১৫ বছর ধরে সৌদি আরবে ট্রাক ড্রাইভারের কাজ করতেন বাংলাদেশি মকবুল আহমদ। থাকতেন সেই ট্রাক মালিকের বাড়িতেই। সেই বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতো শ্রীলংকান এক নারী। মকবুলের দুর্ভাগ্যের শুরুটা সেখানেই। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে সেই শ্রিলংকান নারীর সঙ্গে অবৈধ যৌনচারের অভিযোগ এনে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দেশটির শরিয়াহ আদালত।
তবে বাংলাদেশি দূতাবাসের কনস্যুলেটের প্রথম সচিবের (শ্রম) কাছে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মকবুল আহমদ। যদিও তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া ওই আদালতের বিচারক বলছেন, ‘মকবুল আহমদ চারটি শুনানিতেই এ অভিযোগের কথা স্বীকার করেছেন। আর তাই তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।’ আর এসব মামলার অবগতির ব্যাপারে মকবুলের দেশে থাকা পরিবারকে জানাতে গতকাল বুধবার চিঠি পাঠিয়েছে সৌদিস্থ বাংলাদেশি দূতাবাস।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সূত্র জানায়, হারুন মিয়ার ছেলে মকবুল আহমদ জেদ্দা থেকে প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার দূরে আসির প্রদেশের আল নামাছ এলাকায় ট্রাক ড্রাইভারের কাজ করতেন। তিনি প্রায় গত ১৫ বছর যাবৎ ওই এলাকার সৌদি নিয়োগকর্তা নাসের হাসানের অধীনে এ কাজ করতেন এবং নিয়োগকর্তার বাড়িতেই থাকতেন। পরে ওই বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করা শ্রিলংকান এক নারীর সাথে অবৈধ যৌনাচার করে আসছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
গত বছরের ২২ আগস্ট এ অবৈধ যৌনচারের দায়ে তাকে গ্রেপ্তার করে সেখানকার পুলিশ। পরে আল নামাছ জেনারেল হাসপাতালে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট ও তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বিচারক গত ৩ নভেম্বর তাকে হদ্দে রজম বা মৃত্যু দন্ডাদেশ দেন।
এরপর গত ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশি দূতাবাসের কনস্যুলেটের প্রথম সচিব (শ্রম) ও আইন সহকারী বিষয়টি জানতে পেরে আইনি সেবা প্রদানের জন্য মকবুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রথমে কনস্যুলেটেরের কাছে এসব অভিযোগ আদালতে স্বীকারোক্তির কথা অস্বীকার করেন মকবুল। প্রসিকিউটরের কাছে এ অভিযোগটি স্বীকার করেছেন কি-না জানতে চাইলে মকবুল বলেন, ‘দেশে অবস্থারত স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয় স্বজনের কথা ভেবে মৃত্যুকে উত্তম মনে করেছি। আর আবেগে স্বীকারোক্তি দিয়েছি। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয়েছিল যে, স্বীকারোক্তি প্রদান করলে তারা আমাকে জেল থেকে মুক্তি দিবে’।
মন্ত্রণালয় সূত্রটি আরো জানায়, এ মামলার ব্যাপারে বিচারক শেখ সোলায়মান বিন দাফাস বিন সোলায়মানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন দূতাবাসের ওই কর্মকর্তারা। তখন বিচারক শেখ সোলায়মান বলেন, ‘গত ২ মাস ১১ দিনে অভিযুক্ত মকবুলকে একে একে চারবার শুনানিতে কোর্টে হাজির করা হয়। চারটি শুনানিতেই তিনি অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শরিয়া আইন মোতাবেক মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়েছে। কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার বিধানের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আপিলও করেছেন’।
তবে তিনি (মকবুল) যদি যুক্তি প্রমাণে নির্দোষ প্রমাণিত হন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেয় ওই বিচারক।
পরে আদালতের আপিল বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আপিল বিভাগের কর্মকর্তারা দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিকট জানান, ‘মকবুলের আপিল মামলাটির নথি ইতোমধ্যে আল নামাছ জেনারেল কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। আবেদনটি গ্রহণ করা হয়েছে কি-না তা স্পষ্ট জানতে পারিনি। তবে বিষয়টি পুনঃতদন্তের ব্যাপারে আপিল কোর্ট থেকে প্রসিকিউটরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
এদিকে মকবুলের সাজা লঘু করার ও তার প্রতি অনুকম্পা করার জন্য ইতিমধ্যে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নোট ভারবাল প্রেরণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইনজীবীর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে আইনি পরামর্শের জন্য কনস্যুলেটের বাংলাদেশ দূতাবাসেও পত্র প্রেরণ করেছেন।
সূত্র : বাংলামেইল
||আপডেট: ০৬:৪৩ অপরাহ্ন, ১৭ মার্চ ২০১৬, বৃহস্পতিবার
এমআরআর
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur