মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের মধ্যেও দেশটি থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে চীনের উপর আস্থা রাখছে বাংলাদেশ সরকার।
সাড়ে তিন বছর পর যখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর আশা দেখছিল বাংলাদেশ, তখনই মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান হয়ে অং সান সূ চি সরকারের পতন হল।
তবে বাংলাদেশের প্রতি চীনের সমর্থন থাকলে মিয়ানমারে ক্ষমতার পরিবর্তনে রোহিঙ্গা প্রশ্নে দেশটির অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন না আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও সাবেক কূটনীতিকরা।
এদিকে সেনা অভ্যুত্থানের দুই দিন পর বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘আমরা এখনও চীনের উপর আস্থা রাখছি। কারণ সব দেশই আমাদের বন্ধু দেশ। চীন এ ব্যাপারে কিছু অগ্রসর হয়ে এসেছে। জাপানও অগ্রসর হয়েছিল, অ্যাপ্লাই যেহেতু হয়নি। চীন অগ্রসর হয়েছে, অ্যাপ্লাই হয়েছে। আমরা তাদের আস্থার মধ্যে রেখেছি।’
দীর্ঘ দিনের চার লাখের সঙ্গে গত তিন বছর ধরে আরও সাত লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারে নিপীড়নের মুখে পালিয়ে এসেছে তারা।
এদের ফেরত নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার তিন বছরেও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আটকে থাকার মধ্যে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে ভূমিকা রাখতে চাইছে দুই দেশের ‘বন্ধু’ চীন।
সর্বশেষ গত ১৯ জানুয়ারি মিয়ানমারের সঙ্গে চীনে মধ্যস্থতায় ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বাংলাদেশ। ওই বৈঠকের পর বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুম বিন মোমেন। সেই মধ্যস্থতায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার মিয়ানমার-চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ওয়ার্কিং কমিটির সভা হওয়ার কথা ছিল।
প্রতিবেশী দেশটিতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের কারণে এই বৈঠক কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে বলে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
আরও পড়ুন : সু চিকে ছেড়ে না দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: বাইডেন
বহু কার্যক্রমে মিয়ানমারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা চীন সর্বশেষ মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের ঘটনায় জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব আটকে দিয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে চীনের উপর আস্থা রাখার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, মিয়ানমারে ইন্টারনেট ও ফোন সংযোগ বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তবে ঢাকায় চীন ও মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আলাপ হয়েছে। আমরা প্রক্রিয়াটা চালু রাখতে চাই, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। আমরা তো সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তি করেছি, কোনো ব্যক্তি বিশেষের সঙ্গে হয়নি। এটা চালু থাকুক।’
মিয়ানমারে পরিবর্তিত সরকারের ক্ষেত্রেও প্রত্যাবাসন সম্ভব জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আগে যখন মিয়ানমারে সামরিক সরকার ছিল, ’৭৮ বা ’৯২ সালে, সামরিক সরকারের সময়ে প্রত্যাবাসনটা হয়েছে। এখন কেন নয়?”
সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকারের কারণে মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ঢল আবারও বাংলাদেশের দিকে ছুটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা।
এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের এমন আশঙ্কা নাই। তবে অনেক বন্ধু রাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশ এমন আশঙ্কা করছে।”
তবে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে মোমেন বলেন, “আগেরবার যারা এসেছিল, আমাদের জনগণই তাদের গ্রহণ করেছে। এখন আমাদের জনগণ গ্রহণ করার মুডে আর নাই। আমরা আমাদের বর্ডার সিকিউরড করে রেখেছি, এ ধরনের ঘটনা হলে অন্যরা নিয়ে যাক, আমরা নিতে রাজি না।”
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১