Home / শীর্ষ সংবাদ / মতলবে এতিমখানার ছাদ ধ্বসে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত
Chad-dhos

মতলবে এতিমখানার ছাদ ধ্বসে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজীকান্দি আল-আমিন এতিমখানার তিনতলা ভবনের দোতলার ছাদ ধসে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাত পৌনে দশটার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। আহতরা সবাই ফরাজীকান্দি কমপ্লেক্সের আল-আমিন এতিমখানার ছাত্র। আহতদের মধ্যে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মতলব দক্ষিণ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে অন্তত ৩০ জনকে। গুরুতর অবস্থায় চাঁদপুর সদরেও পাঠানো হয়েছে।

এ সংবাদ পাওয়ার পর মতলব উত্তর উপজেলার রংধনু সমাজ সেব সংগঠনের নামে একটি সংগঠন দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে এদে উদ্ধার কাছে সহযেযাগিতা করেন।

এদিকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এতিম শিক্ষার্থীরা হলেন-সিহাব (১৪), আইনুদ্দিন (১৩), নাহিদ (১৩), সাব্বির (১৩), ইব্রাহীম (১৩), তরিকুল ইসলাম (১৩), আব্দুল আজিজ (১৩), সজিব (১৫), আব্দুল্লাহ (১৪), রহমান (১৫), নাহিদ (১৪) ও সিনিয়র সহকারী মৌলভী মোহাম্মদ হোসেন (৫০)। ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নেয়া শিশুর নাম হচ্ছে সিয়াম (১০)। বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১২জন। গুরুতর আহত একজন শিশু শিক্ষার্থীকে ঢাকা রেফার করা হয়েছে।

এ দূর্ঘটনার খবর পেয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও দুই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ফরাজীকান্দি ওয়েশিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মোঃ আতাউল করিম মুজাহিদ ও প্রত্যক্ষদর্শী সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় দিবস উপলক্ষে ফরাজীকান্দি আলামিন এতিমখানা থেকে একটি টিম জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে, একটি টিম জেলা স্টেডিয়ামে এবং একটি টিম মতলব উত্তর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করতে পাঠানো হয়। সেই কারণে টিম লিডার মোহাম্মদ হোসেন সেই এতিমখানার কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে টিম-মিটিং করছিলেন। এমন অবস্থায় এতিমখানার বর্ধিত অংশের দোতলার ছাদ ভেঙে পড়ে। তবে এ তিনতলা ভবনটি বহু পুরনো ছিলো। এটি আগেই ঝঁকিপূর্ন ও পরিত্যক্ত ছিলো। এতিমখানায় আড়াইশ শিক্ষার্থী ছিলো বলে জানা গেছে।

ফরাজিকান্দি কমপ্লেক্সের মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ শহীদ উল্যাহ বলেন, এতিমখানার সকল ছাত্রদের মাদ্রাসার আভ্যন্তরনী পরীক্ষা শেষ হয় শনিবারে। পরদিন রোববারে ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষ্যে প্রস্তুতির জন্য কাউকে ছুটি দেয়া হয়নি। প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সকলকে কথা বলার জন্য ডেকে আনা হয় ঘটনাস্থলে। একত্রিত হলেই দূর্ঘটনার কবলে পড়ে শিক্ষার্থীরা। ঘটনার পরেই স্থানীয়দের ও মাদ্রাসার অন্য শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় আহতদের মতলব উত্তর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় ১৭জন। এছাড়াও কিছু আহত ছাত্র আনন্দ বাজার ও ছেঙ্গারচর বাজারে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়।

এই ঘটনার সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার। তিনি পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে আহত শিশুদের চিকিৎসার তদারকি করেন। এছাড়া মতলব উত্তর থানার ওসি নাসির উদ্দিন মৃধা ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। একই ভাবে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা হক।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ শওকত ওসমান বলেন, ঘটনার পরেই আমরা ৩ হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলের সাথে সার্বিক যোগাযোগ রক্ষা করেছি। ঘটনাস্থলের ওই ভবনটি পূর্ব থেকেই পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

রাত ১২টার পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে মতলব উত্তর ফরাজিকান্দি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান, পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুবুর রহমান। এ সময় এনএসআই চাঁদপুর কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক মোঃ আজিজুল হক, চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মো. আনোয়ারুল আজিম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছামিউল ইসলাম, চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসিম উদ্দিন, ওসি তদন্ত মো. হারুনুর রশিদ, পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রব উপস্থিত ছিলেন।

রাত ১২টার পরে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সিডিউল চিকিৎসক ছাড়াও এসব শিক্ষার্থীদের স্পেশাল চিকিৎসা দেয়ার জন্য দুইজন চিকিৎসক তাৎক্ষনিক হাসপাতালে উপস্থিত হন। আবাসিক মেডিকেল অফিসার শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করেন। এছাড়াও মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহতদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করনে তাদের চিকিৎসায়ও শিক্ষার্থীদের স্পেশাল চিকিৎসা দেয়ার জন্য তিনজন চিকিৎসক সার্বক্ষনিক চিকিৎসা সেবায় ছিলেন।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, ঘটনাস্থলসহ সকল আহতদের সাথে কথা বলা হয়েছে। তারা এখন ভাল আছে। যারা গুরুতর আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আমরা সকলে আহত শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষনিক চিকিৎসার খোঁজ খবর রাখছি।

প্রতিবেদক : খান মোহাম্মদ কামাল, ২৩ নভেম্বর ২০১৯