যেহেতু নিউজ পোর্টালে কাজ করি, তাই না চাইলেও প্রায় প্রতিদিনই চোখের সামনে এমনকিছু নিউজ আসে যা যেকোনো সুস্থ মানুষকে মুহূর্তেই অসুস্থ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
ডাক্তার, পুলিশ, সাংবাদিক এসব পেশার মানুষকে অনুভূতিহীন হয়ে বাঁচতে হয়। নয়তো প্রতিদিন এত মৃত্যু, প্রতারণা, ধর্ষণ, খুনের খবরে আমি আর বিচলিত হই না কেন! খবর যেমনই হোক, একনজর চোখ বুলিয়ে নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়। খবরের কাগজ বা নিউজ পোর্টালগুলোর জন্য কিছু জায়গা একরকম বরাদ্দই হয়ে গেছে ধর্ষণ, খুন এসব খবরের জন্য। যেন এমনটাই স্বাভাবিক। নিত্যদিন যেমন আমরা ভাত খাই, কাপড় পরি, গোসল করি- সেরকম। এই ধর্ষণ, এই খুন, এই গুম, এই প্রতারণা যেন অন্তহীন। কখনো ফুরাবে না। দিনেদিনে এসব বাড়তে থাকবে; সেই সঙ্গে পত্রিকার কাটতি, পোর্টালের হিটও বাড়তে থাকবে!
প্রেমের নামে প্রতারণা। সংবাদকর্মীদের কাছে এটি খুবই পরিচিত একটি বাক্য। এরকম খবর দিনে একাধিক প্রকাশ হয়। ছোট্ট একটা দেশ। জনসংখ্যা কিছু বেশি। কিছু বেশি না, একটু বেশিই বেশি। প্রচুর মানুষ। অনেকের বাড়িঘর নেই। দিনরাত রাস্তাঘাটে কাটায়। একেকজন মানুষ বিধাতার একেকটি অবাক সৃষ্টি। একেকটি অমিত সম্ভাবনা। সেসব `সম্ভাবনা` আমাদের দেশের পথেঘাটে `আশংকা` হয়ে ঘুরে বেড়ায়। যে বিপুল জনশক্তি আমাদের সম্পদ হতে পারতো, তাই আজ বোঝা হয়ে ঘাড়ে চেপে আছে। শুধু রাস্তায় থাকা মানুষেরাই নয়, সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত এখন এদেশের প্রায় সব স্তরের মানুষ। বছরের পর বছর পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্ন ফাঁস হয়েই চলেছে। দশ বছরের একটি শিশু, সেও পরীক্ষা দিতে গিয়ে জানতে পারছে এদেশে পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নপত্র মেলে! জীবনের শুরুতেই যে দুর্নীতি থেকে সুবিধা পেলো, পরবর্তীতে আলাদিনের দৈত্য এসে তাকে আচমকা সৎ এবং সাহসী করে তুলবে- এমন কল্পনা করাটাও অবান্তর।
অপরাধ একদিনে উড়ে এসে জুড়ে বসে না। ধীরে ধীরে শেকড় ছড়িয়ে আসন গেড়ে নেয়। আর তখন দুর্নীতিটাই হয়ে দাঁড়ায় স্বাভাবিক। নীতিহীনতাই হয় নীতি! এমন একটি নীতিহীন পরিবেশে প্রেমের নামে যে প্রতারণা হবে- এটি যেন অলিখিত সত্যি! ইন্টারনেট, ফোন, ফেসবুক ইত্যাদির মাধ্যমে মুহূর্তেই তৈরি হচ্ছে বন্ধু। পরমুহূর্তেই হয়তো প্রেমিক। ভালো লাগতো, যদি সত্যিই তা প্রেম হতো। কখনোই যে হয় না, এমন নয়। তবে তা খুবই দুর্লভ। সবকিছু সহজলভ্য হওয়ার সাথে সাথে প্রেমও এখন সস্তা হয়ে গেছে। চাইলেই যা পাওয়া যায়, তা কে আর দাম দিয়ে কিনতে যাবে! আর এসব ভার্চুয়াল প্রেমের সবচেয়ে করুণ শিকার হচ্ছে কিশোরী/তরুণীরা। ফোনে পরিচয়, তারপর প্রেমের টানে ঘর ছেড়েছে। এবং তারপর ধর্ষিতা হয়ে খুন হয়েছে, এরকম হতভাগীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।
এটি এমন নয় যে, ঘটেছে, আর কখনো ঘটবে না। বরং এটি ঘটেই চলেছে। সত্য শুনতে তিতকুটে শোনায় তবু বলছি, এরকম ঘটনা আজও ঘটবে, আগামীকালও ঘটবে, পরশুও ঘটবে। যে মেয়েগুলো খুন হচ্ছে এবং যে খুনিরা বেঁচে থাকছে কিংবা দীর্ঘ বিচারকার্যের পর ফাঁসির দণ্ড পাচ্ছে- উভয়েই দেশের সম্পদ। আমাদের এই ছোট্ট দেশটি, সবুজ প্রকৃতি আর স্বচ্ছ জলের সুন্দর এই দেশটির সম্পদ। তারা হারিয়ে যাচ্ছে। ফুরিয়ে যাচ্ছে। দেশের সম্পদ ফুরিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। শূন্য থেকে সবকিছু শুরু হয়। আমরা হয়তো সেখান থেকেও পিছিয়ে। তবু শুরু তো করা যায়!
যে প্রেমের নামে আমরা প্রতারণা করছি তাকে সত্যিই কি প্রেম করে তোলা যায় না! যে মেয়েটি প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধবে বলে মা-বাবার ঘর ছেড়ে গিয়ে `প্রেমিক` কর্তৃক ধর্ষিত হলো, খুন হলো তার `প্রেমিক` পুরুষটি সত্যিই প্রেমিক হলে কী এমন ক্ষতি ছিল! কী এমন ক্ষতি ছিল ছোট্ট সুখের একটি ঘর বাঁধলে, যে ঘরে তাদেরই প্রেমের ফসল ছোট ছোট খোকাখুকু আলুথালু পায়ে হেঁটে বেড়ালে! এই খুনিদেরকে প্রেমিক বানানোর যাত্রা কি আজ থেকেই শুরু করা যায় না? আজ, এখন থেকেই!(জাগো নিউজ)
লেখক- হাবীবাহ্ নাসরীন, সাংবাদিক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ২: ৪০ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, সোমবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur