Home / জাতীয় / রাজনীতি / সমশের চৌধুরী পদত্যাগের ১০ কারণ!
সমশের চৌধুরী পদত্যাগের ১০ কারণ

সমশের চৌধুরী পদত্যাগের ১০ কারণ!

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সমশের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম রাজনীতি থেকে অবসর ও দল থেকে পদত্যাগের কারণ হিসেবে শারীরিক অসুস্থতার কথা বলেছেন।

কিন্তু এর বাইরেও আরো বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। রাজনৈতিক জীবন থেকে সরে যাওয়ার পেছনে দলের প্রতি ক্ষোভ-হতাশা, সরকারের চাপ, রাজনৈতিক ও পারিবারিক চাপ, তারেক রহমানের ব্যবহার, জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে দলের অবস্থানসহ সম্ভাব্য প্রায় ১০টি কারণ জানা গেছে।

গত বুধবার সমশের মবিন রাজনীতি থেকে অবসর ও দল থেকে পদত্যাগের বিষয়টি জানিয়ে এক চিঠি দিয়েছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে। যা গতকাল বৃহস্পতিবার জানাজানি হয় এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে সাড়া ফেলে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ থেকে তার শারীরিক অসুস্থতাসহ সম্ভাব্য যে ১০টি কারণ জানা গেছে, তা হলো-

০১. সমশের মুবিন চৌধুরী চিঠিতেই জানিয়েছেন শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজনীতি থেকে অবসর ও দল থেকে পদত্যাগ করছেন।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যুদ্ধাহত একজন মুক্তিযোদ্ধা। শারীরিকভাবে এখন আর রাজনীতি করার মতো অবস্থায় নেই। এ কারণে বিএনপির সব পদ থেকে পদত্যাগ করে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফখরুল সাহেবের কাছে পদত্যাগপত্র দিয়ে এসেছি। এখন থেকেই তা কার্যকর হবে।’

০২. সমশের মবিনের পদত্যাগের নেপথ্যে সরকারের ভূমিকা রয়েছে বলে বিএনপির অনেকেই সন্দেহ করছেন। তাদের ধারণা, সর্বশেষ যখন তিনি গ্রেফতার হন, তখন তাকে সরকারের পক্ষ থেকে দল ছাড়তে চাপ দেওয়া হয়। বিএনপি ভেঙে নতুন দলে যেতেও চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু বিএনপিতে থেকে এটা সম্ভব না জেনেই তিনি রাজনীতিকে বিদায় জানিয়েছেন। তবে এই অভিযোগ সমশের মবিন অস্বীকার করেছেন।

০৩. অসুস্থ থাকায় তিনি দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য পাসপোর্টের আবেদন করেও পাননি। সমশের মবিন বলেন, ‘গত জুলাই মাসে এমআরপি নবায়নের জন্য আবেদন করেও এখন পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি। আমি জানি না কেন পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে না। আমার চোখের অবস্থা খুবই খারাপ। অস্ত্রোপচার করতে হবে। কেন দিচ্ছে না সরকারকে জিজ্ঞাসা করুন। তারা (সরকার) বড়ভাই খুঁজবে, না আমার পাসপোর্ট দেবে- কে জানে।’

০৪. পাঁচ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে সারাদেশে আন্দোলন করে বিএনপি। এসময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতাদের নামে অনেক মামলা হয়। এসব মামলার কয়েকটিতে সমশের মবিনকেও আসামি করা হয়। যা নিয়ে তিনি রাজনৈতিক ও পারিবারিকভাবে চাপে ছিলেন। মামলায় আট জানুয়ারি তিনি গ্রেফতারও হন।

০৫. আট জানুয়ারি গ্রেফতার হয়ে প্রায় চার মাস তিনি কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে দলের তেমন কেউ যোগাযোগ করেনি। কেউ তার বা তার পরিবারের খোঁজ নেয়নি বলে পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ। তাদের কথা, বিএনপি ক্ষমতায় আসবে কি আসবে না, তার নিশ্চয়তা নেই। আর যে দল বিপদে পাশে থাকে না, সেই রাজনীতি করে কী হবে?

০৬ কারাগার থেকে বের হওয়ার পরেও দলের কেউ খোঁজ নেননি। তিনিও দলের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এসব নিয়ে তিনি মনোক্ষুন্ন ছিলেন। এসময় একদিন তারেক রহমান তার সঙ্গে ফোনে দুর্ব্যবহার করেন। তারেক রহমানের ব্যবহারে তিনি ক্ষুদ্ধ ছিলেন।

০৭. দলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের দায়িত্ব পালন করতেন সমশের। বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষায় একটু পিছিয়ে থাকায় গত জানুয়ারি এই দায়িত্ব দেওয়া হয় আব্দুল মঈন খানকে। এতে দলের সঙ্গে তার দূরত্ব বেড়ে যায়।

০৮. বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে বিচ্ছিন্ন বর্তমান দল। এটিও একটি কারণ বলে সমশের মবিন নিজেই জানেন। তিনি বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, উনি যে চিন্তাধারা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটা গঠনমূলক রাজনীতির কথা ভেবেছিলেন; অনেকের মনে প্রশ্ন এবং আমার মনেও প্রশ্ন, বিএনপি সেখানে কতটুকু রয়েছে? তবে যেটা বড় দাগের কথা, রাজনীতির অবক্ষয় অবশ্যই বাংলাদেশে ঘটেছে। এটা আমাদের কারো জন্য কাম্য নয়।’

০৯. দলের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের অন্যতম একটি কারণ, দল থেকে তাকে না ডাকা। অনেক সময়ই দলের নীতি-নির্ধারকদের কাছ থেকে মূল্যায়ন পাননি। ভবিষ্যতে দল পুনর্গঠনের সময় দল থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কাও ছিল। বিষয় দুটি তাকে হতাশ করেছিল। সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

১০. বিদেশি দুই নাগরিক হত্যার ঘটনায় বিএনপি নেতাদের জড়ানোর যে অভিযোগ করছে সরকার, তা বিদেশি কূটনীতিকদের সামনে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে সমশের মবিনকে বলেছিলেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।  দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ‘সমস্যা’য় থাকায়, ড. ওসমান ফারুক বিদেশে এবং দলের পক্ষে পররাষ্ট্র উইং দেখভাল করা অপর দুইজন রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমদের নানা সীমাবদ্ধতার কারণে শমসেরকে দায়িত্ব পালনে সক্রিয় হতে বলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু দীর্ঘদিন পর হঠাৎ দায়িত্ব পালনের বিষয়টি তিনি নিতে পারেননি এবং দলের প্রধানকে ‘সরাসরি না’ও বলতে পারেননি। একারণে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। (প্রিয়. কম)

নিউজ  ডেস্ক ।। আপডেট ০১:০৭ পিএম ৩১ অক্টোবর, ২০১৫ শনিবার

/ডিএইচ