রপ্তানি উন্মুক্ত করার ঘোষণার পর দেড় মাসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানগুলো মালয়েশিয়া,সৌদি আরব,যুক্তরাজ্য, জাপান, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে এ চাল রপ্তানি করবে। আরও ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১৫ হাজার টন চাল রপ্তানির অনুমোদনের আবেদন করেছে। এর মধ্য দিয়ে আবারও চাল রপ্তানিকারক দেশের খেতাব পাচ্ছে বাংলাদেশ।
কৃষক পর্যায়ে ধানের নায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ১১ জুলাই চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে ২ লাখ টন সেদ্ধ চাল রপ্তানি করার বিষয়ে পরিপত্র জারি করে। পরিপত্রে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদন নিয়ে একজন ব্যবসায়ী একবারে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টন চাল রপ্তানি করতে পারবেন। প্রথমবার অনুমোদন নেওয়া চালের রপ্তানি শেষ হলে ওই ব্যবসায়ী পুনরায় রপ্তানির আবেদন করতে পারবেন।
জানা গেছে, অভিজাত ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, শামসুল হক অটো রাইস মিলস, কৃষাণ এন্টারপ্রাইজ,এস এম এন্টারপ্রাইজ, মজুমদার রাইস মিল, রশিদ অটো রাইস মিলস, নওশিন অ্যাগ্রো, এম ইসলাম কোম্পানি ও ইন্টার ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ ইতিমধ্যে ৫০ হাজার টন চাল রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে।
এ ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠান ৭৪ হাজার টন চাল রপ্তানির অনুমোদন চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি এসব চাল দেশের বাজারে বিক্রির জন্য একসময় আমদানি করেছিল। কিন্তু এখন দেশের বাজারে চাহিদা না থাকায় রপ্তানি করতে চাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোম্পানিটির রপ্তানির অনুমোদন বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমদানি করে রপ্তানি করার প্রস্তাব দেয়ায় সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর আগে ১৯৯৯ সালে প্রথম চাল রপ্তানিকারক দেশের খাতায় নাম লেখায় বাংলাদেশ। কিন্তু ২০০৪ সালেই আবার আমদানি করতে হয় বাংলাদেশকে। এরপর থেকে প্রতিবছরই ধারাবাহিকভাবে চাল আমদানি করতে হয়।
২০১৪ সালে সরকারিভাবে শ্রীলঙ্কায় ৫০ হাজার টন চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত হয়। তবে ২৫ হাজার টন রপ্তানির পর তা বন্ধ হয়ে যায়। রপ্তানি নীতি আদেশ অনুযায়ী,২৫ ধরনের সুগন্ধি চাল ছাড়া বাংলাদেশ থেকে চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ। রপ্তানি আদেশে সংশোধন এনে সেদ্ধ চাল রপ্তানির সুযোগ দেয়া হয়েছে, যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে আতপ চালের চাহিদা বেশি।
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন খাদ্যশস্য প্রয়োজন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে ৩ কোটি ৭৩ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ কোটি ৭৭ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হওয়ার কথা। সে হিসাবে দেশে ২৭ লাখ টন খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকবে। এর সঙ্গে যোগ হবে আমদানি করা খাদ্যশস্য। বোরো মৌসুমে কৃষক যখন ধান বিক্রি করেন। তখন চালের বিপুল মজুদ থাকার তথ্য তুলে ধরে ধান কেনা অনেকটা কমিয়ে দেন মিল মালিকরা।
তাতে ভরা মৌসুমে ধানের দাম ৪৫০-৫০০ টাকায় নেমে এলে ধান চাষে কৃষকের লোকসানের বিষয়টি আলোচিত হতে থাকে। তখন ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে মিল মালিকরা চাল রপ্তানির আবেদন করে সরকারের কাছে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়,খাদ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করে রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টন খাদ্যশস্য প্রয়োজন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে ৩ কোটি ৭৩ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ কোটি ৭৭ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হওয়ার কথা। সেই হিসাবে দেশে ২৭ লাখ টন খাদ্যশস্য উদ্ধৃত্ত থাকবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ টন । কিন্তু উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ৩ লাখ টন। শুধু বোরো নয়,মৌসুমে আমন ও আউশের উৎপাদনও অনেক ভালো হয়েছে। ফলে স্বল্প পরিমাণে চাল রপ্তানিতে সমস্যা হবে না।
বার্তা কক্ষ
২৫ আগস্ট ২০১৯