ফরিদগঞ্জে দাওয়াত পেয়ে উপজেলা পরিষদের সভা কক্ষে উপস্থিত হয়ে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান। এর ছাড়া, হই-হুল্লোড়, বাক-বিতন্ডা ও হুমকি ধমকি, ধাক্কা ধাক্কির মধ্য দিয়ে সভা পন্ড হয়ে গেছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের আক্রমণের মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যানদের অনিরাপদ রেখে সভাস্থল ত্যাগ করেছেন জেলা প্রশাসক ও নবাগত উপজেলা নির্বাাহী অফিসার। উপস্থিত কয়েকজন বিএনপি’র কর্মী ও সংবাদকর্মীরা তাদেরকে নিরাপদে বাড়ির ফেরার ব্যবস্থা করেন।
চাঁদপুরের নবাগত জেলা প্রশাসকের সামনে মঙ্গলবার(২২ অক্টোবর) বিকালে ওই ঘটনা ঘটেছে ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সভা কক্ষে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ফরিদগঞ্জে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট অংশি জনের সাথে মত বিনিময় সভার আয়োজন করেন নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতারা রাজিয়া। এতে, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চাঁদপুর জেলায় নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন। সভা শুরু হয় বেলা সকাল ১১ ঘটিকা নাগাদ। সভায় আমন্ত্রিত অংশিজন হিসেবে উপস্থিত হন বিভিন্ন বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ১৫ টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা এম.এ. হান্নান, সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ, মোতাহার হোসেন পাটয়ারী ও জামায়াতের সাবেক আমির উইনুছ হেলাল। ইউএনও’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান শুরুর পর পর্যায়ক্রমে ব্যবসায়ী, চেয়ারম্যানগণ দলীয় নেতা হারুনুর রশিদ, সাবেক মেয়র মঞ্জিল হোসেন ও জামায়াত আমির ইউনুছ হেলাল।
শান্তিপূর্ণভাবে সভার শেষের দিকে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন বক্তব্য শুরু করেন। ওই সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে হট্টগোল বাধে। প্রত্যক্ষদর্শী ও উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, সভায় আমন্ত্রিত নন এমন কয়েকজন বিএনপি নেতা একে একে প্রায় একই সুরে চিৎকার দিয়ে প্রশ্ন করেন এই সভায় তাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি, আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ও এতো লোকদের দাওয়াত দিয়েছে কে। এর মধ্য দিয়ে সভায় হই হট্টগোল শুরু হয়। নানাজন বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হন। এতে, জেলা প্রশাসকের বক্তব্য বাধাগ্রস্ত হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তিনি বক্তব্য বন্ধ করে দেন। নির্বাহী অফিাসর, ওসি হানিফ সরকারসহ অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তাগণ জেলা প্রশাসককে ইউএনও’র কতক্ষে নিয়ে যান। ওই সময়, ভেতরে আটকে পড়েন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ইউপি চেয়ারম্যান কাউছারুল আলম কামরুল, শাহ আলম শেখ, হারুনুর রশিদ ও বুলবুল আহমেদ। দলীয় নেতা-কর্মীরা তাদের উদ্দেশ্যে হাঁকডাক দেন, গালমন্দ করেন ও জানালা দিয়ে তাদের দিকে পানির বোতল ছুঁড়ে মারেন ও মারমুখি হন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চেয়ারম্যানদের সেখান থেকে কয়েকজন সাংবাদিক ও বিএনপি কর্মীরা তাদেরকে তিন তলায় নিয়ে যান ও নিরাপদে বাড়ি যেতে সাহায্য করেন। পথিমধ্যে ওই চেয়ারম্যানদেরকে লাঠিসোঁটা হাতে ধাওয়া দেওয়া হয়।
৯নং ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম শেখ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিএনজিযোগে বাড়ি যাওয়ার পথে মাজারের সামনে কয়েকজন আমাদের গতিরোধ করেন। তারা আমাকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন। ওই সময় বাধা দিলে সাথে থাকা শাহ আলম মেম্বারকে কেল ঘুষি মারা হয়। তখন টানাহেঁচড়ায়, সিএনজি’র স্টিলের কয়েকটি স্টিক খুলে যায়। ওই সময় বিএনপির কয়েকজন দেখেন ও তাদের হটিয়ে আমাদেরকে বাড়ি যেতে সাহায্য করেন।
এ ব্যপারে মুঠোফোনে সাবেক মেয়র মঞ্জিল হোসেন বলেন, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার ফরিদগঞ্জে একমাত্র প্রতিনিধি এম.এ. হান্নান দাওয়াতপ্রাপ্ত ছিলেন। তিনি আসতে না পারায় আমি তার প্রতিনিধিত্ব করেছি। দাওয়াত না পেয়ে কিছু সংখ্যক নেতা আপত্তি করেছেন। জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বলেছেন সভাটি ছোট পরিসরে আয়োজন ছিল। এ ছাড়া, এখানে আমরা দুজনই নতুন যোগদান করেছি। ভবিষ্যতে খেয়াল থাকবে।
মঞ্জিল হোসেন বলেন, এর মধ্যে হট্টগোল বাধলে আমি চলে আসি। কে বা কারা পরে উচ্ছৃংখলতা করেছে আমি জানি না।
সভায় অনেকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পৌর প্রশাসক এ.আর.এম. জাহিদ হাসান, থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হানিফ সরকার, উপজেলা কৃষি অফিসার কল্লোল কিশোর সরকার, মৎস্য কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন, বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক খালেক পাটওয়ারী প্রমুখ।
এ ব্যপারে নির্বাহী অফিসার সুলতানা রাজিয়া বলেছেন, বাজার ব্যবস্থাপনা ও দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ছোট পরিসরে সভার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে, নবাগত জেলা প্রশাসকের আগমন ও গুরুত্ব বিবেচনায় সর্ব সাকুল্যে বিএনপি ও জামায়াতের চারজন নেতাকে দাওয়াত করি। কিন্তু, তাদের সঙ্গে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হয়ে যায়। এ জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। উদ্ভুত ঘটনা বিবেচনায় ভবিষ্যতের জন্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হলো।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ২২ অক্টোবর ২০২৪