রতিনিধি, দৈনিক সমকাল
প্রকাশক ও সম্পাদক : চাঁদপুর প্রতিদিন