গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরী ও চেয়ারম্যান ডা.সাবরিনা এ চৌধুরী পরস্পরকে দোষারোপ করে বক্তব্য দিয়েছেন। স্বামী-স্ত্রী একের দোষ অন্যের ওপর চাপানোর নিরন্তন প্রয়াস চালিয়েছেন। মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে আরিফকে একপর্যায়ে সাবরিনা বলে ওঠেন– টাউট, তোর জন্যই আমার সব শেষ হয়ে গেছে। তোর জন্য আজ আমার এই পরিণতি। ডাক্তার হয়েও আজ আমি জেলে, রিমান্ডে।
অন্যদিকে আরিফের দাবি, সাবরিনার প্ররোচনাতেই তিনি করোনা টেস্ট জালিয়াতিতে নিজেকে যুক্ত করেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত দুদিন ডিবি তাদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সাবরিনার রিমান্ড শেষ হয়েছে। তাকে আবারও রিমান্ডে চাইবে ডিবি।
জিজ্ঞাসাবাদে করোনা পরীক্ষার নামে জালিয়াতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক (বরখাস্ত) ডা. সাবরিনা চৌধুরী এবং তার স্বামী (প্রতিষ্ঠানের সিইও) আরিফ চৌধুরী।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আরিফের দাবি– তিনি এ প্রতারণায় নেমেছিলেন সাবরিনার প্ররোচনায়। আর সাবরিনা বলছেন– জেকেজি ও ওভাল গ্রুপের অনেকেই এ অপকর্মে যুক্ত।
আরিফ চৌধুরীর এমন অপকর্ম ও ব্যক্তিগত হয়রানির কারণে তিনি তাকে ডিভোর্সও দিয়েছেন। আরিফকে বিয়ে করার কারণেই আজ তার এমন পরিণতি।
সূত্র জানায়, আরিফ, সাবরিনা ও সাঈদকে প্রথমে আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর পর তাদের দেয়া তথ্য যাচাই করতে তিনজনকে মুখোমুখি করা হয়।
বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের তিন দফায় মুখোমুখি করা হয়। কিন্তু প্রত্যেকে নিজের দায় এড়িয়ে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছেন।
রাজধানীর মিন্টো রোডে বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, আরিফ ও সাবরিনা করোনা নিয়ে তাদের জেকেজি হেলথকেয়ারের ভুয়া রিপোর্টের কথা স্বীকার করেছেন। তবে কী পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, সেটি স্বীকার করেননি। অর্থ আত্মসাতের বিষয়টিও তদন্ত করা হচ্ছে।
বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল জেকেজি। তারা টাকা কোথায় রেখেছে তা খোঁজা হবে। ব্যাংকগুলো দেখা হবে।
তিনি বলেন, সাবরিনাকে ফের রিমান্ডে এনে মুখোমুখি করা হবে। এই কোম্পানিতে কার কী অবদান, কার কী দায়িত্ব ছিল তা তদন্ত করে দেখা হবে। যার যতটুকু দায় সেই অনুযায়ী তদন্ত হবে।
ডিবি সূত্র জানায়, আজ সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে ডা. সাবরিনাকে আদালতে হাজির করা হবে। বৃহস্পতিবারই তাকে হাজির করার চিন্তাভাবনা ছিল, তবে তদন্তের স্বার্থে সময় পেছানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ গোয়েন্দাদের বলেন, ‘রিপোর্ট জালিয়াতির বিষয়টি সাবরিনার মাধ্যমেই শুরু হয়।’ এ সময় সাবরিনা ক্ষিপ্ত হয়ে আরিফকে বলেন, ‘টাউট, তোর জন্যই আমার সব শেষ হয়ে গেছে।’
গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি গোলাম মোস্তফা রাসেল যুগান্তরকে বলেন, পরস্পরকে দোষারোপ করলেও আরিফ অনেক কিছুই স্বীকার করেছেন। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। খুব দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে চার্জশিট দেয়া হবে।
এ ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদফতরের কেউ সংশ্লিষ্ট আছে কিনা? জবাবে ডিসি বলেন, এসব বিষয়ে আমরা এখনও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করিনি। তবে সব বিষয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
বার্তা কক্ষ,১৭ জুলাই ২০২০