Home / জাতীয় / ‘যারা জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে, তাদের কোনো ধর্ম নেই’
Hasina-Nari
ফাইল ছবি

‘যারা জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে, তাদের কোনো ধর্ম নেই’

ইসলাম শান্তির ধর্ম এখানে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই বলে পবিত্র মক্কা শরিফ ও মসজিদে নববীর দুই খতিব যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে, তাদের কোনো ধর্ম নেই। জঙ্গিবাদই তাদের ধর্ম, যারা ইসলামকে হেয় করতে চায়, তাদের সেই ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’

তিনি বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পবিত্র দুই মসজিদের খতিবদের বক্তব্য সরকারের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেবে এবং সহজ করবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের কোনো ঠাঁই নেই। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা শরিফ ও মসজিদে নববীর দুই খতিবের এই বক্তব্য সরকারের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেবে। সরকারের কাজ আরও সহজ করবে। আপনার‍া নিজেদের গ্রামে গ্রামে তাদের বক্তব্যে আসা পবিত্র কোরআনের বাণী পৌঁছে দিন।

শেখ হাসিনার বক্তব্যের আগে সম্মেলনে বক্তৃতা করেন মসজিদে নববীর ইমাম ও খতিব ড. আবদুল মুহসিন আল কাসিম এবং মক্কার হারাম শরিফের দ্বিতীয় প্রশাসনিক প্রধান ড. মুহাম্মাদ বিন নাসের আল খুজাইম। তারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সৌদি সরকারের অবস্থান জানিয়ে এ বিষয়ে সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

নিজের বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্ক অনেক মজবুত অবস্থানে রয়েছে।

দু’দেশের সম্পর্কোন্নয়নে ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এবং সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতকে বিশেষ ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ‍আজকের এই দিনে তাকে স্মরণ করছি।

‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মদ-জুয়া সব বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যারা পঁচাত্তরের পর ক্ষমতায় এসেছিলো তারা মাদককে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলো। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড জাতির পিতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমাদের ধর্ম শান্তির ধর্ম। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। তারপর থেকে ইসলামের কল্যাণে কাজ করে আসছে আওয়ামী লীগ।’

শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আমরা নারীদের নামাজের ব্যবস্থা করেছি। এ মসজিদে ৫ হাজারের ওপরে নারী এখন নামাজ পড়তে পারেন। আমরা আরবি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। মাদ্রাসায় অনাথদের জন্য কার্যক্রম শুরু করেছি। আমাদের শান্তির ধর্ম পালনে যারা নিবেদিত, তারা যেন যথাযথভাবে পালন করতে পারেন, সে ব্যবস্থাও করে দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের এই ভূ-খণ্ডে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। ইসলামের যে ধর্মীয় শিক্ষা সেটা আমাদের পালন করতে হবে। অন্য ধর্মের মানুষ এখানে বাস করে, তাদের প্রতি আমাদের সম্মান দেখাতে হবে। যেন সবাই সবার ধর্ম পালন করতে পারে।

ধর্মের নামে কেউ যেন কারও ক্ষতি না করে, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড করতে না পারে সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকে এক হয়ে ইসলামের পথে কাজ করতে হবে। কেউ যেন জঙ্গিবাদের পথে না যায় সেটা খেয়াল করতে হবে। ইসলাম সবসময় মানবতাবাদে বিশ্বাস করে। ইসলাম ক্ষমা ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। অসহায়দের সহায়তা করতে ইসলাম শিক্ষা দেয়।

বিশ্বে যারা শান্তিতে বিশ্বাস করে, তাদেরকে নিয়ে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সৌদি সরকারের উদ্দেশে বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। প্রতিটি দেশের মানুষের মধ্যে যেন শান্তি ফিরে আসে সে পথে আমাদের কাজ করতে হবে।

সন্ত্রাসবাদী-জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে অস্ত্র ব্যবসায়ীরাই লাভবান হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে। শান্তির বাণী মানুষের মধ্যে প্রচার করা আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি। সেজন্য ইমাম-মোয়াজ্জিনের কল্যাণে আমরা ট্রাস্ট গঠন করে দিয়েছি। যেন তারা আর্থিক সহায়তা পান সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম যেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা হয় সে ব্যবস্থা আমরা করেছি।

এসময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেখানেই সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ মাথা চাড়া দেবে, সেখানে আপনাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। অবশ্য এরইমধ্যে আপনারা সে ব্যবস্থা নিয়েছেনও।

সরকারপ্রধান জানান, যারা জঙ্গিবাদে চলে গছে, তারা যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায়, তবে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা সরকার করবে।

অর্থনৈতিক মুক্তির পথে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশে কোনো মানুষ না খেয়ে মরবে না, আমরা সেই ব্যবস্থা করেছি। সবাইকে নিয়ে আমরা শান্তির দেশ গড়বো।

নিউজ ডেস্ক
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৭: ২৭ পিএম, ৬ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার
এইউ

Leave a Reply