Home / শীর্ষ সংবাদ / ৯ মাসের বেতন না পেয়ে ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলটে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা
kazol-ar-pilot

৯ মাসের বেতন না পেয়ে ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলটে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা

সদ্য জাতীয়করণ হওয়া চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা বকেয়া ৯ মাসের বেতন না পাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষককে তার কক্ষের ভেতের রেখেই তালা দেয়ার খবর পাওয়া গেছে।

শুধু তাই নয়, স্কুল প্রাঙ্গনেই মাইকিং করে শিক্ষার্থীদের চলমান টেষ্ট পরীক্ষা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন বেতন বঞ্চিত শিক্ষকবৃন্দ। ২১ অক্টোবর সোমবার দুপুরে ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে ।

এদিকে খবর পেয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ্ আলী রেজা আশরাফী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়েন্ত্রণে আনেন।

পরবর্তীতে প্রশাসনের অনুরোধে শর্ত সাপেক্ষে ওই তাল খুলে নেয় বিক্ষুদ্ধ শিক্ষকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসার পর পরীক্ষার্থীদের টেষ্ট পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় বলাবলি হচ্ছে দীর্ঘ বছরের ফরিদগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী এ আর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য মূলত রক্ষা করবে কে ?

তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল বলছেন, পরিকল্পিত ভাবে স্কুলে মাইকিং করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ করতে চেষ্টা করেছে ২জন শিক্ষক।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানায়, স্কুলটির শিক্ষকরা নিয়মিত ভাবে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক বেতন পাচ্ছে না। গত কয়েকমাস আগে শিক্ষকরা তাদের কোচিং ফির বেতনের টাকা না পাওয়ায় দিনদিন প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজলের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে।

ওই কোচিং ফির টাকা না পেয়ে প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজলের বিরুদ্ধে গত কয়েকমাস আগে স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছেও অভিযোগ দেয়া হয়েছিলো।

একটি সুত্র অবশ্য জানিয়েছে, সাবেক এমপি ড. শামছুল হক ভুঁইয়া উক্ত স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন। সেই সুবাদে সাবেক ওই এমপি এবং প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিনের মধ্যে রাজনীতিক সম্পর্ক গভীর থাকায় কেউ হয়রানীর ভয়ে প্রকাশ্যে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু বলতে চায়নি।

স্কুল সুত্রে জানা গেছে, ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলটিতে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ১২শ। এ ছাড়া এমপিও ভুক্ত শিক্ষক আছেন ১৯ জন এমপিও বিহীন অর্থাৎ অস্থায়ী শিক্ষক রয়েছে ১২ জন। মোট ৩১ জনের সরকারি বেতনের বাইরে প্রতিমাসের প্রাতিষ্ঠানিক বেতন প্রায় লক্ষাধিক টাকা।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সোমবার দুপুরে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর টেষ্ট পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুটি চলছিল। এমন সময় প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে হাছান গাজী ও জাকির পাটওয়ারী তাদের স্কুলের প্রাতিষ্ঠাানিক বেতন চায়।

এ বেতন না পেয়ে কথাকাটির এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষকের রুমে প্রবেশের কলাপসিপল গেইটে তালা মেরে দেয়। এ নিয়ে স্কুলে প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হলে ওই স্কুলের খন্ডকালিন অস্থায়ী শিক্ষক ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহাবুব আলম সোহাগ প্রধান শিক্ষকের পক্ষ হয়ে হাছান গাজীর সাথে তর্কে ঝড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে দু জনের মধ্যেই উক্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হয়।
এ নিয়ে ওই স্কুলেই বিক্ষুদ্ধ শিক্ষক হাছান গাজী বলেন, আমরা শিক্ষকরা স্কুল থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বেতন পাচ্ছি না । দীর্ঘ দিন থেকে আমাদের বেতন না দিয়ে প্রধান শিক্ষক তার স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার বলে শিক্ষকদের প্রাপ্য বেতন থেকে বঞ্চিত করেই আসছে। শুধু তাই নয় ,এই স্কুলেরই একজন অস্থায়ী শিক্ষক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহাবুব আলম সোহাগ ও প্রধান শিক্ষক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি রফিকুল আমিন কাজল দুজনে তাদের ক্ষমতার দাপটে সকল শিক্ষকের অধিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করে আসছে।

মাহাবুব আলম সোহাগ আমাকে মারার প্রস্তুতি নিতে দেখে আমি সাথে সাথে, ইউএনও এবং থানার ওসি সাহেবকে মোবাইলে জানাই।

স্কুলটিতে দীর্ঘ দিনের শিক্ষক জাকির পাটওয়ারী বলেন, আমাদের ৯ মাসের বকেয়া বেতন না দেয়ায় বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষকের রুমে তালা দিতে বাধ্য হয়েছি। এতে সকল শিক্ষক একমত হলেও হয়রানী কিংবা চাকুরি হারোনোর ভয়ে প্রকাশ্যে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না সাধারন শিক্ষকরা।

খণ্ডকালিন শিক্ষক মাহাবুব আলম সোহাগ তার বিরুদ্ধে হাছান গাজীর অভিযোগটি সম্পূর্ন ভিত্তিহীন দাবী করে বলেন, শিক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষা বন্ধ করার ঘোষণা দেয় এই শিক্ষক। স্কুলে বেআইনী ভাবে এমন ঘোষণার কারন জানতে গেলে হাছান গাজী আমার সাথে তর্কে ঝড়িয়ে এক পর্যায়ে সে আমার গায়ে হাত তুলে ।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল এ প্রতিনিধিকে জানান, স্কুলের প্রাতিষ্ঠিানিক বেতন দিতে শিক্ষকের সাথে আজ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিকল্পিত ভাবে শিক্ষক হাছান গাজী ও জাকির পাটওয়ারী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র অন্যান্য শিক্ষকদের হাত থেকে কেড় নিয়ে যায়। আমি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে উক্ত বিষয়টি জানিয়েছি।

বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মমতা আফরিন বলেন, উক্ত বিষয়টি জেনে আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও পুলিশ পাঠিয়েছি স্কুলে। তবে শিক্ষকের বেতনের বিষয়টি সুরাহা করতে হলে ১৫দিন সময় লাগবে। তারপরও আমি আজ ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার সরেজমিনে স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের সাথে তার প্রাপ্য বেতন বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো।

প্রতিবেদক : শিমুল হাছান, ২১ অক্টোবর ২০১৯