চাঁদপুর

চাঁদপুরের এসপি জিহাদুল কবির এখন অতিরিক্ত ডিআইজি

চাঁদপুর পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক  (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন।  রোববার  (১৮ আগস্ট) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক পরিপত্রে  এ তথ্য জানানো হয়েছে।

চাঁদপুর পুলিশ মিডিয়া সেলে  অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল জাহেদ পারভেজ চৌধুরী এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘প্রাথমিক সিদ্ধান্তে আমাকে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে ঢাকা পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ন্যস্ত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত চাঁদপুর পুলিশ সুপারের দায়িত্বে নিয়োজিত আছি।’

জিহাদুল কবির খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ২০ তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশ বিভাগে যোগদান করেন। বাগেরহাট জেলার এ কৃতি সন্তান ব্যক্তি জীবনে এক কন্যা ও ছেলে সন্তানের জনক। তাঁর সহধর্মিণী সাদিয়া কবির ইডেন মহিলা কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন। বর্তমানে গৃহীণী।

এক নজরে অতিরিক্ত পুলিশ-মহাপরিদর্শক (পুলিশ সুপার) জিহাদুল কবির

১৯৭৫ সালের ৪ জানুয়ারি বাগেরহাট জেলার কাজাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জিহাদুল কবির। বাবা আহম্মদ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মা আয়েশা গৃহিণী। ছয় বোন-তিন ভাইয়ের সংসারে জিহাদুল সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই বাবার আদর্শকে বুকে লালন করে পথ চলেন। পড়াশোনা তাকে বেশ আকৃষ্ট করতো। তাই সব কিছুর উপরে পড়াশোনাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। খুব ডানপিটে স্বভাবের না হলেও ক্রিকেটের প্রতি খুব ঝোঁক ছিল তার। পাড়ার মাঠগুলো চষে বেড়াতেন।

চাঁদপুর পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির।

শিক্ষায় ঝোঁক: – পরিবারের সবাই উচ্চশিক্ষিত। যেহেতু তিনি ছোট, তাই মনে সব সময়ই চিন্তা থাকতো তাকেও উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে হবে। ১৯৯০ সালে কাড়াপাড়া শরৎচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৯২ সালে বাগেরহাট পিসি কলেজ থেকে এইসএসসি পাস করেন। ১৯৯৭ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ইন ফরেস্টি বিভাগে বিএসসি পাস করেন।

প্রকৌশলীর স্বপ্ন:– ছোটবেলা থেকেই জিহাদুল কবিরের ধ্যান-জ্ঞান ছিল একজন প্রকৌশলী হওয়া। কিন্তু বড় হয়ে ইচ্ছে বদলে মনযোগ দেন বিসিএস পরীক্ষায়। টানা দু’বছর ঢাকায় চার বন্ধুসহ বাসা ভাড়া নিয়ে দিন-রাত পড়তে থাকেন। অবশেষে প্রকৌশলীর বদলে হয়ে গেলেন বিসিএস কর্মকর্তা।

বিসিএসের গল্প: -পড়াশোনায় তিনি এতটাই গুরুত্ব দিয়েছিলেন যে, একটা সময় সফলতা তাকে ধরা দিয়েছে। ২০তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করে প্রথম বারই সফল হয়ে গেলেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

কর্মজীবন: – বিসিএসের আগে তিনি একটি সরকারি চাকরি করতেন। এসিএফ কক্সবাজারে। সেখানে দু’বছর কাজ করেন তিনি। এরপর ২০০১ সালে ২০তম বিসিএস পরীক্ষায় টিকে গেলে চাকরি ছেড়ে যোগ দেন পুলিশের এএসপি হিসেবে। প্রথম পোস্টিং হয় গৌরনদী সার্কেল (এএসপি) হিসেবে। এরপর সীতাকুণ্ড, ঢাকা মেট্রো, এসি ডিবি, এসি এমটি, এডিসি ট্রান্সপোর্টে কর্মরত ছিলেন। এরপরই আসে মিশনের পালা। ২০০৬ সালে এক বছরের জন্য চলে যান আইভরি কোস্ট। সেখান থেকে ফিরে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন। এরপর আবার ঢাকা মেট্রোর এডিসি হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে আবার মিশনে চলে যান লাইবেরিয়া। সেখানে থেকে ফিরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে ঝিনাইদহ জেলায় নিযুক্ত হন। ২০১২ সালে প্রথম পুলিশ সুপার হিসেবে মাগুরা জেলায় নিযুক্ত হয়ে ২০১৫  পর্যন্ত  দায়িত্ব পালন করেন।

তারপর পর্যায়ক্রমে ২০১৫ থেকে ২০১৬ রাজবাড়ি ও ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পাবনা জেলা,  ১২ আগস্ট ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত চাঁদপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন। কর্মজীবনে পুলিশ সুপার হিসেবে চাঁদপুর তাঁর ৪র্থতম জেলা।

সফলতা:- বিসিএস পরীক্ষায় টিকে যাওয়াই তার বড় সফলতা। এছাড়া কর্মজীবনে মানুষের ভালোবাসাকেও সাফল্য হিসেবে দেখছেন। কর্মজীবনে সফলতার মধ্যে পাবনায় চরমপন্থীদের উৎখাত করা। তিনি সেখানে যোগ দেওয়ার পর চরমপন্থীদের শীর্ষ নেতারা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। তিনি এ পর্যন্ত ৪টি জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে জনগণকে সেবা দিয়ে এসেছেন।

স্বীকৃতি:- ২০০৭ সালে ‘ইউএন মেডেল ফর দ্য সার্ভিস ফর পিস ইন আইভরি কোস্ট’ লাভ করেন। এছাড়া ২০১০ সালে একই পুরস্কার লাইবেরিয়াতেও পান। ২০০৯ ও ২০১১ সালে আইজিপি ব্যাজ, ২০১৪ সালে পিপিএম পদক লাভ করেন।

প্রতিবেদক- দেলোয়ার হোসাইন, ১৮ আগস্ট ২০১৯

Share