Home / চাঁদপুর / নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব
জীববৈচিত্র্য

নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, চাঁদপুরে পদ্মা মেঘনা নদীতে নিয়মবহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর ইলিশসহ জীববৈচিত্র্য এবং সরকারি সম্পদের যে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।

মৎস্য বিভাগ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ প্রতিটি দপ্তর আলাদাভাবে তাদের ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করে আগামী ১৪ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। যারা নিয়মবহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করে এই ক্ষতি সাধন করেছে, তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হবে। কেউ যদি বিদেশে টাকা পাচার করে রাখে, সেখান থেকে এনে হলেও জরিমানা দিতে হবে। কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না। সে যত বড় ক্ষমতাবান হোক না কেন।

৩১ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেলে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আয়োজিত জেলা নদী রক্ষা কমিটির বিশেষ সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী আরো বলেন, ‘বালু উত্তোলনকারীরা হাইকোর্টে একটি রিট দেখিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে পালন করে যাচ্ছে। কিন্তু যে পরিমাণ বালু উত্তোলন করার কথা তার চেয়ে বহু গুণ বেশি বালু উত্তোলন করেছে। তবে বালু উত্তোলন করলেও তাদের বালু বিক্রি করার কোনো বৈধতা নেই। চাঁদপুর সদরে মেঘনা নদীর ১২টি মৌজার মধ্যে ৭টির অস্তিত্ব বিলিন হয়ে গেছে। তারা যে হাইড্রোগ্রাফি জরিফ করেছে তা সঠিক নেই।’

নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘আমাদের সম্মিলিত তৎপর প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে একটি বিশাল বিজয় এসেছে। সেটি হলো বর্তমানে নদীতে কোন অবৈধ ড্রেজার নেই। অথচ দুঃখের কথা হলো এই সংবাদটি গণমাধ্যমে তেমন ভাবে প্রকাশ পায়নি। নদীরক্ষায় আমাদের জাতীয় সম্পদ, নদী এবং নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা আমাদের সকলের দায়িত্ব। যে সকল সাংবাদিকরা সরকারের সম্পদ রক্ষায় সংবাদ পরিবেশন করে সাহসিকতার পরিচয় দেখিয়েছেন, আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই। সাংবাদিকরা হলেন জাতির বিবেক, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তাই আমরা যারা সরকারের কর্মচারী এবং সাধারণ মানুষ, তারা সাংবাদিকদের কাছে সত্য লেখা প্রত্যাশা করতে পারি।’

নদী রক্ষা কমিশনের উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও পরীবীক্ষণ ) মো. আক্তারুজ্জামান তালুকদার বলেন, চাঁদপুর প্রতিদিন ৩শ’ ড্রেজার বালু উত্তোলন করেছে। যা প্রতিটি ড্রেজারের একদিনের সক্ষমতায় ৫ বছরে হিসেবে প্রায় ৪শ’ ৫৫ কোটি ঘনফুট হবে। এই বিপুল সংখ্যক বালু উত্তোলনে মৎস্য ও জীববৈচিত্রসহ সরকারি সম্পদের কত টাকার ক্ষতি হয়েছে তা জানাতে হবে।

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ তার বক্তব্যে বলেন, সরকারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে সরকারী সম্পদ রক্ষা করা আমার দায়িত্ব। আমি আমার দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ সচেষ্ট রয়েছি। এক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদসহ সরকারি সকল দপ্তর থেকে আমি সহযোগিতা পাচ্ছি। যেহুতু চাঁদপুর জেলা প্রশাসক থেকে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের কোন ইজারা দেয়নি, তাই কোন অবস্থাতেই নিয়মবহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করতে দেয়া হবে না।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, একটা সময় নদীতে বিভিন্ন প্রকার জীববৈচিত্র্য দেখা পেতাম। কালের আবর্তে নদী দূষণের ফলে সেগুলিও হারাতে বসেছি। আমাদের জীবনমান এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদীকে দূষণের হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে। যদি দখলকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, জনমানুষের নিরাপত্তার পাশাপাশি সরকারের যে কোন সম্পদ রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর। সরকারি নিয়ম বহির্ভূতভাবে যেকোনো অপকাজ প্রতিরোধে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। নদী রক্ষায় আপনাদের সাথে আমরা আছি এবং থাকবো।

মৎস্য বিভাগের প্রতিনিধি তার বক্তব্যে বলেন, নদী জীববৈচিত্র রক্ষায় ১৯৮৬ সাল থেকে কাজ করে আসছি। জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষার শুরুটা হয় চাঁদপুর থেকে। ইলিশ সামুদ্রিক মাছ। তারা খাবারের সন্ধানে নদীর অভয়াশ্রমে চলে আসে। আমাদের গবেষণা করে ইলিশের দেহে ৩৬% বালিকণা পাওয়া গিয়েছিলো। যা ইলিশের দেশের মারাত্মক ক্ষতি করতো। শুধু তাই নয়, এতে ইলিশের প্রজননেও ক্ষতি হচ্ছে। এবারে নিয়মবহির্ভূতভাবে ড্রেজার বন্ধ থাকায় নদী তার আগের রূপ ফিরে পেতে শুরু করেছে। নদীর পানি অনেক স্বচ্ছ এবং পরিচ্ছন্ন হয়েছে। এটিকে ধরে রাখতে হবে। নদী যেন আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া যায়, সেজন্য আমাদেরকে সতেষ্ট থাকতে হবে।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান, জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও পরীবীক্ষণ ) মো. আক্তারুজ্জামান তালুকদার, উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ড. খ.ম কবিরুল ইসলাম, পোগ্রাম অফিসার খালেকুজ্জামান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী প্রমুখ।

প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ৩১ মার্চ ২০২২