Home / জাতীয় / আজ মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী দিবস
Drug
প্রতীকী ছবি

আজ মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী দিবস

আজ ২৬ জুন মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। প্রতিবছরই দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আমাদের দেশে পালিত হয়ে আসছ্ ে।

মাদকদ্রব্য হলো এমন এক প্রাকৃতিক বা রাসায়নিক দ্রব্য শরীর বা মনের ওপর নির্ভরশীলতা বা আসক্তি সৃষ্টি করে। ইহা কয়েকবার গ্রহণ করার পর বার বার গ্রহণ করতে ইচ্ছে করে। চিকিৎসকরা বলেন, মাদকসেবন বন্ধ করলেই শরীরে নানা রকম প্রতিক্রিয়া ও যন্ত্রণা সৃষ্টি করে।

মাদক থেকে মাদকাসক্তির পরিণাম ভয়াবহ। সিগারেট থেকে নেশা শুরু করলেও মাদকের প্রতি আসক্তি ধীরে ধীরে শুরু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ড্রাগ হলো এমন বস্তু যা গ্রহণ করলে ব্যক্তির এক বা একাদিক কার্যকলাপের পরিবির্তন ঘটায়। একটা ড্রাগের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে তার রাসায়নিক গঠন বৈশিষ্ট্যের ওপর।

ক্রমাগতভাবে ইহা গ্রহণ করলে শরীরে এর চাহিদা বাড়তে থাকে। আমাদের দেশে প্রচলিত মাদকদ্রব্যগুলি হলো-ফেনসিডিল,হেরোইন,ইয়াবা,আফিম,মরফিন,প্যাথেডিন,ঢিডিজেসিক ইনজেকশন, গাঁজা,ভ্যাং, মদ, তাড়ী, ঘুমের ঔষধ ইত্যাদি।

এ ড্রাগ অপব্যবহারের কারণে রোগী তার রোগের জন্য ঔষধের গুণাগুণ পাওয়ার বদলে পায় বিষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ অপব্যবহারের মাধ্যমে মাদকাসক্তির সূচনা হয়। অপব্যবহার থেকে অভ্যাস- অভ্যাস থেকে আসক্তি।

বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রায় ৬৮ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। এদের মধ্যে ৮৪ % পুরুষ, ১৬ % নারী। দেশজুড়ে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ নানাভাবে মাদক ব্যবহার,পাচার ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ।

বিয়ষটি আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। কারণ আমাদের উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েরাই পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে এ মাদকের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। এক ধরনের পাচারকারী সম্ভবত: অর্থের লোভ দেখিয়ে তরুণ-তরুণী ও নারীদেরকে মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত করে ব্যবসার পরিধি ও মাদকসেবনকারীর সংখ্যা বাড়াচ্ছে।

চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে আইন শৃংখলাবাহিনী প্রতিদিনই পাচারকারী কিংবা সেবরকারী অথবা বহনকারীকে হাতে-নাতে ধরছে। দু:খজনক হলেও সত্য- এদের মধ্যে নারীরাও রয়েছে।

কিছুদিন পূর্বে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, দেশের ৩২ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদকের ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে শিক্ষকদের সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রত্যেক পিতা-মাতাকে তার সন্তানদের মাদকের ছোবল থেকে দূরে রাখার দায়িত্ব নিজকেই নিতে হবে।

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মাদকাসক্তের সংখা ৪৭ লাখ। আসক্তদের ৯০% কিশোর ও তরুণ। আরো বেশ কয়েকটি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ‘অবৈধ মাদক দ্রব্য আমদানির জন্য প্রতিবছর ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকার মুদ্রা বিদেশে পাচার হচ্ছে’।

ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে বাংলাদেশের মাদক ব্যবসা ও প্রাপ্তির সহজলভ্যতা বেশি এবং দেশের অবস্থানের প্রেক্ষিতে তরুণ সমাজ এদিকে ঝুঁকছেও বেশি। কোনো কোনো সং¯’া মাদক পাচারের জন্য এ দেশকেই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করছে পাচারকারীরা ।

কমপক্ষে দেশের স্থল ও নৌ-পথের ৩০টি রুট দিয়ে এ দেশে মাদক প্রবেশ করছে । বিমান ও জাহাজে করে পৌঁছে যাচ্ছে উন্নত বিশ্বে । বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে বাজার বা গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অনেকে মতামত দিয়েছেন।

ফ্যামিলি হেলথ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, শুধু পার্শ্ববর্তীদেশ থেকেই আসে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে ফেনসিডিল। মাদকাসক্তরা একে রসালো ভাষায় বলে থাকে ডাইল । অন্য একটি সূত্র জানায়, দেশের প্রায় ৫শ’ ১২ টি পয়েন্টে প্রতিদিন হেরোইন, আফিম, প্যাথেডিন, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি হয়।

মাদক দ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা আয়োজিত ঢাকায় এক আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, “বাংলাদেশে ১শ’৭৮ টি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র আছে। এখন প্রকাশ্যে কোথাও ধুমপান হয় না। এটা একমাত্র সম্ভব হয়েছে জনসচেতনতার জন্য। আইনের থেকেও সচেতনতা বেশি কার্যকর ।

ফেনসিডিল ও ইয়াবা দেশের বাহির থেকে আসে। এগুলি বাংলাদেশে তৈরি হয় না। এটি প্রতিরোধে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডবাহিনী ভালো কাজ করছে। প্রয়োজনে প্রতিবেশি দেশগুলির সাথে আলোচনার মাধ্যমে মাদক নির্মূলে এক সাথে কাজ করা হবে।”

অপর এক সুত্রে জানা যায়, মাদকে ৭শ’ রাসায়নিকের মধ্যে নিকোটিন সবচেয়ে বেশি মারাত্মক। আজকাল মুদির দোকানেও মাদক পাওয়া যায়। এটি কোনো ছেলে খেলা নয়। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কে এ বিষয়ে আরো কার্যকর পদক্ষেপের দাবি

প্রতিবেদক- আবদুল গনি

Leave a Reply