যুক্তরাজ্যের মধ্যবর্তী নির্বাচনে আবার জয়ের মুকুট তিন বাঙালি কন্যার মাথায়। গতবারের চেয়ে আরও বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন তাঁরা। নির্বাচিত তিনজনই বিরোধী লেবার দলের মনোনয়নে নিজ নিজ আসন ধরে রাখার লড়াইয়ে নামেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে ও রূপা হক ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে জয়ী হন।
এবার পাঁচজন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোট ১৪ প্রার্থী নির্বাচন করেন। এর মধ্যে জয় পেলেন আগের মেয়াদে এমপি থাকা ওই তিনজন।
স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচনে ভোট নেওয়া হয়। রাতভর ভোট গণনা শেষে আজ শুক্রবার ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
যুক্তরাজ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে নিজের ক্ষমতা আরও নিরঙ্কুশ করতে হুট করে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ডাক দেন। নির্বাচিত হওয়ার মাত্র দুই বছরের মাথায় আসন ধরে রাখার লড়াইয়ে নামতে হয় এমপিদের।
টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক : লন্ডনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসন হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নে লেবার দলের প্রার্থী টিউলিপ পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৪৬৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী ক্লেয়ার লুইচ লিল্যান্ড পেয়েছেন ১৮ হাজার ৯০৪ ভোট। বড় ব্যবধানের জয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে এমপি নির্বাচিত হলেন টিউলিপ।
২০১৫ সালে মাত্র ১ হাজার ১৩৮ ভোটের ব্যবধানে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন টিউলিপ। সেই ব্যবধান বেড়ে হলো ১৫ হাজার ৫৬০। ২০২০ সালে যুক্তরাজ্যে পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে হুট করে মধ্যবর্তী নির্বাচন ঘোষণা করেন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার দুই বছরের মাথায় আসনটি ধরে রাখার লড়াইয়ে নামতে হয় টিউলিপকে।
টিউলিপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে। একদিকে পারিবারিক পরিচয়, অন্যদিকে লন্ডনের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনে প্রার্থী হওয়ায় তিনি আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন।
হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নে আসনটি দীর্ঘদিন ধরে লেবার পার্টির দখলে। এটি সব সময় তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এবার কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী ক্লেয়ার লুইচ লিল্যান্ডকে সমর্থন দিয়ে ডানপন্থী ইউকে ইনডিপেনডেন্ট পার্টি এই আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি।
রুশনারা আলী : ৩৫ হাজার ৫৯৩ ভোটের ব্যবধানে বড় জয় পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী। এ নিয়ে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে তৃতীয় মেয়াদে এমপি নির্বাচিত হলেন তিনি।
রুশনারা ৪২ হাজার ৯৬৯ ভোট পেয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির চার্লট চিরিকো পেয়েছেন ৭ হাজার ৫৭৬ ভোট।
২০১০ সালের নির্বাচনে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী হিসেবে রুশনারা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমপি নির্বাচিত হন। সেবার তিনি প্রায় ১২ হাজার ভোটে জয়ী হন। এরপর ২০১৫ সালের নির্বাচনে ২৪ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে তাক লাগানো জয় পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে এমপি নির্বাচিত হন।
পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনটি লেবার দলের নিরাপদ আসন।
অক্সফোর্ড-পড়ুয়া রুশনারার জন্ম সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায়। সাত বছর বয়সে তিনি মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে যান।
রূপা হক : লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে দ্বিতীয় মেয়াদে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রূপা হক। লেবার দলীয় প্রার্থী রূপা হকের প্রাপ্ত ভোট ৩৩ হাজার ৩৭। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী জয় মোরিসি পেয়েছেন ১৯ হাজার ২৩০ ভোট।
গতবার মাত্র ২৭৪ ভোটে জয় পাওয়া রূপা এবার জিতেছেন ১৩ হাজার ৮০৭ ভোটের ব্যবধানে।
২০১৫ সালে রূপা হক প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। রূপার আসনটি বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এ আসনে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী জয় মোরিসের বিজয় ঠেকাতে এবার পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টি কোনো প্রার্থী দেয়নি। তাঁরা লেবার প্রার্থী রূপাকেই সমর্থন দিয়েছেন। অন্যদিকে ডানপন্থী ইউকে ইনডিপেনডেন্ট পার্টি (ইউকিপ) কনজারভেটিভ প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে এই আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি। মাত্র তিনজন প্রার্থী এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অপর প্রার্থী হলেন লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দলের জন বল।
কিংসটন ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক রূপা লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশে তাঁর আদি বাড়ি পাবনায়।