স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :
কবি সুফিয়া কামাল স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামালের জীবন ও সাহিত্য কর্ম একটি অসাম্প্রদায়িক, সমতাপূর্ণ মানবিক সমাজ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিবেদিত ছিলো।
‘সাহিত্যের কৃতি ও চর্চার মধ্য দিয়ে সুফিয়া কামাল বৈচিত্র্যসন্ধানী হয়েছেন যেমন, তেমনি নারী ও মানবাধিকার নিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে সাহসী বাণী উচ্চারণ করেছেন। নারীই মুক্ত করবে বন্দি মানবতাকে- নবযুগের চেতনায় নারীর অধিকার আর মানবাধিকার একই মুদ্রার দুইপিঠ। কবির ভাষায় -‘বিলাস তো নয়, সংগ্রামে লাভ হয়/অমৃত মমতা ছড়াব পৃথিবীময়’। জীবনের উর্বরতা, সাম্যময়তা, আলোময়তার জন্যেই এই অমৃত মমতা প্রয়োজন,’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান বেগম আখতার কামাল সুফিয়া কামাল স্মারক বক্তৃতানুষ্ঠানে শনিবার একথা বলেন।
কবির ১০৪ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘সুুফিয়া কামালের সাহিত্য : মানবতাবাদ ও নারীর অধিকার’ শীর্ষক এ স্মারক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। স্মারক বক্তৃতা শেষে দেশের আট বিশিষ্ট নারীকে সুফিয়া কামাল সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়। তারা হলেন, ভাষাসৈনিক হালিমা খাতুন, সুফিয়া আহমেদ, রওশন আরা বাচ্চু ও প্রতিভা মুৎসুদ্দি, বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি মিলি বিশ্বাস, বেলাবোর কৃষক ফরিদা বেগম, সাভারের শ্রমিক আরতী রানী, কাউখালীর স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি মমতা শিকদার।
বেগম আখতার কামাল স্মারক বক্তৃতায় বলেন, মানবাধিকারের প্রথম শর্তই হলো, নিপীড়িতদের মুক্তি ও জাগরণ। আর সে জাগরণ আনবে রুদ্রশক্তির নেতৃত্ব। কবির চাওয়া হচ্ছে সেই রুদ্রশক্তি জেগে উঠুক কোটি মুক্ত প্রাণের স্বাক্ষরে তিমির-বিদারী আলো আসুক। জনতার অধিকার নিয়েও তার সচেতনতা রয়েছে এবং উদারনৈতিক মানবতাবাদীর মতো তিনিও একজন সর্বকালের রাজার নেতৃত্ব ও আবাহন প্রত্যাশা করেন। কবির পঙতিতে – “জনতার পদে পৃষ্ঠ মানব মহান/ রুদ্ধ কণ্ঠ, তবু গাহে গান/ তাহারি সে রুদ্ধ কণ্ঠ ভাঙ্গা বর্ষ অন্তিম সঙ্গীতে/ নবচেতনার বাণী মূর্ত হয় মুক্তির ইঙ্গিতে।’
আয়শা খানম কবি সুফিয়া কামালকে বাংলাদেশের ‘বিবেক’ অভিহিত করে বলেন, আত্মজাগরণ ও আত্মঅনুসন্ধানের মাধ্যমে তিনি তার সাহিত্যে যা বলেছেন নিজের জীবন চর্চায় তা বাস্তবায়ন করার পথ দেখিয়ে গেছেন। নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে তিনি সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও মানবের সম্মিলিত জীবনে পরিণত করেছেন। নারীদের জন্য চ্যালেঞ্জিং যে সব পেশা, যেমন শান্তি মিশনে, সাংবাদিকতায়, ক্রীড়াঙ্গণে এখন নারীরা পুরুষের সাথে সমান তালে এগিয়ে এসেছে- এই অগ্রগতির আলোকিত পরিসরে সুফিয়া কামাল বাংলাদেশের বাতিঘরের মত।
তিনি বলেন, সুফিয়া কামালের রচনার মধ্যে যে আলোকদায়ী বক্তব্য তা ব্যাপক বিশ্লেষণের দাবি রাখে। সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে নারীর অবদানকে দৃশ্যমান করার জন্যে ইতিহাসকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। তিনি নারীর অবদানকে যথাযথ মূল্যায়নের জন্যে প্রয়োজনীয় গবেষণার উদ্যোগ নিতে দেশের বুদ্ধিজীবী মহলের প্রতি আহ্বান জানান।
মালেকা বানু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ একটি মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছিল তার জীবনব্যাপী সংগ্রামের প্রধান লক্ষ্য। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, অব্যাহত নারী নির্যাতন, নারীর শ্রমশোষণ ও পাচারের মাধ্যমে নারীকে যেভাবে পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে, এ সময়ে সুফিয়া কামালের রচনাবলী, জীবনবীক্ষা ও আদর্শ আমাদের আলোর দিশা দেখাতে পারে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কবির প্রিয় সঙ্গীতে কবিকে স্মরণ করেন শিল্পী ইফ্ফাত আরা দেওয়ান ও বুলবুল ইসলাম।
আপডেট: বাংলাদেশ সময় ০৪:৩৩ অপরাহ্ণ, ২০ জুন ২০১৫, শনিবার
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম-এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur