শীর্ষ সংবাদ

হাজীগঞ্জে কেরোসিনের আগুনে গৃহবধূ হত্যা : স্বামী শ্বাশুড়ী ও ভাসুর আটক

কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়ার ঘটনায় হাজীগঞ্জের গৃহবধূ দীপিকা আচার্য্য মনিকা ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (৩ মে) সন্ধ্যায় মারা গেছেন।

এর আগে ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে স্বামী বিপুল আচার্য্য ও ভাসুর সজল আচার্য্য কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে মনিকাকে হত্যার চেষ্টা করে পরিবার সূত্রে থানায় অভিযোগ করা হয়।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানা অফিসার ইনর্চাজ মো. আলমগীর হোসেন রনি গৃহবধূর মৃত্যুর বিষয়টি চাঁদপুর টাইমসকে নিশ্চিত করে জানান, দীপিকার শরীরের প্রায় ৯২ শতাংশ জ্বলসে গেছে। মৃত্যুর কাছাকাছি থাকা এই গৃহবধূ চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ ও ভাই অরবিন্দ আচার্য্যের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে তার স্বামী, শ্বাশুড়ি ও ভাসুরকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় গৃহবধূর দেয়া জবানবন্দিতে উঠে এসেছে পাষণ্ড স্বামী ও তার পরিবারের নির্মমতার চিত্র। স্বামী বিপুল আচার্য্যের দেয়া আগুনে পুড়ে গেছে শরীরের শতকরা ৯২ ভাগ অংশ।

আগুনে জ্বলসানো গৃহবধূ হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড বকুলতলা রোডের রঞ্জিত আচার্য্যের ছেলে বিপুল আচার্য্য স্ত্রী দীপিকা আচার্য্য মনিকা। দশ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। তার বাবার বাড়ি নরসিংদী জেলার ছোট মাধবদী উপজেলার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড। তাদের দাম্পত্য জীবনে তিন বছরের শিশু কন্যা রয়েছে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২ মে) রাতে হাজীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন গৃহবধূর ভাই অরবিন্দ আচার্য্য।

অভিযোগে বলা হয়, গত ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে স্বামী বিপুল আচার্য্য ও ভাসুর সজল আচার্য্য কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে মনিকাকে হত্যার চেষ্টা করে। নিছক এই ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দুর্ঘটনা বলে প্রচার করা হয়। দুর্ঘটনার পর মনিকাকে প্রথমে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরবর্তীতে কুমিল্লা মেডিকেলে নেয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটি ভর্তি করানো হয়।

বড় ভাই অরবিন্দ আচার্য্য বলেন, মোবাইল ফোনে বোনের দুর্ঘটনার খবর শুনে ঢাকা মেডিকেল বার্ণ ইউনিটে গিয়েছি। সেখানে মনিকা জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘মারধর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় তার স্বামী ও ভাসুর। ঘটনার পর থেকে আমার সাড়ে ৩ বছরের ভাগনীকে নিয়ে সজলের স্ত্রী দিপা পলাতক রয়েছে।

তিনি আরো জানান, ‘আগুন লাগানোর পূর্বে তাকে মেরে ফেলার জন্য মারধর করেছে। তার মাথা ও কপাল ফেটে গেছে। যে রুমে দীপিকাকে নির্যাতন করা হয়েছে, ওই রুমের দেয়ালের সাথে রক্তের দাগ রয়েছে। বিপুল, সজল, তাদের মা সন্ধ্যা রাণী আচার্য্য, সজলের স্ত্রী দিপা আচার্য্য মিলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার বোনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।’

হত্যার কারণ জানতে চাইলে অরবিন্দ আচার্য্য বলেন, ‘বিপুল মাদকাসক্ত। তাদের পরিবারে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। সে ঘরে বসেই ইয়াবা সেবন করতো। সজল ও বিপুলদের অনেক টাকা মূল্যের একটি জায়গা আছে। কয়েক মাস যাবত ওই জায়গা বিক্রয়ের চেষ্টা করে আসছে সজল ও বিপুল। আমার বোন দীপিকা ওই জায়গা বিক্রয়ের বাঁধা দিয়ে আসছিল। এছাড়াও তাদের পারিবারিক কলহ ছিল দীর্ঘ দিনের।’

জানতে চাইলে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগির হোসেন রনি আরো বলেন, সজলের স্ত্রী দিপা আচার্য্যকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ভাসুর সজলকে হাজীগঞ্জ বাজার এবং স্বামী বিপুল ও শ্বাশুড়ি সন্ধ্যা রাণী আচার্য্যকে ঢাকা মেডিকেল থেকে আটক করে চাঁদপুর আদালতে হাজির করানো হয়। পরে আদালত তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

প্রতিবেদক- মনিরুজ্জামান বাবলু
৩ মে ২০১৯

Share