মতিঝিলের ঘরোয়া হোটেলের কর্মচারী রিয়াদ হোসেন (১৬) কে হত্যার ৭২ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও হোটেলটির মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেল এখনো অধরা। হত্যার পরও মতিঝিলেই অবস্থান করেছিলেন সোহেল। অভিযোগ উঠেছে খুনের ঘটনার পরপরই সোহেলকে ধরার চেষ্টা করেনি পুলিশ। কিন্তু পালানোর পর তাকে খোঁজা হচ্ছে!
তবে পুলিশ বলছে, সোহেল ঘটনার পর থেকেই পলাতক। তাকে গ্রেফতারে হন্নে হয়ে খুঁজছেন তারা। সে যেন কোনোভাবে দেশ ছেড়ে না পালাতে পারে সে জন্য দেশের বন্দরগুলোতে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে গত তিনদিনে তার দেখা মেলেনি।
নিহতের পরিবারের দাবি, পুলিশের গাফিলতির কারণে পালাতে সক্ষম হয়েছে খুনি সোহেল। সোহেল ঘটনার পরদিনও এলাকাতেই ছিল। পুলিশের সামনেই ঘুরেছে। সেসময় তাকে ধরেনি পুলিশ।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে স্বামীবাগে মেসে নিয়ে রিয়াদকে মারধর ও গুলি করে হত্যা করে হোটেলের মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেল (৩৩)। সোহেলের রেস্টুরেন্টে রুটি বানানোর সহকারী হিসেবে তিন বছর ধরে কাজ করছিল রিয়াদ।
ঘটনার পর রিয়াদের বড় ভাই রিপন বাদী হয়ে ওয়ারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর হোটেলের কর্মচারী জসীম গ্রেফতার হলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পলাতক সোহেল।
বাদী রিপন বলেন, ‘ঘটনার পর সোহেলের লোকজন হাসপাতালে গিয়ে ছিনতাইকারীর হাতে খুন বলে জানায়। আমি বলেছি রিয়াদকে খুন করা হয়েছে। তখন পুলিশ সোহেলকে ধরেনি। উল্টো তারা রাতে আমার ভাই মাইনুদ্দিনকে জেরা করেছে। আমাকেও জেরা করেছে। অথচ সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে সোহেলই খুনি।’
রিপন আরো জানান, সোহেলের বড় ভাই রাসেল বৃহস্পতিবার সকালে ফোন করে এক লাখ টাকায় দফারফা করতে বলেন। কিন্তু তাতে সাড়া দেন নি তিনি।
মামলার এজাহার ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হত্যা মামলায় সোহেল, জসিম ও বাবুর্চি খবিরকে আসামি করা হয়েছে। তবে ব্যবস্থাপক শফিক, রাজুসহ আরো কয়েকজন এ হত্যায় সহযোগিতা করেছে যাদের নাম এজাহারে নেই।
পুলিশের ওয়ারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা বলেন, মামলার প্রধান আসামি সোহেল যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারে তাই দেশের স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাকে গ্রেফতারে গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকেই অভিযান চলছে।
এ ঘটনায় মামলার এজাহারে সোহেল, জসীম, কবির ছাড়াও অজ্ঞাত ৩-৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে রিয়াদের এক আত্মীয় অভিযোগ করেন, মামলাটি দায়েরের পর থেকেই অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন করে তাদের বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে।
তবে ওসি জানান, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ আসেনি।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে- ওয়ারী বিভাগীয় পুলিশ ছাড়াও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র্যাবসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা সোহেলকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছে।
ডিএমপির ওয়ারি জোনের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার নুরুল আমিন বলেন, রিয়াদকে যেই মেসে হত্যা করা হয় এর পাশের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি)ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে। ফুটেজে লাঠি হাতে ওই মেসে সোহেলকে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। সে পাজেরো জিপ গাড়ি নিয়ে ভবনে প্রবেশ করে এবং বের হয়।’
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি, মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত বুধবার দুপুরে শান্তিনগরের বাড়ি থেকে পালিয়েছে সোহেল। তার বাড়ি তালাবদ্ধ। তাকে ধরতে ইমিগ্রেশন পুলিশের সহযোগিতায় স্থল বন্দর ও বিমানবন্দর গুলোতেও নজরদারি অব্যাহত আছে।’
গ্রেফতার জসিম রিমান্ডে
রিয়াদ হত্যার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার আসামি জসীমকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার সিএমএম আদালত। শুক্রবার হোটেলের কারিগর মো. জসিমকে (২৫) আদালতে হাজির করে মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আলিম হোসেন শিকদার।
শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মোল্যা সাইফুল আলম সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তালাবদ্ধ ঘরোয়া হোটেল
কর্মচারী রিয়াদ হত্যার পর বন্ধ হয়ে গেছে হোটেল ঘরোয়া। পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পর ঘরোয়ার মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেল পালিয়েছেন। কর্মচারীরাও অনেকে চলে যাওয়ায় ভুনা খিচুরির জন্য বিখ্যাত এই হোটলটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দিনভর অনেক ভোজনরসিক হোটেল বন্ধ দেখে ফিরে যান।