Home / বিশেষ সংবাদ / বিশ্ব তামাক দিবস আজ
no-smoking

বিশ্ব তামাক দিবস আজ

আগামিকাল রোববার ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এ বছর বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উদযাপিত হচ্ছে,‘তামাক কোম্পানির কূটচাল রুখে দাও-তামাক ও নিকোটিন থেকে তরুণদের বাঁচাও’এ প্রতিপাদ্য নিয়ে।

বছরের পর বছর ধরে তামাক এবং অন্যান্য নিকোটিন পণ্যে শিশু-কিশোর এবং তরুণদের আকৃষ্ট করতে অত্যন্ত কৌশলী এবং আগ্রাসী প্রচারণা চালিয়ে আসছে তামাক কোম্পানিগুলো। তামাকের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে ৮০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায় । এরমধ্যে শুধু বাংলাদেশেই বছরে ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষ মারা যায় তামাক ব্যবহারজনিত রোগে।

হু এর তথ্য মতে, যারা কিশোর বয়সে ধূমপানে আসক্ত হয়, তাদের অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা স্বাভাবিকের তুলনায় তিন গুণ বেশি, গাঁজায় (মারিজুয়ানা) ৮ গুণ এবং কোকেইনের ক্ষেত্রে ২২ গুণ বেশি। অর্থাৎ তামাক ও নিকোটিন কেবল একটি আসক্তিই নয়, এটি তরুণদের আরো অনেক বিধ্বংসী আসক্তির পথে পরিচালিত করে।

তামাক দিবসের প্রেক্ষাপট

১৯৭৮ সালে প্রথমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাক ও তামাকজাত এবং সিগারেট বা বিড়ি সেবনের ক্ষতিকর দিবসটির প্রতি নজরে আনে। সে বছর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তামাকমুক্ত দিবস পালিত হয়ে আসছে।

বর্তমান বিশ্বে হার্ট অ্যাটাক হলো প্রধান প্রাণঘাতী রোগ। মুহূর্র্তের মধ্যে ছোবল মেরে নিয়ে যায় একটি জীবন। স্পষ্ট বোঝা যায় কী মারাত্মক এ হার্ট অ্যাটাক নামক ঘাতক ব্যাধিটি। এ হার্ট অ্যাটাকের যদিও অনেক কারণ রয়েছে তবুও ধূমপান করলে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মরার ঝুঁকি থাকে বেশি। উচ্চ রক্তচাপের জন্যও ধূমপান কোনো কোনো ক্ষেত্রে দায়ী বলে বিবেচিত।

তামাকের নেতিবাচক প্রভাবগুলি বিশেষ করে ফুসফুসের ওপর সচেতনতা বাড়ানোর জন্য একটি প্রচারণা সংগঠিত করবে। এটি ফুসফুসের গুরুত্ব এবং একজন ব্যক্তির সার্বিক সুবিধার জন্য এটি কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা নিয়ে এবারের তামাক দিবসে স্থান পেয়েছে। দেশের ৯০% লোকের ধারণা তামাক পণ্য সেবনে স্ট্রোক,হার্ট অ্যাটাক ও ফসফুসের ক্যানসার হতে পারে।

চিকিৎসকদের মতে , ধূমপানের কুফলে শরীরের প্রায় সব অঙ্গই সরাসরি আক্রান্ত হয়। তবে ফুসফুস এবং হৃদযন্ত্রই বেশি আক্রান্ত হয়। ফুসফুস সংক্রান্ত রোগের মধ্যে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস অন্যতম।এ রোগটির অনেক কারণ রয়েছে। তবুও ধূমপান হচ্ছে এর প্রধানতম কারণ। ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসে ভোগা একজন ধূমপায়ী হারিয়ে ফেলে তার প্রাণশক্তি। সারা দিন কাশি আর শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকে। এভাবে যে কত শ্রম দিবস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।

পুরুষদের ৪৬ % মানুষই সিগারেট,বিড়ি,জর্দা বা অন্যকোনো তামাক জাত পণ্য ব্যবহার করছেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে এর হার ২৫ %। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য মতে,দেশের প্রাপ্তবয়স্ক ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক সেবী।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর সারা বিশ্বে ২০ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহারের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশের হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ৩০% জন্যেই দায়ী ধূমপান তথা তামাক ব্যবহার এখন খুবই আশংকাজনক। তামাক ব্যবহারজনিত রোগ ও মৃত্যু এখন আতংক। আমাদের দেশের জন্যে একটি বড় রকমের চ্যালেঞ্জ ।

দেশে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সূত্র মতে,বাংলাদেশে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের কারণে প্রতিবছর সোযা এক লাখ মানুষ মারা যায় । প্রতিবছর ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুগুত্ব বরণ করে।

১২ লাখ মানুষ প্রতিবছর তামাকজনিত ব্যবহারের ফলে ক্যান্সার,স্ট্রোক,হৃদরোগ,অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট,লিভার ক্যান্সার ইত্যাদি জটিলরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ২৫% মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে আসে। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়।অন্যদিগে তামাক খাত থেকে বছরে ২,৪০০ কোটি টাকা আয় হলেও নীট ক্ষতি ২,৬০০ কোটি টাকা।

আমাদের দেশে পরোক্ষভাবে ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ ধূমপানের শিকার। এর মধ্যে ১ কোটি নারী। কর্মক্ষেত্রে ৬৩% ও পাবলিক প্লেসে ৪৫% মানুষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। শুধু হোটেল, রেস্তোঁরা ও চায়ের দোকানগুলিতে ২ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হতে হচ্ছে।

প্রাপ্ত সূত্র মতে, দেশে দৈনিক কম হলেও ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা ও বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সিগারেট বা বিড়ি বিক্রি হয়। এ বিক্রিত অর্থে বাংলাদেশের ৫ বছরের নিচে ৭০ লাখ অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশুদেরকে দৈনিক এক গ্লাস করে দুধ পান করানো সম্ভব অথবা ১ কোটি ৫০ লাখ অভুক্ত মানুষের ৪ শ’ক্যালোরি খাবার দেয়া সম্ভব।

তামাক ব্যবহার কমাতে বিশ্বের ৭৭ টি দেশে এরইমধ্যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তা দেয়া শুরু করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রকাশ্য ধূমপান নিষিদ্ধ করেছেন। সুইডেনে সর্বপ্রথম প্রকাশ্য ধূমপান নিষিদ্ধ ঘোষণা দেয়া হয়। কিছুদিন পূর্বে উগান্ডায় প্রকাশ্য ধূমপান নিষিদ্ধ করে।

বাংলাদেশেও প্রকাশ্য ও শিশুদের সামনে বা পাশে ধূমপান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার মিডিয়াতে সকল প্রকার চকলাদার তামাক, তামাকজাত পণ্য ও সিগারেটের বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ করেছে। আইনের মাধ্যমে প্রকাশ্য একজন ধূমপায়ীকে ১শ’টাকা জরিমানা ও ৩ মাস জেল দেয়ার বিধান করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশ তা বাস্তবায়নে পিঁছিয়ে আছে ।

ইউএস সার্জন জেনারেল রিপোর্ট ২০১৪ অনুযায়ী, প্রায় ৯০% সিগারেট ধূমপায়ী ১৮ বছর বয়সের মধ্যে প্রথমবার ধূমপান করে। অল্প বয়সে তামাকপণ্যে আসক্ত হয়ে পড়লে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ফুসফুসের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। ফুসফুস ক্যান্সার, হৃদরোগ, অকাল বার্ধক্য, মানসিক অস্থিতিশীলতাসহ নানাবিধ রোগ সৃষ্টি হয় তামাকের কারণে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন ধূমপান, তামাক ও ভ্যাপিং পণ্য ব্যবহারে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথ সুগমে তামাকপণ্য নিয়ন্ত্রণ এবং তামাক কোম্পানির সকল কারসাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে কর ও মূল্য পদক্ষেপের মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধি, তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ মোকাবেলায় খসড়া এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ নীতিমালা চূড়ান্তকরণ ও বাস্তবায়ন, তামাকপণ্যের মোড়কে আইন অনুযায়ী সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তামাক কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত যেকোন ধরনের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে বিক্রয়স্থলে প্রোডাক্ট ডিসপ্লের মাধ্যমে তামাকপণ্যের প্রচার বন্ধ এবং পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ বিলুপ্ত করতে হবে।

প্রতিবেদক : আবদুল গনি , ৩১ মে ২০২০