আজ ১৬ ডিসেম্বর। গৌরবের মহান বিজয় দিবস। যুদ্ধ ইতিহাসের একটি অবস্মরণীয় দিন। লাখো শহীদের রক্তস্নাত বিজয় আজকের এই দিনেই। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ, নিপীড়ন আর দুঃশাসনের প্রাচীর ভেঙে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলার আকাশে বিজয়ের সূর্য উদয় হয় আরো রক্তিম হয়ে। অবসান হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের কালো অধ্যায়ের।
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার আকাশে যে সূর্য অস্তিম যায়, ৯১ হাজার ৫৪৯ পাকিস্তানি সৈন্যের আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে সেই সূর্য ফের উদিত হয় আজকের দিনেই। ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী মিত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সর্বাধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের পর নতমস্তকে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজয় মেনে নেয়। পৃথিবীতে নতুন একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। আর এই বিজয়ের মহানায়ক হিসাবে যিনি ইতিহাসে চির অম্লান ও ভাস্বর হয়ে আছেন তিনি হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
মুক্তিপাগল বাঙালি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্নাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছিল। ৩০ লাখ বাঙালির আত্মাহুতি দিয়ে আর দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ, তার সৃষ্টির ইতিহাস একদিনের নয়। দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম শেষে এদিন জন্ম নেয় একটি নতুন দেশ, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের সৃষ্টিকথা আরো হাজার বছরের। উপনিবেশিক শাসন আর শোষণের ইতি একদিনে ঘটেনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাহেন্দ্রক্ষণ একদিনে আসেনি। এর পেছনে রয়েছে এই জাতির ঘাম ঝরানো সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের মহান সেনাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা।
ইংরেজ শাসনামলে বাঙালি রক্ত দিয়েছে। লড়াই করেছে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে। সোয়া ২শ` বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংগ্রাম ও লড়াইয়ে রক্ত দিয়েছে এই বাঙালি জাতি।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনেও ছিল বাঙালিদের অবদান। বাঙালিরাই ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল কারিগর। কিন্তু কয়েক বছরেই বাঙালির মোহভঙ্গ হয়। যে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে তারা ইংরেজদের বিতাড়িত করেছিল সেই একই রকম শোষণ-বঞ্চনার মুখোমুখি হয়ে পড়ে কয়েক বছরের মধ্যেই।
শুরু হয় সংগ্রামের নতুন যুগ। পাকিস্তানিরা এ ভূখণ্ডের মানুষকে তাদের তাঁবেদার মনে করতো। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সর্বক্ষেত্রেই তারা বঞ্চিত করতো বাঙালিদের। এমনকি নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতেও তারা অস্বীকার করতো।
৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণ অভ্যুত্থান এসবই ইতিহাসের বাঁক ঘুরিয়ে দেয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচন সব পরিণতিকে দিয়ে দেয় চূড়ান্ত রূপ। শুরু হয় নতুন অধ্যায়।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে আসে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এই ঘোষণাই ছিল মুক্তির সনদ। এই ঘোষণাতেই মুক্তির নেশায় উন্মাদ বনে যায় বাঙালি। পরাজয় হয় পাকিস্তানের।
মহান বিজয় দিবস পালনে যেন নতুন সাজে সেজেছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
বার্তা কক্ষ
১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯