চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক :
রাজবাড়ীতে চাচার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল ১৫ বছরের মেয়েটি। চাচী বাড়িতে এক পুরুষকে ডেকে এনে কিশোরীকে ধর্ষণ করালেন। আর চাচা চুলের মুঠি ধরে থাপ্পড়, কিল-ঘুষিসহ বেধড়ক মারপিট করলেন। পুকুর পাড়ে গাছের সঙ্গে গরুর দড়ি দিয়ে অভুক্ত অবস্থায় বেঁধে রাখলেন।
এমন বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে রাজবাড়ী জেলা সদরের খানগঞ্জ ইউনিয়নের বেলগাছীর খোশবাড়ি গ্রামে।
স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে সদর থানা পুলিশ কিশোরীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। রাতে মেয়েটি বাদী হয়ে চাচা, চাচী ও অজ্ঞাতপরিচয় ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
পুলিশ হোসেন আলী মোল্লা ও তার স্ত্রী হাজেরা বেগমকে আটক করেছে। তবে এখনো ধরা পড়েনি ধর্ষক। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহীদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলা সদরের খানগঞ্জ ইউনিয়নের বেলগাছীর খোশবাড়ি গ্রামে দরিদ্র রিকশাচালক চাচা হোসেন আলী মোল্লার বাড়িতে গত বৃহস্পতিবার পাবনা থেকে বেড়াতে আসে মেয়েটি। চাচা ঢাকায় রিকশা চালান। এ কারণে বাড়িতে থাকা চাচী হাজেরা বেগম এলাকার বখাটে যুবককে প্ররোচণা দিয়ে তাকে ধর্ষণ করায়— অভিযোগ ভাতিজীর।
ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার কিশোরী বলেন, ‘পাবনা জেলার দয়াল নগর থেকে আমি রাজবাড়ী জেলা সদরের খানগঞ্জ ইউনিয়নের বেলগাছীর খোশবাড়ী গ্রামে চাচা হোসেন আলীর বাড়িতে বেড়াতে আসি। চাচা ঢাকায় থাকার কারণে বাড়ি ফাঁকা ছিল। এই সুযোগে চাচী হাজেরা বেগম একজন লোককে বাড়িতে ডেকে আনে। চাচী লোকটিকে রেখে বাইরে চলে যায়। লোকটি আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
ঘটনাটি জানাজানি হলে চাচা হোসেন আলী ঢাকা থেকে রাজবাড়ীতে এসে ভাতিজীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গ্রামবাসীর সামনে চুলের মুঠি ধরে থাপ্পড়, কিল-ঘুষিসহ বেধড়ক মারপিট করে। এরপর মেয়েটিকে বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ে একটি গাছের সঙ্গে গরুর দড়ি দিয়ে অভুক্ত অবস্থায় বেঁধে রাখে।
চাচা হোসেন আলী মণ্ডল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গ্রামের মেম্বার বলেছে, ওকে দেশের বাড়িতে পাঠাও, ওকে বাড়িতে রাখবে না। এরপর আমি মেয়েটির বাবাকে ফোনে খবর দিলে সে বলে, ওকে বেঁধে রাখো যাতে সে কোথাও পালিয়ে না যায়। তাই মেয়েটিকে আমি বেঁধে রাখি।’
বিষয়টি জানাজানি হলে ফুঁসে ওঠেন এলাকাবাসী। স্থানীয় মো. মাসুদ শেখ বলেন, আমাদের এলাকায় এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। প্রকৃত দোষীদের সঠিক বিচার করতে হবে। মেয়েটিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা ঠিক হয়নি। তাকে অন্য কোথাও বসিয়ে পাহারা দিয়ে রাখা যেতো। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন।
মেয়েটির উপর এমন পাশবিক নির্যাতনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান খানগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাহার হোসেন তকদির। তিনি বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক, মধ্যযুগীয় বর্বরতার মতো। অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে। গ্রামের মেম্বার ও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি শোনার পর মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। রোববার রাতে মেয়েটি বাদী হয়ে তার চাচা-চাচী ও অজ্ঞাতপরিচয় ধর্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করে।
তিনি আরও বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মেয়েটির চাচা হোসেন আলী মোল্লা ও চাচী হাজেরা বেগমকে আটক করেছে। তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন ওসি শহীদুল ইসলাম।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur