Home / জাতীয় / অর্থনীতি / সুইফট কোডেই চুরি হচ্ছে দেশের কোটি কোটি টাকা
সুইফট কোডেই চুরি হচ্ছে দেশের কোটি কোটি টাকা

সুইফট কোডেই চুরি হচ্ছে দেশের কোটি কোটি টাকা

গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তিন বছর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের অর্থ চুরিতেও ‘সুইফট নেটওয়ার্ক’ ব্যবহার করা হয়েছিল।

ওই সময় ভুয়া সুইফট মেসেজের মাধ্যমে ব্যাংকের আড়াই লাখ ডলার হাতিয়ে নেয় হ্যাকার গ্রুপ। সেই সময়েই সুইফট কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশ বিষয়টি জানিয়েছিল তবে তুরস্কে পাচার হওয়া ঐ অর্থ আর ফেরত আনা সম্ভব হয়নি।

আন্তর্জাতিক সংস্থা সুইফটের কারিগরি দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে গোয়েন্দা সূত্র মনে করছে। এই দুই ঘটনার মধ্যে কোন যোগসূত্র আছে কি-না পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে।

তবে তুরস্কের অসহযোগিতার কারণে এ অর্থ উদ্ধার সম্ভব হয়নি বলে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এদিকে গত ফেব্র“য়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনায় দায়ী করা হয় ব্যাংকিং লেনদেনের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক সুইফটকে।

বেলজিয়াম ভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটিকে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি।

এ বিষয়ে জানতে সুইফটের মুখপাত্র নাতাশা দে তেরানকে মেইলবার্তা পাঠানো হলে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উত্তর জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে সুইফট মোসেজিং প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে যেভাবে অর্থ পরিশোধের ভুয়া অনুরোধ পাঠানো হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই সোনালী ব্যাংকের আড়াই লাখ ডলার হাতিয়ে নেয় হ্যাকার গ্র“প।

ঘটনার এক বছর পর ২০১৪ সালের ফেব্র“য়ারিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তখনকার সচিব এম আসলাম আলম সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে ওই ঘটনা প্রকাশ করার আগ পর্যন্ত বিষয়টি বাংলাদেশের মানুষের কাছেও অজানা ছিল। সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে, ২০১৩ সালের সেই চুরির বিষয়টি সুইফট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তুরস্কের এক এ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলা সেই টাকা আর উদ্ধার করা যায়নি।

সোনালী ব্যাংকের আইটি ব্যবস্থাপনায় যুক্ত এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, ওই ঘটনায় হ্যাকাররা ব্যাংকের কোন একটি কম্পিউটারে কি লগার সফটওয়্যার বসিয়ে পাসওয়ার্ড চুরি করে। পরে সেই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই ভুয়া সুইফট মেসেজ পাঠানো হয়।

বিষয়টি ধরা পড়ার পর অর্থ লেনদেনের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে থাকা দুই কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছিল। কিন্তু পরে আর তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা হয়নি, ছেড়ে দেয়া হয়েছিল দুজনকেই।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত রয়টার্সকে বলেছেন, সেই হ্যাকিংয়ে জড়িতরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে। চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারের চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। আসলে ঠিক কী ঘটেছিল, তাও আমরা জানতে পারিনি, বলেন তিনি।

রয়টার্স জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির কৌশলের সঙ্গে মিল থাকায় এ ঘটনার তদন্তে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা সোনালী ব্যাংকের ঘটনাটি নতুন করে খতিয়ে দেখতে শুরু করেন। দুই ঘটনার মধ্যে কোন যোগসূত্র আছে কি না, সে বিষয়টিও তারা বোঝার চেষ্টা করছেন।

পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, এটা ইন্টারেস্টিং। এটা আমাদের দেখতে হবে। গত ফেব্র“য়ারিতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার লোপাট হয়।

হ্যাকিংয়ের এই ঘটনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনার মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সুইফটের নিরাপত্তা ব্যবস্থার খুঁত নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়। তবে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের মেরুদন্ডে পরিণত হওয়া এই সমবায় প্রতিষ্ঠানটি তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এসব ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনায় সুইফটের নিরাপত্তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সারা বিশ্বের প্রায় ১১ হাজার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুইফট ব্যবহার করে।

জানা গেছে, গত ফেব্র“য়ারিতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের রিজার্ভের আট কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্সে সরিয়ে নেয়া হয়, যাকে বিশ্বের অন্যতম বড় সাইবার চুরির ঘটনা বলা হচ্ছে।

হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ চুরি করে ফিলিপিন্সে নেয়ার ঘটনায় ব্যাংকিং লেনদেনের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক সুইফটকেই দায়ী করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রধান মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

চলতি মাসের মাঝামাঝি বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমিটি প্রধান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মূলত সুইফট দায়ী।

কারণ, তাদের সিষ্টেমের সঙ্গে আরটিজিএসের সংযোগ দেয়াই কাল হয়েছে। সুইফট নিজেই তাদের সিস্টেম ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার ব্যবস্থা করেছিল। হ্যাকাররা রিজার্ভ চুরির ক্ষেত্রে সুইফটের ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার ‘এ্যালায়েন্স একসেস’ থেকে ভুয়া মেসেজ পাঠানোর পর তার ট্র্যাক মুছে ফেলতে যে ম্যালওয়্যার ব্যবহার করেছিল, তা পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে যে কোন একটি দেশে তৈরি হয়েছে বলেও দাবি করেন ড. ফরাসউদ্দিন।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলার তদন্তে থাকা বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগও বলেছে, সুইফটের টেকনিশিয়ানদের ‘অবহেলার কারণেই’ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফট সার্ভার হ্যাকারদের সামনে অনেক বেশি উন্মুক্ত হয়ে পড়ে।

সিআইডি সূত্রে আরও জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারও জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। তবে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি কর্মকর্তাদের দুর্বলতা ছিল। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রযুক্তি বিষয়ে পারদর্শী নয়।

এমন সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে হ্যাকাররা অর্থ চুরি করে নেয়। দ্রুত এর সমাধান করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও অর্থ চুরির ঘটনা ঘটা বিচিত্র নয়। তাই আগামী ৩০ মে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধি দল ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় যাচ্ছে।

সেখানে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল, বিভিন্ন দেশের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ টিম, সুইফটসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে জরুরী বৈঠক হবে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি যাওয়া রিজার্ভের বিষয় ছাড়াও অর্থ চুরি ঠেকাতে করণীয় সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা হবে। অর্থ চুরির ঘটনার তদন্তকারী সংস্থার একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনাটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত।

আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এমনটা ঘটানো হচ্ছে। এর নেপথ্যে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র থাকার বিষয়টি দিবালোকের মতো স্পষ্ট। একের পর এক নৃশংস হত্যাকা- ঘটিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে জঙ্গীবাদের উর্বর ভূমি হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা চলছে। আরেক দিকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হ্যাকারদের মাধ্যমে অর্থ চুরি করে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা চলছে। যাতে বাংলাদেশে স্বল্প সময়ের মধ্যেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ামাত্র দেশে একটি পরাক্রমশালী দেশ হস্তক্ষেপ করবে। সেই পথ সুগম করতেই এত অপতৎপরতা। সম্প্রতি একটি দেশ নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ভারি অস্ত্রগোলাবারুদও বাংলাদেশে আনার অনুমতি চেয়েছে বাংলাদেশ সরকারের কাছে।

সূত্র বলছে, বিশ্বের ১১ হাজার ব্যাংক সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউ-নিকেশনের (সুইফট) সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭৩ সালে সুইফট প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকও সুইফটের সদস্য। এই ১১ হাজার ব্যাংকের নানা বিষয়ে সহায়তা দিয়ে থাকে সুইফট। এতদিন কোন প্রকার সমস্যা না হলেও সম্প্রতি নানা সমস্যা ধরা পড়ছে।

ধারণা করা হচ্ছে, অত্যন্ত সুপরিকল্পিত অপতৎপরতার অংশ হিসেবেই ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময় সুইফটের কারিগররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার সিস্টেমে কাজ করে যান। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটারের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে কাজ করেন।

চুক্তি অনুযায়ী সুইফটের বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটারগুলোর আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক এবং নিরাপত্তা সিস্টেম আরও উন্নত করে দেয়ার কথা। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়। সুইফটের কারিগররা কাজ করার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটারের নেটওয়ার্কিং ও নিরাপত্তা সিস্টেম অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকা ৫ হাজার কম্পিউটার পুরোপুরি একটি আলাদা নেটওয়ার্ক ও নিরাপত্তা সিস্টেমের ভেতরে ছিল।

বাইর থেকে এই নিরাপত্তা সিস্টেম ভেঙ্গে প্রবেশ করার পদ্ধতি ছিল না। আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কেও আওতায় থাকা কম্পিউটারগুলোও একই পদ্ধতির আওতায় ছিল। ভেতর থেকে বা নেটওয়ার্কের বাইরে থেকে আন্তর্জাতিক এই নেটওয়ার্ক সিস্টেমে প্রবেশের সিস্টেম ছিল না।

মূল সেফ লক পদ্ধতির আওতায় ছিল দুটি নেটওয়ার্ক পদ্ধতিই। রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত থাকা কম্পিউটারগুলোতে সুইফট ম্যাসেজ এলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা এবং প্রিন্ট হতো। হার্ড কপি প্রিন্ট হয়ে তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাত ঘুরে ব্যাংকের গবর্নরের কাছে যেত। সেই হার্ড ও সফট কপিতে রিজার্ভ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য থাকত।

তদন্তকারী একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, সবই ঠিক ছিল। সুইফট কাজ করার পর সমস্ত সিস্টেম এক হয়ে যায়। তারা রিমোট সিস্টেম চালু করেন। ফলে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকেই কম্পিউটারগুলো পরিচালনা করা যেত।

এমন সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে হ্যাকাররা অর্থ চুরি করে। আগের পদ্ধতিতেও যদি বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের কম্পিউটারগুলোকে রাখত, তাহলেও রিজার্ভ চুরি হওয়া সম্ভব ছিল না। এছাড়া সুইফট যে নতুন চিপটি বসিয়ে চব্বিশ ঘণ্টা লাগিয়ে রাখতে বলে যায়, তা হ্যাকারদের অর্থ চুরির পক্ষে ব্যাপক সহায়ক হয়েছে।

নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য সুইফটের যে ধরনের ফায়ারওয়াল ও ম্যানেজেবল সুইচ লাগানোর কথা তা লাগায়নি। কোন প্রকার ফায়ারওয়াল দেয়নি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বদলে আন ম্যানেজেবল একটি সেকেন্ডহ্যান্ড পুরনো সুইচ লাগিয়ে নিরাপত্তাকে আরও ঝুঁকির মধ্যে রেখে যায়। ফলে হ্যাকাররা অনায়াসে অর্থ চুরি করে নেয়।

দুর্বল ব্যবস্থার কারণে হ্যাকারদের পক্ষে সার্ভার হ্যাক করে অর্থ চুরি করার কাজটি সহজ হয়েছে। সুইফট কাজ করার মাত্র দুই মাস পরেই রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটে। গত ৫ ফেব্র“য়ারি প্রথম হ্যাক হওয়ার পর সার্ভার স্টেশনে কোন মেসেজ আসেনি। এমনকি প্রিন্টারেও কোন হার্ডকপি প্রিন্ট হয়নি। অনেকক্ষণ চেষ্টার পরেও রিজার্ভের আপডেটের কোন প্রিন্ট বের করা সম্ভব হয়নি।

এছাড়া কম্পিউটারে গোলযোগ দেখা দেয়। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই সে সময় দায়িত্বরত বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি কর্মকর্তা ভাগ্নির বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা বলে দ্রুত অফিস ত্যাগ করেন।

সেদিন আর গর্বনরের কাছে রিজার্ভের কোন ফিরিস্তি জমা পড়েনি। পরের দিন শুক্রবার থাকায় আর কোন খবর নেননি দায়িত্বশীলরা। যদিও সার্ভার স্টেশনটি চব্বিশ ঘণ্টা মনিটরিং করার জন্য আইটি কর্মকর্তা রয়েছেন।

এমন পরিস্থিতির কারণে গত ৫ ও ৬ ফেব্র“য়ারি টানা দুদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে লাল আলোতে রিজার্ভ সংক্রান্ত যে তথ্য স্ক্রলে দেখানো হয়, তা দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক মোঃ শাহ আলম জানিয়েছেন, সুইফটের তরফ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে করে যাওয়া কাজে অনেক দুর্বলতা ধরা পড়েছে।

এমন দুর্বলতার সঙ্গে সুইফট জড়িত নাকি, সুইফটের যেসব কারিগর কাজটি করেছেন তারা জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এজন্য সুইফটের ওইসব লোকদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি চলছে।

এ ব্যাপারে সুইফট, ইন্টারপোল ও এফবি আইকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মীর্জা আবব্দুল্লাহেল বাকী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার হ্যাক করে অর্থ চুরির ঘটনাটি ঘটেছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট অনেককেই সিআইডি সদর দফতরে ডেকে এনে কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

রিজার্ভ চুরির পেছনে হোতারা রয়েছে ভারতে ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পেছনে হোতারা রয়েছে ভারতে। এক বছরের বেশি সময় ধরে তারা হ্যাকিংয়ের পরিকল্পনা করে। আর এটা একজনের নয়, কয়েকজনের কাজ।

বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে সূত্রের বরাত দিয়ে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, এসব হ্যাকারের হদিস পাওয়া সম্ভব নয়। গত ফেব্র“য়ারিতে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট থেকে ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে হ্যাকাররা। এর মধ্য থেকে তারা মাত্র ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নিতে সমর্থ হয়।

এই অর্থ লোপাটের ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছে একাধিক সংস্থা। তবে এখনও পর্যন্ত ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কারও সন্ধান পাওয়া যায়নি। মেইল অনলাইনকে একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই রাজকোষ কেলেঙ্কারি কোন একজন ‘হোতা’র কাজ নয়। এই কাজে একাধিক ব্যক্তি জড়িত এবং তারা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ঘটনার পরিকল্পনা করেছে। সূত্রটি বলেছে, এতে সংশ্লিষ্টরা ভারতে রয়েছে এবং তারা সম্ভবত প্রক্সি (ইন্টারনেটে নিজের প্রকৃত অবস্থান গোপন করে ভার্চুয়াল অবস্থান দেখানোর পদ্ধতি) ব্যবহার করছে। সে কারণেই তাদের ধরা যাচ্ছে না। তারা ভারতের কেন্দ্রেই অবস্থান করছে এবং কয়েকজন রয়েছে বাইরে। কারিগরি দিক থেকে তারা এতটাই শক্তিশালী যে তাদের সন্ধান পাওয়াই সম্ভব নয়। ওই সূত্রটি আরও বলেছে, এসব ব্যক্তি খুব সহজেই নিজেদের লুকাতে পারে এবং ২/৩ মিনিটের মধ্যেই হারিয়ে যেতে পারে। সূত্রটি জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ লোপাট হওয়া অর্থের কিছুটা উদ্ধার করতে পারলেও পুরোটা পারেনি এবং এর হোতাদের সারাজীবন নিশ্চিন্তে পার করে দেয়ার জন্য দেড় কোটি ডলারই যথেষ্ট।

এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনকে ফিলিপিন্সে শনাক্ত করা গেলেও কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। ফিলিপিন্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ অবশ্য ফিলিপিন্সের ব্যাংকে পৌঁছানো ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার উদ্ধারে দেশটির কর্তৃপক্ষের ওপর আস্থা রেখেছেন। (আমাদের সময় ডট কম সূত্রে জনকন্ঠ ও বর্তমান)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৫:০০ এএম, ২৭ মে ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ

Leave a Reply