Home / সারাদেশ / করোনায় কোরবানির পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা
COW-1............
প্রতীকী ছবি

করোনায় কোরবানির পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা

কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। ইতোমধ্যে রাজধানীর দু’সিটি করপোরেশন পশুর হাট ইজারার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলেছে, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনেই রাজধানীসহ সারাদেশে কোরবানির পশুর হাট বসবে ।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সারাদেশে কোরবানিযোগ্য পশুর তথ্য পাওয়া গেছে। সারাদেশের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর কোরবানিযোগ্য পশু আছে ১ কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে গরু-মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও অন্যান্য পশুর সংখ্যা আলাদা করেনি অধিদপ্তর। আগামী সপ্তাহ পুরো তথ্য মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া হবে বলে জানা গেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (খামার) ড.এ বি এম খালেদুজ্জামান বলেন, ‘গত বছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ এবার ১ কোটি ২০ লাখ।’ তিনি বলেন, ‘দেশের পর্যাপ্ত পশু আছে। তবে করোনার কারণে কোরবানির সংখ্যা একটু কমে যেতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড.আবদুল জব্বার শিকদার বলেন, ‘গত দু’-তিন বছর থেকে আমাদের কোরবানির পশু অন্য দেশ থেকে আনতে হচ্ছে না। গত বছরও ১০ লাখের মতো পশু অবিক্রীত ছিল। এর মানে আমরা গবাদি পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি। এবারও পশু চাহিদার চেয়ে বেশিই আছে।’

তিনি বলেন,‘পশু কিভাবে বিক্রি হবে সেটা ঠিক করার দায়িত্ব সংস্থার। যেমন ঢাকায় ঠিক করবে সিটি করপোরেশন। আমরা সিটি করপোরেশনের ঠিক করা হাটে গবাদি পশুর স্বাস্থ্যজনিত চিকিৎসা নিশ্চিত করে থাকি। এবার এর হার বাড়ানো হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরু বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ পশু কোরবানি ও জীবন রক্ষা দুটিই জরুরি। আশা করি সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়টি মাথায় নিয়েই কাজ করবেন।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার কারণে সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব চলছে। বিপাকে পড়ছেন দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। যারা কয়েকজন মিলে কোরবানি দেন। করোনার কারণে এ শ্রেণির সবচেয়ে বিপাকে থাকায় অনেকেই চলতি বছর কোরবানি দিতে পারবেন না। এতে কোরবানির পশু বিক্রি কমে যেতে পারে। এতে পর্যাপ্ত গরু থাকার পরও দাম পাবেন না খামারিরা। এমন উদ্বেগের মধ্যে কোরবানিযোগ্য পশু নিয়ে দুচিন্তায় পড়েছে দেশের গরু খামারি,প্রান্তিকপর্যায়ের কৃষক। যদিও ভারতের গরুর আনা হবে বলে সাফ জানিয়েছে দিয়েছে সরকার।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশ মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর থেকে ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশ উলেস্নখযোগ্য হারে কমে গেছে। আগে প্রতি বছর ২৪-২৫ লাখ ভারতীয় গরু আসত।

২০১৯ সালে মাত্র ৮৫ হাজার গরু ঢুকেছে। গত বছর সারাদেশে কোরবানিযোগ্য ৪৫ লাখ ৮২ হাজার গরু-মহিষ, ৭২ লাখ ছাগল-ভেড়া এবং ৬ হাজার ৫৬৩টি অন্যান্য পশুর কোরবানিও হয়েছে। আসন্ন ঈদুল আজহায় এক কোটি বেশি পশুর কোরবানি হতে পারে।

এদিকে ঈদুল আজহার পশুর সংখ্যা নিরূপণ, কোরবানির হাটবাজারে স্বাস্থ্যসম্মত পশুর ক্রয়-বিক্রয় ও স্বাস্থ্যসেবা, করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট বসানো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিয়ে আগামি সপ্তাহ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে পশুর সম্ভাব্য একটি দাম নির্ধারণ করা হতে পারে।

এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ বলেন,‘ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে পূর্ণাঙ্গ পশুর তালিকা পাওয়ার পর আন্তঃ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হবে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তার মতে, ঈদের আগে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি না হলে কোরবানির পশুর ওপর একটা প্রভাব তো পড়বেই। তারপরও ভারত থেকে কোনো পশু আসবে না এটা খামারিতে জন্য সুখবর।’

এদিকে ক্ষুদ্র, মাঝারী ও বড় সবধরনের খামারিরা এখন দুচিন্তায় । কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, দেশের পশু খামারিদের দুশ্চিন্তা ততই বাড়ছে। কারণ মহামারি করোনায় প্রকোপ এখনো কমেনি । বাংলাদেশে বরং আরও দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় খামারিরা পশু বাজারে নিতে পারবেন কিনা, বাজারে নিলেও ক্রেতা মিলবে কিনা, ক্রেতা মিললেও দাম সঠিক পাবেন কিনা এসব বিষয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই আতঙ্কে রয়েছেন দেশের পশু খামারিরা।

বার্তা কক্ষ , ১ জুলাই ২০২০