রাষ্ট্রায়ত্ব অগ্রণী ব্যাংকের ১৫৬ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি পাওয়া এ অভিযোগ আমলে নিয়ে যাচাই-বাছাই শেষে দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে সংস্থাটি।
বুধবার (২২ জুন) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক বৈঠকে এ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অনুসন্ধান টিমের দুই সদস্য হচ্ছেন দুদকের উপপরিচালক বেনজির আহমেদ ও উপসহকারী পরিচালক সিহাব সালাম। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা বাংলামেইলকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জমা দেয়া বিশেষ প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ওই অভিযোগে বলা হয়, ব্যবসায়ী মাহতাবের তিন প্রতিষ্ঠান মেসার্স বিটিএল, মেসার্স মাহিন টেক্সটাইল ও মেসার্স পিনাকল টেক্সটাইল সুতা বিক্রি করেছে হলমার্ক গ্রুপ, প্যারাগন, নকশি ও অন্যান্য কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে। এ কেনাবেচায় যে কাগজপত্র ব্যাংকে দেয়া হয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া। এখানে পণ্যের উৎপাদন, লেনদেন ও সরবরাহের কিছুই হয়নি।
এদিকে রপ্তানি ঋণপত্রের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকের অর্থায়ন না থাকলে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত মূল্যের স্থানীয় বিল ক্রয়ের যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তা অপব্যবহার করে ওই প্রতিষ্ঠান তিনটির ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১৫৬ কোটি টাকা দেয়া হয়।
এর মধ্যে হলমার্ক গ্রুপ, প্যারাগন, নকশি ও অন্যান্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পণ্য সরবরাহের বিপরীতে সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখার এলসি ও স্বীকৃতিতে শাখা নির্ধারিত তিনটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে মোট ১০৮ কোটি টাকা মূল্যের ১০৫টি স্থানীয় বিল কেনা হয়। যার মধ্যে ৪২ কোটি টাকা মূল্যের ৪৫টি বিল ইতিমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। অর্থাৎ খেলাপি হয়ে গেছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, প্রিন্সিপাল শাখা ও প্রধান কার্যালয় একই ভবনে হওয়ায় কেস টু কেস ভিত্তিতে মঞ্জুরি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সব নথিতেই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুমোদন গ্রহণ করা হয়। ওই তিন প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় বিল ক্রয়ের ক্ষেত্রে এমডির অনুমোদন বা প্রধান কার্যালয়ের সম্মতি নেয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠান তিনটির হিসাবে মেয়াদোত্তীর্ণ বিল থাকা সত্ত্বেও বারবার তাদের বিল কিনে দায় বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
একই সঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠানের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী সরেজমিন পরিদর্শনে যায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিধি দল। কিন্তু দলটি দুটি প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। পরিদর্শক দলের মন্তব্যে দেখা যায়, অগ্রণী ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতায় জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অংকের অ্যাকমোডেশন বিল সৃষ্টি করে অত্যন্ত সুকৌশলে ব্যাংকের তহবিল বের করে নিয়েছে জালিয়াত চক্র।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশে বলা হয়েছে, বিপুল অংকের টাকা সরানোর ঘটনায় জড়িত অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান খান, উপ-ব্যবস্থাপক জহরলাল রায়, সহকারী মহাব্যবস্থপক মো. আবদুল আজিজ দেওয়ান ও এসপিও হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি শাস্তি দেয়ার পরিবর্তে মিজানুর রহমান খানকে পদোন্নতি দিয়ে ডিএমডি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এই অভিযোগ ছাড়াও অগ্রণী ব্যাংকের আরো ২৭০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।(বাংলামেইল)
নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট ৪:১৬ পিএম,২২ জুন ২০১৬,বুধবার
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur