নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে চাঁদদপুর সরকারি মহিলা কলেজ। সংকীর্ণ খেলার মাঠ, কেন্টিন, কমন রুম, হোস্টেল সমস্যাতো আছেই। বিশেষ করে একাডেমিক ভবন আর শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে নারী শিক্ষকার অগ্রগণ্য ভূমিকা পালনকারী এ প্রতিষ্ঠানটি।
ফলে পাঠদানে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। পাঠ্যসূচি শেষ করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। অবশ্য খণ্ডকালীন শিক্ষক দ্বারা গোজামিল দিয়ে ক্লাস নিলেও শিক্ষার্থীদের ক্ষতি ফুসিয়ে উঠা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করছেন অনেক শিক্ষার্থী।
এতো সমস্যার মাঝেও আমাদের ফলাফল উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্সের ফল সন্তোষজনক। অনার্স পর্যায় ফলাফল প্রায় শতভাগ। যদিও প্রতিষ্ঠান প্রধান জানালেন, সব সমস্যা সমাধানে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। শীঘ্রই এসব সমস্যা সমাধান হবে।
শিক্ষক সমস্যা :
প্রতিষ্ঠানটিতে এইচএসসিতে তিনটি বিভাগ ডিগ্রি (পাস) ও চার বিষয়ে অনার্সসহ মোট ১৯টি কোর্স চালু রয়েছে। সব মিলিয়ে আড়াই হাজারের উপরে শিক্ষার্থী এখানে পড়াশুনা করছে। বর্তমানে ৩৫টি পদের মধ্যে ১১টি পদ শূন্য রয়েছে। যারা আছেন তাদের মধ্যে বাংলা বিভাগের প্রভাষক মাসুমা তুন নূর, অর্থনীতির প্রভাষক নুরুন নাহার, ইতিহাসের আসমা বেগম আছেন প্রশিক্ষণে। আর অপরএকজন আছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে।
এ ছাড়া নতুন বিভাগের জন্য অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক পদে মোট ৪৬টি পদ সৃষ্টির জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। বিশেষ করে অ্যাকাউন্টিং বিভাগের জন্য একজন শিক্ষকও নেই। অন্যান্য বিভাগে তো সংকট রয়েছেই।
তাহমিনা, রাজিয়া ও সুমিসহ আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষক না থাকার কারণে আমাদের সিলেবাশ শেষ করতে পারি না। কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, এসব সংকটের মধ্যেও আমরা ফলাফল ভালো করার চেষ্টা করছি। বিগত বছরগুলোতেও ভলো ফলাফল হয়েছে।
ভবন সমস্যা :
কলেজটির অবস্থান শহরের প্রাণ কেন্দ্রে বিধায় বিভিন্ন পরীক্ষার কেন্দ্রে হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যে কারণে কলেজে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের পাঠ দান এবং ক্লাসরুম ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। কলেজের দ্বিতলবিশিষ্ট একটি প্রশাসনিক ভবন রয়েছে তাও জরাজীর্ণ। ত্রিতলা বিশিষ্ট বিজ্ঞান ভবনে ১৫টি কক্ষ আর চারতলা বিশিষ্ট মূল ভবনের ১৪টি কক্ষ রয়েছে। যা ২হাজার ৫শ ৩৫ শিক্ষার্থীর জন্য নগণ্য।
হোস্টেল সমস্যা :
একমাত্র সরকারি মহিলা কলেজ বিধায় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পড়তে আসে ছাত্রীরা। অথচ পড়াশুনা করতে এসে আবাসিক সমস্যার সম্মুখীন হয় তারা। কারণ এ কলেজের ৩টি ছাত্রীনিবাস থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। খালেদা জিয়া ছাত্রীনিবাসে চারতলা বিশিষ্ট, স্মৃতি ৭১ ছাত্রীনিবাস ও শেষ হাসিনা ছাত্রীনিবাস দ্বিতল। তিনটি হোস্টেলের ধারণ ক্ষমতা মাত্র ২০০ জন। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি রুমে চারজন থাকার কথা থাকলেও থাকছে ৬-সাতজন। অসহায় হয়েই শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে শিক্ষাজীবন শেষ করছেন।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া এবং তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শামিমা নাসরিন সুমি জানান, আসলে হোস্টেল লাইফ মানেই কষ্ট।
অবশ্য প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ প্রফেসর এম এ মতিন মিয়া জানান, এসব সমস্যা সমাধানে স্থানীয় এমপির ডিও লেটার নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই এসব সমস্যা নিরসন হবে। তবে আমার অনেক কষ্ট করেই কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম সচল রেখেছি।
চাঁদপুরের নারী শিক্ষা অগ্রসরে একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানটির সব ধরণের সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন এমনটাই প্রত্যাশ কলেজের আড়াই হাজারের অধিক শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের। (ভোরের ডাক)
: আপডেট বাংলাদেশ সময় ৩:০৫ পিএম, ১৬ মে ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ