Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / অপহরণ চেষ্টার অভিযোগে দুই পুলিশসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা
অপহরণ

অপহরণ চেষ্টার অভিযোগে দুই পুলিশসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা

চাঁদা না পেয়ে অপহরন চেষ্টার অভিযোগে দুই পুলিশসহ সাত জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। ভুক্তভোগী জামিল হোসাইন ঢাকা নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী । তিনি বাদী হয়ে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঢাকায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং- সি.আর. ৭৯৪/২৪।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, বাদী এবং বিবাদী সকলেরই চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের বাসিন্দা। কিন্তু তাদের কর্মক্ষেত্র ঢাকায়। বিবাদীদের ৭ জনের মধ্যে ৫ মুক্তিযোদ্ধা বাদশা পাঠান পরিবারের সদস্য এবং পতিত সরকারের সমর্থক ও সুবিধাভোগী। এদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল এবং মোহাম্মদ আলী মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত আছেন। পেশাগত আনুকূল্য আর আওয়ামীলীগের প্রভাব কাজে লাগিয়ে হাসিনা সরকারের সময়ে এলাকায় জমি দখল, চাঁদাবাজি, মামলা, হামলাসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন তারা। ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখে ঢাকা নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী (দোকান নং-১০৯) জামিল হোসেনের কাছে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করেন। জামিল বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় সমর্থক হওয়ায় এ সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন বিবাদীরা। গত ২৭ জুলাই ২০২৪ নিউমার্কেটের দোকান থেকে জামিল হোসেনকে অপহরনের চেষ্টা চালান তারা এবং পুনরায় চাঁদা দাবী ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। ভয়ে জামিল তৎক্ষনাৎ এ ঘটনায় কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৩ অক্টোবর নিউমার্কেট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যাহার জিডি নং-১৪১। জিডির বিষয়টি জানা জানি হলে ২২ অক্টোবর জামিলের মোহাম্মদপুরস্থ বাসার নিচে এসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিবাদীরা। বিষয়টি স্বীকার করলে পুনরায় তাঁকে অপহরন চেষ্টা চালিয়ে বিবাদীরা ব্যর্থ হয়। ২৭ অক্টোবর ভুক্তভোগী জামিল হোসেন চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঢাকায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে ফৌজদারী দণ্ডবিধির ৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩০৭/৩৬৪/৩৮৫/৫০৬(II)/১০৯ ধারায় অপরাধের উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযুক্ত ৭ আসামীর মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল, মোহাম্মদ আলী, জাহাঙ্গীর হোসেন, আলমগীর হোসেন, নাহিদুল ইসলাম একই পরিবারের সদস্য। অপর আসামীরা হলেন একই গ্রামের মোঃ আলম ও মোঃ মহসিন।

এ মামলাটি আগামী ৮ ডিসেম্বারের মধ্যে পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে জমা দিতে আদেশ দিয়েছেন আদালত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্তরা আওয়ামীলীগ সরকারের সমর্থক ছিলেন। বিগত সময়ে বাল্য বিয়ে না পড়ানোয় ইমামকে মারধর, মসজিদ কমিটি নিয়ে আলেমদের পেটানো, জমি দখল, মামলা বাণিজ্য, সালিশ বাণিজ্যসহ এলাকার মানুষজন তাদের দ্বারা ব্যাপক জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এরই জের ধরে ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর মোস্তাফিজুর রহমান দুলালদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল এবং মোহাম্মদ আলী বলেন, বিষয়টি মিথ্যা। তাদের সাথে আমাদের সম্পত্তিগত বিরোধ চলে আসছে। তবে তিনি ৫ আগস্ট তার বাড়িতে হামলার বিষয়টি স্বীকার করেন। দুলালের ভাই জাহাঙ্গীর হোসেনও বলেন, মামলাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

মামলার বাদী জামিল হোসেন জানান, আমি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় সমর্থক ছিলাম। ২৭ জুলাই প্রথমে তারা দোকানে এসে আমাকে বেদম মারধর করে এবং দোকান থেকে অপহরণের চেষ্টা করে। অন্যান্য ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধের মুখে তারা ব্যর্থ হয়। কিছুক্ষণ পর তাদের সাথে পুলিশের পোশাকধারী কয়েকজন লোক যুক্ত হয়। তারাসহ মারধর করে আমাকে দোকান থেকে নিয়ে যায়। আন্দোলনের সমর্থক হওয়ায় নানান ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। একটা উল্লখযোগ্য টাকা দেওয়ার পর সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যাই। সরকার পতনের পর একটি জিডি করি। জিডির বিষয়টি জানতে পেরে তারা পুনরায় অপহরণ চেষ্টা চালায়। আমি ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করি। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি এবং আমার কাছ হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়া ও আমাকে হয়রানীর ক্ষতিপূরণ দাবী করছি। মামলার সাক্ষী ইব্রাহীম মিয়াজীও অপহরণ চেষ্টার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ২ ডিসেম্বর ২০২৪