১৯৭৭ সালে বাদশাহ ফাহদের আমন্ত্রণে সৌদি আরব যান জিয়াউর রহমান এবং উপহার হিসেবে সাথে নিয়ে যান বেশ কিছু নিম গাছের চারা।
বাদশাহকে উপহার দেয়ার সময় বলেন- “গরিব মানুষের পক্ষ থেকে আপনার জন্য এই সামান্য উপহার।” বাদশাহ ফাহদ বহু দেশ থেকে বহু মূল্যবান উপহার তৎকালীন সময় থেকে এখন পর্যন্ত পেয়ে আসছেন; কিন্তু এমন মূল্যবান উপহার তিনি পাননি। আবেগে আপ্লুত বাদশাহ জড়িয়ে ধরেন রাষ্ট্রপতি জিয়াকে।
তিনি বলেন, আজ থেকে সৌদি আরব ও বাংলাদেশ পরস্পর অকৃতিম বন্ধু। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য অর্থ সাহায্য দিতে চান। কিন্তু এসময় জিয়াউর রহমান বলেন, আমাদের দেশের মানুষ গরিব, কিন্তু তারা পরিশ্রম করতে জানে। আপনার দেশের উন্নয়ন কাজের জন্য হাজার হাজার শ্রমিক দরকার। একটি নব্য স্বাধীন মুসলিম দেশের জন্য যদি আন্তরিকভাবে সাহায্য করতে চান, তবে আমার দেশের বেকার মানুষদের কাজ দিন। বাদশাহ ফাহদ রাজি হলেন। উন্মোচিত হলো এক নতুন দিগন্ত। তখন থেকে বাংলাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ সৌদি আরব গিয়ে নিজেদের ভাগ্য বদল সহ স্বাবলম্বী হয়ে ফিরেছেন বাংলাদেশে।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দেয়া সেই নিমের চারা গুলো আজ মহীরূহ ছড়িয়ে পড়েছে সাড়া সৌদি জুড়ে! মরুভূমিতে যেন টিকে গেছে বাংলাদেশের স্মৃতি উঁচু করে। আরাফাতের ময়দানে সবুজ শীতল ছায়া দিয়ে চলেছে অসংখ্য নিম গাছ। সৌদি আরবে ১৯৭৭ সাল থেকে নামকরণ করা হয় ‘জিয়া ট্রি’ বাংলায় বলা হয় ‘জিয়া গাছ’ নামে। আরবিতে কেউ কেউ বলেন- ‘জিয়া সাজারাহ’।
সৌদি সরকার দেখল খেজুরগাছ নয়, নিম গাছেই মরুভূমিতে শীতল ছায়া ছড়ানোর উপযোগী। এ গাছ কম পানিতে দীর্ঘ দিন টিকে থাকতে পারে, গাছের পাতায় প্রচুর পানি ধরে রাখে। বৃষ্টির জন্যও নিম গাছ যথেষ্ট সহায়ক। দেখা গেছে, যে এলাকায় নিম গাছ আছে সেখানে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং মানুষের অসুখ-বিসুখও কম হচ্ছে। তখন থেকে তাঁরা ব্যাপকভাবে নিমের চারা রোপণের কাজে হাত দেন।
১৯৮৩-৮৪ সালে সৌদি সরকার সর্বপ্রথম আরাফাত ময়দানে ব্যাপকভাবে নিমের চারা রোপণ করে। আরাফাত ময়দানে আজ তাই রয়েছে হাজার হাজার নিম গাছ। হাজীরা এই নিম গাছের শীতল ছায়ায় হজ পালন করেন। প্রচণ্ড গরমে নিম গাছের বাতাস তাদের প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। আরাফাতের ময়দানের জাবালে রহমতে (রহমতের পাহাড়) উঠে চার দিকে তাকালে দেখা যায়, পাহাড় ঘেরা বিশাল এলাকাজুড়ে শুধু নিম গাছ আর নিম গাছ। এই পাহাড়ের ওপরে ছোট্ট উন্মুক্ত দোকান দিয়ে বসেছেন কুমিল্লার সোবহান। নিম গাছের কথা তুলতেই তিনি বলেন, ‘এগুলো বাংলাদেশের গাছ, জানেন!? আমাদের জিয়াউর রহমান এই গাছ সৌদি সরকারকে উপহার দিয়েছিলেন।’ গর্বে এ সময় সোবহানের চোখ যেন ছলছল যেমন করছিল ঠিক তেমনি ভাবে গর্বে সিনা টানটান হয়ে যাচ্ছিলো তাঁর।
নিউজ ডেস্ক:
আপডেট, বাংলাদেশ ৮:০০ পি.এম, ৯আগস্ট ২০১৭,বুধবার।
ডি.এইচ